Advertisement
০২ মে ২০২৪

পড়ে টাকা, ঠিকাদারের অভাবে থমকে বহু কাজ

রাস্তা তৈরির কাজ হোক বা প্রশাসনিক ভবন তৈরি, বারবার দরপত্র হেঁকেও উপযুক্ত ঠিকাদারের খোঁজ পাচ্ছে না পূর্ত দফতর। তাদের দাবি, কোনও ঠিকাদার সংস্থাই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সেভাবে যোগ দিচ্ছে না, ফলে কোটি কোটি টাকার সরকারি কাজ আটকে রয়েছে। তবে ঠিকাদারদের পাল্টা যুক্তি, সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাজারদরের তুলনায় অনেকটাই কম। লোকসানের আশঙ্কায় সরকারি কাজে ভিড়ছেন না তাঁরা।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০০:২৮
Share: Save:

রাস্তা তৈরির কাজ হোক বা প্রশাসনিক ভবন তৈরি, বারবার দরপত্র হেঁকেও উপযুক্ত ঠিকাদারের খোঁজ পাচ্ছে না পূর্ত দফতর। তাদের দাবি, কোনও ঠিকাদার সংস্থাই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সেভাবে যোগ দিচ্ছে না, ফলে কোটি কোটি টাকার সরকারি কাজ আটকে রয়েছে। তবে ঠিকাদারদের পাল্টা যুক্তি, সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাজারদরের তুলনায় অনেকটাই কম। লোকসানের আশঙ্কায় সরকারি কাজে ভিড়ছেন না তাঁরা।

কাটোয়া মহকুমাশাসক দফতরের ভবন শতাধিক বছরের পুরনো। মহকুমাশাসকের ঘরের সামনেই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। দফতরে আসা সাধারণ মানুষ থেকে আধিকারিক সবারই বরাবরের অভিযোগ, জায়গা নেই। এছাড়া শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ভাড়া বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরকারি দফতরগুলিকে এক ছাদের তলায় আনতে প্রশাসনিক ভবন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ২০০৭ সালে সেই মতো ৪৫ লক্ষ টাকা খরচ করে এক তলা তৈরি হয়। তবে তারপরেই টাকার অভাবে থমকে যায় ওই চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ। ততদিনে আগাছা জন্মে গিয়েছে একতলার ছাদে। ছাদ চুঁইয়ে জলও গড়াতে শুরু করেছে। বর্ধমানের জেলাশাসক থাকাকালীন ওঙ্কার সিংহ মিনা কাটোয়াতে প্রশাসনিক ভবনের বাকি অংশ শেষ করার জন্য ৩ কোটি ১০ লক্ষ টাকা অনুমোদনও করেন। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর অগস্ট মাসে ওই খাতে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথম দরপত্র ডাকে পূর্ত দফতর। মে মাসে ফের দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু দু’বারই কোনও ঠিকাদার সংস্থা দরপত্রে যোগ দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি বলে পূর্ত দফতরের দাবি। জেলার আর এক প্রান্ত আসানসোলেও ইউথ হস্টেল তৈরির জন্য বছর দুয়েক আগে রাজ্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু জি টি রোডের ধারে আট তলা ওই হস্টেল তৈরির জন্য বছর খানেক ধরে বারবার দরপত্র ডাকা হলেও ঠিকাদার খুঁজে পাচ্ছেন না পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা। একই ভাবে বর্ধমানের বনপাশ গ্রামের সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য সাড়ে সাত কোটি টাকা পড়ে থাকলেও ঠিকাদারের অভাবে কাজ করতে পারছে না পূর্ত দফতর। বর্ধমানের কর্জনা মোড়ের কাছেও রাস্তা চওড়া করার জন্যও ২৭ কোটি টাকা ঠিকাদারের অভাবে পড়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

পূর্ত দফতরের (রাস্তা) সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (পশ্চিমাঞ্চল ১) সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় অনেকগুলি রাস্তা সংস্কার করার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারেরা সাড়া দিচ্ছেন না। আর দরপত্রতে যারা সাড়া দিচ্ছেন, সেই সব ঠিকাদারেরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকায়, আমরা তাঁদের দরপত্র গ্রহণ করতে পারছি না।”

ঠিকাদারদের অনেকেই অবশ্য নির্মাণ সামগ্রীর চড়া বাজারদরকে তাঁদের অনাগ্রহের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। ঠিকাদারদের একাংশের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, আগে সরাসরি দরপত্র ডেকে কাজ হত। ঠিকাদারের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দরপত্রে যোগ দিতেন। কিন্তু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ঠিকাদারদের মৌরসিপাট্টা ভাঙার উদ্যোগ নেয়। ফলে যে কেউ এখন দরপত্রে ভাগ নিতে পারে। তার উপর ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু হওয়ায় দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া যায়। ঠিকাদারদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় ঝুঁকি অনেক বেড়ে গিয়েছে। কারা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সামিল হচ্ছেন, কারাই বা বরাত পাচ্ছেন কোনওটাই আগাম জানা যাচ্ছে না। ফলে সোকসানের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। জেলার মন্ত্রীরা অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তাঁরা মেনে নিয়েছেন, নির্মাণ সামগ্রীর যে দাম এত দিন দেওয়া হত, তার অনেকটাই সাত বছর আগে তৈরি পুরনো তালিকার ভিত্তিতে। বর্তমান বাজারদরের তার তুলনায় অনেকটাই বেশি। জেলার এক মন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর দামের তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই তালিকা প্রকাশ হবে। তখন ফের টেন্ডার ডাকা হলে ঠিকাদারেরা তাতে যোগ দেবেন বলেই আমাদের ধারণা।” পূর্ত দফতরের কর্তাদের অবশ্য ধারণা, গত এক-দেড় বছরে বড় বড় ঠিকাদার সংস্থার হাতে প্রচুর কাজ থাকায়, তারা দরপত্র দিচ্ছে না। আবার অনেকই নির্মান সামগ্রীর দামের নতুন তালিকা প্রকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। এছাড়া নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে সব ঠিকাদারগোষ্ঠী অভ্যস্ত নয় বলে সমস্যা আরও বেড়েছে বলে পূর্ত আধিকারিকদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE