Advertisement
E-Paper

পড়ানো থেকে বই কেনা, দুঃস্থদের পাশে ২২ জন

স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল এক দুর্ঘটনায়। সব সময়ের সঙ্গী হয়েছিল হতাশা। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হতে দেননি রূপনারায়ণপুরের শুভদীপ সেন। হতাশা থেকে মুক্তি পেতে নিজের মতো করে রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন তিনি। সঙ্গী করেছেন বেশ কয়েক জন বন্ধুকেও। দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার জিনিসপত্র থেকে পোশাক-আশাক জোগাড় করে দেওয়া, তাদের পড়ানো, এমনকী প্রয়োজনে সাধ্য মতো খাবারের ব্যবস্থাসংগঠন গড়ে সব কিছুই করছেন রূপনারায়ণপুরের ২২ জন।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০২:৫০
চলছে পড়াশোনা। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে পড়াশোনা। —নিজস্ব চিত্র।

স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল এক দুর্ঘটনায়। সব সময়ের সঙ্গী হয়েছিল হতাশা। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হতে দেননি রূপনারায়ণপুরের শুভদীপ সেন। হতাশা থেকে মুক্তি পেতে নিজের মতো করে রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন তিনি। সঙ্গী করেছেন বেশ কয়েক জন বন্ধুকেও।

দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার জিনিসপত্র থেকে পোশাক-আশাক জোগাড় করে দেওয়া, তাদের পড়ানো, এমনকী প্রয়োজনে সাধ্য মতো খাবারের ব্যবস্থাসংগঠন গড়ে সব কিছুই করছেন রূপনারায়ণপুরের ২২ জন। শুরুতে চেয়েচিন্তে, পরে নিজেদের জমানো রোজগার থেকেই এ সব করছেন তাঁরা। শুরুটা হয়েছিল শুভদীপের হাত ধরেই।

কলকাতায় বেহালার সাউথ সুবার্বান দলে ক্রিকেট খেলতেন শুভদীপ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট অ্যাকাডেমির এই প্রাক্তনী জানান, ২০০৬ সালে মাঠে যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায় তাঁর বাঁ হাত। প্রাণে বেঁচে গেলেও ইতি হয়ে যায় ক্রিকেট কেরিয়ারে। ফিরে আসেন রূপনারায়ণপুরের বাড়িতে। হতাশা থেকে মুক্তি পেতে অল্প পুঁজি নিয়ে ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতেও মন বসেনি। শুভদীপবাবু বলেন, “শেষে দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করার ভাবনা মাথায় এল। মনে হল, ওদের সাহায্য করতে পারলে হয়তো হতাশামুক্ত হব।”

সেই মতো কাজ শুরু। খেলোয়াড় হিসেবে এলাকায় শুভদীপের জনপ্রিয়তা ছিলই। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এই কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সব্যসাচী মাজি, কৌশিক মণ্ডল, সায়ন্তনী কুণ্ডুরা। পরপর যুক্ত হন তাঁদের আরও কয়েক জন পরিচিত। পেশায় কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ বা আবার পঞ্চায়েতের কর্মী। সেটা ২০১০ সাল। সংগঠনের নাম দেওয়া হয় ‘পিস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’। এথোড়া স্কুলের শিক্ষক কৌশিক বলেন, “প্রথম দিকে আমরা এলাকাবাসীর কাছে পুরনো বই ও জিনিসপত্র জোগাড় করে দুঃস্থ পড়ুয়াদের বিলিয়েছি। এখন অবশ্য আর তার দরকার হয় না। নিজেদের রোজগার থেকে বাঁচাতে শুরু করি সবাই। এখন আমাদের সংগঠন সাবলম্বী।”

রূপনারায়ণপুরের সামডি রোডে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খুদেদের পড়ানোর ব্যবস্থাও করেছেন তাঁরা। সেটিই আবার তাঁদের অফিসঘর। স্থানীয় মাধ্যমিক স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষিকা সায়ন্তনী বলেন, “সপ্তাহে চার দিন স্কুল শেষে এখানে পড়াই। এই সব কচিকাঁচাদের পড়াশোনার ইচ্ছে আছে, কিন্তু সাধ্য নেই। তাই আমরা চেষ্টা করছি, যতটা ওদের পাশে দাঁড়ানো যায়।” সালানপুরের বাসিন্দা, অস্থায়ী পঞ্চায়েত কর্মী সব্যসাচী মাজি জানান, ব্লকের নানা স্কুল থেকে বাছাই করা ৩০ জন দুঃস্থ পড়ুয়ার মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছে তাঁদের সংগঠন। যে কোনও দিন ওই অফিসঘরে গেলে দেখা যায়, সকাল-সন্ধ্যা ঘরে বসে পড়াশোনা করছে নানা বয়সের ছেলেমেয়ে। অনেকে ভিড় জমায় পড়াশোনার নানা জিনিসপত্র নিতেও।

অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে ছেলে জয়ের পড়াশোনা চালাতে পারছিলেন না মালতী রায়। স্থানীয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রের যাবতীয় খরচের ভার নিয়েছে শুভদীপবাবুদের সংগঠন। মালতীদেবী বলেন, “সংসার চালাতেই হিমসিম। পড়ানোর খরচ পাব কোথায়? ওঁদের সাহায্যে হাতে চাঁদ পেয়েছি।” একই কথা বলছেন রূপনারায়ণপুরের জোরবাড়ির দিনমজুর গণেশ কর্মকার। তাঁর দুই মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ঊমা ও পঞ্চম শ্রেণির রুমা বলে, “সব বিষয়ের টিউশন পাই এখানে। খুব সুবিধা হয়।”

sushanta banik asansol education buying books poor people
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy