Advertisement
E-Paper

পড়ুয়াদের সামনেই জুতোপেটা প্রধান শিক্ষককে

ভর্তির আবেদনপত্রে ভুল সংশোধন করে আনতে বলায় প্রধান শিক্ষককে জুতোপেটা করলেন কিছু অভিভাবক। আবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় পাশ করানোর দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের এক স্কুলে ভাঙচুর চালাল ছাত্রেরা। শুক্রবার দুপুরে কুলটির মিঠানি হাইস্কুলে পড়ুয়াদের সামনেই বেধড়ক মারধর করা হয় প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পালকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪০
কুলটির মিঠানি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পালকে মারধর অভিভাবকদের।  —নিজস্ব চিত্র

কুলটির মিঠানি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পালকে মারধর অভিভাবকদের। —নিজস্ব চিত্র

ভর্তির আবেদনপত্রে ভুল সংশোধন করে আনতে বলায় প্রধান শিক্ষককে জুতোপেটা করলেন কিছু অভিভাবক। আবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় পাশ করানোর দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের এক স্কুলে ভাঙচুর চালাল ছাত্রেরা।

শুক্রবার দুপুরে কুলটির মিঠানি হাইস্কুলে পড়ুয়াদের সামনেই বেধড়ক মারধর করা হয় প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন পালকে। কিছু অভিভাবক তাঁকে টেনে স্কুলবাড়ির বাইরে নিয়ে যান। বেশ কিছু মহিলা তাঁকে ঘিরে ধরে চড় মারতে থাকেন, জুতোপেটাও করা হয়। তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। গুরুতর আহত না হলেও পরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। রাত পর্যন্ত তুলসী বাউরি, সন্ধ্যা বাউরি ও বিকাশ বাউরি নামে তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন।

বর্ধমানের ওই স্কুল সূত্রে জানা যায়, এ দিন সেখানে পঞ্চম শ্রেণির ভর্তি চলছিল। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বয়স ঠিক মতো উল্লেখ করেনি। অনেকের নামের বানানে ভুল রয়েছে। তা থেকে গেলে পরে ছাত্রছাত্রীরা সমস্যায় পড়তে পারে। তাই আবেদনপত্রে নামের বানান ঠিক করা ও বয়সের প্রমাণপত্র আনার পরামর্শ দিই।” শিক্ষকের অভিযোগ, এক দল অভিভাবক দাবি করেন, তাঁরা সংশোধন করতে পারবেন না। যা করার স্কুল কর্তৃপক্ষকেই করে নিতে হবে। এত আবেদনপত্র সংশোধন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানাতেই ওই অভিভাবকেরা বৃন্দাবনবাবুকে অফিসঘর থেকে টেনে বের করে মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ।

মিনিট দশেক নিগ্রহ চললেও স্কুলের কোনও শিক্ষক-কর্মী বা স্থানীয় বাসিন্দারা প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে আসেননি। তাঁদের দাবি, এক দল অভিভাবকদের রুদ্রমূর্তি দেখেই তাঁরা এগোনোর সাহস পাননি। নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ পৌঁছলে অভিভাবকেরা পালিয়ে যান। বৃন্দাবনবাবু ওই গ্রামেরই শান্তনু পাত্র, রাসবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় ও মন্টু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে তিন তৃণমূল কর্মী -সহ বেশ কিছু অভিভাবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের দাবি, তিন জনই বেপাত্তা। তবে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাসবিহারীবাবুর দাবি, “গোলমাল শুনে আমি সমস্যা মেটাতে গিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষককে নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচিয়েছি।” শান্তনুবাবুর দাবি, তিনি ঘটনার অনেক পরে স্কুলে গিয়েছেন। কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনায় জড়িতেরা যে দলেরই হোক না কেন, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।”

ফের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় অনেকেই সরব হয়েছেন। এবিটিএ-র বর্ধমান জেলা সভাপতি অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “ধৈর্য হারানোর এই প্রবণতা এ বার বন্ধ হোক।” স্যাগেসিয়াস টিচার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সহ-সভাপতি অসিত উপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “পড়ুয়াদের সামনে যে সব অভিভাবক শিক্ষককে মারধর করলেন, তাঁরা সন্তানদের কী শিক্ষা দেবেন?” বর্ধমানের সহকারী জেলা স্কুল পরিদর্শক মাধব সোরেন বলেন, “ভর্তির আবেদনে বয়সের শংসাপত্র দেওয়া আবশ্যক নয়। তবে প্রধান শিক্ষকের সন্দেহ হলে চাইতে পারেন। কী ঘটেছে, খোঁজ নেব।”

মগরাহাটের অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল হাইস্কুলে যে ছাত্রেরা এ দিন ভাঙচুর চালায়, তারা টেস্ট পরীক্ষায় কেউ অঙ্কে শূন্য পেয়েছে, কেউ বিজ্ঞানে। ওই ছাত্রদের দাবি, যে ভাবে হোক তাদের পাশ করাতেই হবে। প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষকদের লক্ষ করে গালিগালাজও করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বেশ কিছু ছাত্র কয়েক জন বহিরাগতকে নিয়ে স্কুলের লোহার গেট ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। প্রধান শিক্ষকের ঘরের জানালা লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। দেওয়ালে ঝোলানো নোটিস বোর্ডও ভেঙে ফেলা হয়। তবে স্কুলের তরফে কারও নামে অভিযোগ করা হয়নি।

kulti principal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy