ফের এক ঠিকা শ্রমিক জখম হলেন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। মঙ্গলবার কোকওভেন প্ল্যান্টের ৬ নম্বর ব্যাটারিতে কাজ করার সময় প্রায় পনেরো ফুট উঁচু বেল্ট থেকে নীচে পড়ে যান সুখদেব ঠাকুর নামে এক শ্রমিক। দ্রুত তাঁকে ডিএসপি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিত্সকেরা জানান, আপাতত তিনি বিপদমুক্ত। তবে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ব্লাস্ট ফার্নেস থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে রবিবার রাতে দুই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ দিন ফের দুর্ঘটনার পরে সরব হন ঠিকাকর্মীদের একাংশ।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ৬ নম্বর ব্যাটারির বেল্টের উপরে রাখা একটি প্লেটে দাঁড়িয়ে সুখদেববাবু কাজ করছিলেন। হঠাত্ সেটি ভেঙে নীচে পড়ে যান তিনি। সহকর্মীরা ছুটে আসেন। তাঁকে উদ্ধার করে ডিএসপি হাসপাতালে পাঠানো হয়। উপরে কাজ করার সময় কোমরে বেল্ট বেঁধে বা নীচে জাল টাঙিয়ে রাখার মতো কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে দাবি করেছেন তাঁর সহকর্মীরা।
মাত্র দু’দিন আগেই রবিবার সন্ধ্যায় ডিএসপি-র ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস পরিষ্কার করতে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন সন্ন্যাসী গোপ (৩০) এবং শ্যামাপদ বাউড়ি (৩৪) নামে ওই দুই ঠিকা শ্রমিক। বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ তাঁরা ৩ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। একটি ব্লাস্ট ফার্নেস পরিস্কার করতে পৌনে এক ঘণ্টার বেশি লাগে না। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদও ওই দু’জন নীচে নেমে না আসায় সহকর্মীদের সন্দেহ হয়। এর পরেই ব্লাস্ট ফার্নেসের উপরে ‘কোল ডাস্ট ইনজেকশন ডিস্ট্রিবিউশন ইউনিট’-এর কাছে দুই ঠিকা শ্রমিকের অচেতন দেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তদন্ত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে ডিএসপি। সেই কমিটি ৫-৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। সেই রিপোর্ট এবং ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে, ঠিক কী কারণে দুই ঠিকাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর পিছনে কার গাফিলতি রয়েছে। এর পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে ডিএসপি সূত্রে জানানো হয়েছে।
আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “একের পর এক দুঘর্টনায় প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে ডিএসপি-তে শ্রমিক নিরাপত্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। দ্রুত কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।” কোকওভেন প্ল্যান্টের ১ থেকে ৬ নম্বর ব্যাটারির ‘হিটিং সেকশন’-এর ঠিকাকর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের গ্যাস মুখোশ দেওয়া হয় না। অথচ তাঁদের কাজে প্রতি মুহূর্তে বিপজ্জনক গ্যাস শরীরে ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক বৈঠকে তাঁরা যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা গ্যাস মুখোশ না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সবর হন। সেই কর্মীদের অভিযোগ, এর পরেই তাঁদের বেশ কয়েক জনকে হিটিং সেকশন থেকে সরিয়ে অন্য বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাকর্মী বলেন, “আরও ছ’মাসের কাজ ছিল। অথচ, আমাদের মতো অভিজ্ঞদের অকারণে সরিয়ে দেওয়া হল। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, তাই নতুনদের বিপদের সম্ভাবনা বেশি।”
ডিএসপি কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy