Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ব্যবস্থা নেই, অভিযোগ শিল্পাঞ্চল জুড়ে

কোথাও অন্যের জমিতে রাজনৈতিক দলের অফিস, কোথাও আবার নিয়ম না মেনে বহুতলশিল্পাঞ্চল জুড়ে এই ধরনের নানা বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠছে একের পর এক। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানিয়েও ফল হচ্ছে না বলে দাবি অভিযোগকারীদের। নানা পক্ষের উপরে দায় চাপিয়ে দায়িত্ব সারছে প্রশাসনের নানা পক্ষও। অন্ডালের উখড়ায় সম্প্রতি তিন তলা বাড়ি তৈরির কাজ করতে গিয়ে এক নির্মাণকর্মী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নীচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

জামুড়িয়ার বাড়ি।

জামুড়িয়ার বাড়ি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
আসানসোল শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০২
Share: Save:

কোথাও অন্যের জমিতে রাজনৈতিক দলের অফিস, কোথাও আবার নিয়ম না মেনে বহুতলশিল্পাঞ্চল জুড়ে এই ধরনের নানা বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠছে একের পর এক। অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জায়গায় জানিয়েও ফল হচ্ছে না বলে দাবি অভিযোগকারীদের। নানা পক্ষের উপরে দায় চাপিয়ে দায়িত্ব সারছে প্রশাসনের নানা পক্ষও।

অন্ডালের উখড়ায় সম্প্রতি তিন তলা বাড়ি তৈরির কাজ করতে গিয়ে এক নির্মাণকর্মী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নীচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। উখড়া পঞ্চায়েতের প্রধান আশিস কর্মকার জানান, বছর দেড়েক আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ লাগোয়া সব ক’টি পঞ্চায়েতকে নির্দেশিকা পাঠান, কোনও ভাবেই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ২১ ফুট ৪ ইঞ্চির (দোতলা) বেশি উঁচু নির্মাণের অনুমতি দিতে পারবে না। উখড়া আনন্দ মোড়ের এক বাসিন্দা তাঁর দোতলা বাড়িটি পঞ্চায়েতকে না জানিয়েই তিন তলা নির্মাণ করছিলেন। আশিসবাবুর দাবি, “এই অবৈধ নির্মাণের খবর পেয়ে আমি যে দিন ওই বাড়ির মালিককে চিঠি পাঠাই, সে দিনই এক নির্মাণকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে পরে জেনেছি।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, শাসকদলের মদতেই এ সব হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, উখড়ার বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে একটি তিন তলা বাড়ি তৈরি প্রায় শেষের দিকে। উখড়া রায়পাড়ায় তিন তলা বাড়ি গড়া কিছু দিন আগেই শেষ হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যেরা প্রতিবাদ করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু, কাজ বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্র অবশ্য দাবি করেন, “বেআইনি নির্মাণে মদত দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছে এই ধরনের নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।”

বার্নপুরে রাজনৈতিক কার্যালয়। এই সব নির্মাণ নিয়ে উঠেছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

রানিগঞ্জ পুরসভা এলাকার প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকাকে ধসপ্রবণ চিহ্নিত করেছে ডিরেক্টর জেনারেল অব মাইনস সেফটি (ডিজিএমএস)। বছর সাতেক আগে জেলাশাসক রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করে পুর কর্তৃপক্ষকে জানান, ধসপ্রবণ বলে চিহ্নিত এলাকায় কোনও নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। পুরপ্রধান অনুপ মিত্রের দাবি, “২০ জন বাসিন্দাকে নির্মাণকাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। কোনও ফল মেলেনি।”

বার্নপুর স্টেশনের লাগোয়া এলাকায় রয়েছে তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও টিএমসিপি-র কার্যালয়। সেল এই নির্মাণ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছিল আসানসোল আদালতে। হিরাপুর থানার পুলিশ জানায়, মামলা হওয়ার পরে তারা গত ১১ অক্টোবর তাদের রির্পোট কোর্টে জমা দিয়েছিল। সেখানে পুলিশ জানিয়ে দেয়, অবৈধ নির্মাণ মহকুমাশাসক ভাঙার অনুমতি দিতেই পারেন। কিন্তু এই নির্মাণ ভাঙার কাজ লোক নিয়োগ করে করাতে হবে অভিযোগকারী সংস্থাকেই। এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের পৌরহিত্যে পুলিশ অবৈধ নির্মাণ ভাঙার সময়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের দাবি, এর পরে আদালত আর কোনও নির্দেশ তাদের দেননি। নির্দেশ পেলে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানান পুলিশকর্তারা। বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) তৃণমূলের যুব নেতা তথা টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “অফিসটি ছ’বছরের পুরনো। যেহেতু বিষয়টি এখন বিচারাধীন তাই কোনও মন্তব্য করব না।” মহকুমাশাসক (আসানসোল) অমিতাভ দাস বলেন, “বিষয়টি আদালতের আওতায় রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।”

বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে জামুড়িয়াতেও। দামোদরপুর মৌজার বাসিন্দা সন্ধ্যারানি খাঁ আসানসোল আদালতে মামলা করেন, বিকাশ গড়াই নামে এলাকারই এক ব্যক্তি তাঁদের তিন কাঠা জমি ও একটি সরকারি কুয়ো দখল করে বাড়ি তৈরি করছেন। জামুড়িয়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাড়ির নকশা অনুমোদন করা হয়নি। নির্মাণ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দু’বার জামুড়িয়া থানাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পুর কর্তৃপক্ষের। পুরপ্রধান রাজশেখর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে পাওয়া যায়নি।” অভিযোগকারিণীর আইনজীবী সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়ও একই অভিযোগ করেন। যদিও অসহযোগিতার অভিযোগ মানতে চায়নি জামুড়িয়ার পুলিশ।

বিকাশবাবুর দাবি, তাঁরা তিন ভাই নিজেদের জমিতেই বাড়ি তৈরি করছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, “পুরসভা আমাদের দোতলা তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল। পরে তিন তলা নির্মাণের জন্য অনুমতি চেয়ে দু’বার চিঠি পাঠিয়েও পুর কর্তৃপক্ষের কোনও জবাব পাইনি। তবে নির্মাণ বন্ধ করতেও বলা হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে নথিপত্র ছাড়াই মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।” জামুড়িয়ার সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের দাবি, “বিকাশ এক সময় আমাদের দলে থাকলেও এখন তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর আশ্রয়ে রয়েছেন। তাই ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ।” তৃণমূলের জামুড়িয়া ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায় অবশ্য বলেন, “বিকাশবাবু সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই শিকার।”

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nilothpal roychoudhuri andal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE