Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাইরে ঘুরছে মায়ের খুনিরা, স্কুলে যায় না গোলাম

এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। আর সেই ‘ভয়ে’ প্রায় দু’মাস ধরে স্কুলে পা পড়েনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র গোলাম কিবরিয়ার। পাশের কলেজ ছেড়ে দূরে ভর্তি হয়েছেন তার দিদি নাহিদা সুলতানাও। সোমবার কেতুগ্রামের পাঁচুন্দিতে মহুলা গ্রামের নিহত সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য আসমিরা বিবির স্মরণসভায় এমনই অভিযোগ জানাল তাঁর ছেলেমেয়েরা। মায়ের খুনের প্রত্যক্ষদর্শী তারা দু’জনেই।

বৃন্দা কারাতের সঙ্গে নিহত আসমিরা বিবির মেয়ে ও স্বামী। —নিজস্ব চিত্র।

বৃন্দা কারাতের সঙ্গে নিহত আসমিরা বিবির মেয়ে ও স্বামী। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। আর সেই ‘ভয়ে’ প্রায় দু’মাস ধরে স্কুলে পা পড়েনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র গোলাম কিবরিয়ার। পাশের কলেজ ছেড়ে দূরে ভর্তি হয়েছেন তার দিদি নাহিদা সুলতানাও। সোমবার কেতুগ্রামের পাঁচুন্দিতে মহুলা গ্রামের নিহত সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য আসমিরা বিবির স্মরণসভায় এমনই অভিযোগ জানাল তাঁর ছেলেমেয়েরা। মায়ের খুনের প্রত্যক্ষদর্শী তারা দু’জনেই।

বৃষ্টির মধ্যেও এ দিন পাঁচুন্দি বাসস্টপের কাছে সিপিএমের এই সভায় চোখে পড়ার মত লোক হয়েছিল। সভায় ছিলেন সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাতও। তিনিও অভিযোগ করেন, আসমিরা বিবির হত্যাকারীরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর নিহতের ছেলে স্কুলে যেতে পারছে না। তবে এ অভিযোগ শুধু বৃন্দা কারাতের নয়, এর আগে মহুলা গ্রামে নিহতের বাড়ি ঘুরে গিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র, কামদুনি গ্রামের শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, সুটিয়া গ্রামের প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায় বিশ্বাস, বালির নিহত তৃণমূল নেতা তপন দত্তর স্ত্রী প্রতিমা দত্তরাও একই অভিযোগ করেন। জুনের গোড়ায় গ্রামে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কাছেও নিহতের ছেলেমেয়েরা একই অভিযোগ করেছিলেন। অম্বিকেশবাবুরা ওই অভিযোগ শুনে কেতুগ্রাম থানায় গিয়ে বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরীর কাছে লিখিত ভাবে জানান। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি যে বদলায়নি আসমিরা বিবির মেয়ে নাহিদার কথাতেই তা স্পষ্ট। নাহিদা এ দিন বৃন্দা কারাতের কাছে অভিযোগ করেন, “মায়ের খুনিরা আমাদের পাশের আনখোনা গ্রামে রয়েছে। আনখোনা বাসস্টপে তাঁরা বসে থাকেন। প্রায়ই সময় আমাদের গ্রামের রাস্তাতেও তাঁদের দেখা যায়। খুনিদের আনাগোনার জন্য ভাই ভয়ে স্কুলে যেতে পারে না।”

গত ২১ মে রাতে ওই গ্রামের সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা আসমিরা বিবি বাড়ির ভিতরেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন। জখম হন নিহতের ছয় আত্মীয়ও। পরে আহত সিরাজুল ইসলাম ১০ জনের নামে কেতুগ্রাম থানায় খুনের অভিযোগ করেন। ঘটনার পরেই পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। এখন তারা জেল হেফাজতে রয়েছেন। নিহতের পরিজনের অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরা কয়েকদিন গ্রামছাড়া থাকার পরে ফের গ্রামে ঢুকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। নিহতের পড়শি বৃদ্ধা কলিজা বিবি, ফরিদা বিবিরা বলেন, “কিছুদিন আগেও ওই দুষ্কৃতীরা অস্ত্র নিয়ে পাড়ায় ঢুকে হুমকি দিয়ে গিয়েছে।” আলিয়া বেগম নামে এক অভিভাবিকা বলেন, “পড়ুয়ারা খুব ভয়ে আছে। দিনমজুরি করে পড়াশোনা করাচ্ছি। এখন তো পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।”

কিন্তু এত ভয় পাওয়ার কারণ কী? “আনখোনা যাওয়ার রাস্তায় গাছতলায় অভিযুক্তেরা অস্ত্র নিয়ে বসে থাকছে, বাড়ির সামনে থেকে পুলিশ ক্যাম্প উঠে যাওয়ার পরে ওই দুষ্কৃতীরা গ্রামে দাপাদাপি করছে। এর পরেও ভয় করবে না?”--বললেন আসমিরা বিবির স্বামী এনায়েৎ করিম। সিপিএমের সভায় আসা মহুলা গ্রামের বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ফের দুষ্কৃতীদের আনখোনা বাসস্টপে দেখা যাচ্ছে।

এ দিন বৃন্দা কারাত বলেন, “সরকারে থাকার সুযোগ নিয়ে যাঁরা খুন করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁরা ভাবছেন আইন কিছুই করতে পারবে না। আমরা বলছি, আজ কিংবা কাল শাস্তি পেতেই হবে।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক দাবি করেন, “আমরা বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপারের কাছে নির্দিষ্ট ভাবে আসমিরা বিবির ঘটনা তুলে অভিযোগ করেছিলাম যে দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাতেও কোনও লাভ হয়নি।” জেলা সিপিএমের সম্পাদক অমল হালদারও এ দিন বলেন, “দুষ্কৃতীদের পুলিশ ধরছে না। তবে এর জবাব জণগন দেবে।” পাশাপাশি দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে বিজেপিতে না যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

তবে বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শনিবারই কেতুগ্রাম থানার পুলিশের একটি দল নিহতের বাড়ি গিয়েছিল। তাঁরা যে স্কুলে যেতে পারছেন না, সে কথা আমাদের জানায়নি। আমাদের ধারণা, ওরা নিশ্চয়ই স্কুলে যাচ্ছে। তবে এলাকায় আতঙ্ক রয়েছে। আর দু্ষ্কৃতীরা পলাতক। ” তৃণমূলের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “আমরাও চাই দোষীদের শাস্তি হোক। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। আর কে স্কুল যেতে পারছে না, আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিষয়টা দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE