Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বামেদের আশঙ্কা উড়িয়ে অবাধে ভোট খণ্ডঘোষে

সকালে প্রায় দেড়শো বুথে এজেন্ট দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই সেই এজেন্টদের মারধর, বুথ দখলের অভিযোগ তোলে সিপিএম। তবে দিনের শেষে ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। বিষ্ণুপুর লোকসভার খণ্ডঘোষ বিধানসভায়, লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার দিনটা মোটামুটি এভাবেই কাটল। শাসক দলের বিরুদ্ধে পাশের বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের রায়না বিধানসভার মতো ব্যপক বুখ দখল ও ছাপ্পার অভিযোগ সে ভাবে মিলল না। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা খণ্ডঘোষ জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মহফুজ রহমানেরও দাবি, “আমাদের এই বিধানসভায় রায়নার চেয়ে অন্তত ভাল ভোট হয়েছে।”

বাঁ দিক থেকে, গলসিতে ভোটার পরিচয়পত্র দেখে বুথে ঢোকানো হচ্ছে। সগড়াইয়ে লাইন ভোটারদের। ছবি: উদিত সিংহ।

বাঁ দিক থেকে, গলসিতে ভোটার পরিচয়পত্র দেখে বুথে ঢোকানো হচ্ছে। সগড়াইয়ে লাইন ভোটারদের। ছবি: উদিত সিংহ।

রানা সেনগুপ্ত
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

সকালে প্রায় দেড়শো বুথে এজেন্ট দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই সেই এজেন্টদের মারধর, বুথ দখলের অভিযোগ তোলে সিপিএম। তবে দিনের শেষে ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ।

বিষ্ণুপুর লোকসভার খণ্ডঘোষ বিধানসভায়, লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার দিনটা মোটামুটি এভাবেই কাটল। শাসক দলের বিরুদ্ধে পাশের বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের রায়না বিধানসভার মতো ব্যপক বুখ দখল ও ছাপ্পার অভিযোগ সে ভাবে মিলল না। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা খণ্ডঘোষ জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মহফুজ রহমানেরও দাবি, “আমাদের এই বিধানসভায় রায়নার চেয়ে অন্তত ভাল ভোট হয়েছে।”

এ দিন খণ্ডঘোষের অনেক জায়গাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান চোখে পড়ল। কেউ বুথের বাইরে, কেউ বা বুথের সামনে। সিপিএমের এজেন্টও ছিল বহু বুথে। তবে কোন দলের এজেন্ট প্রশ্ন করা হলে তাঁদের বেশিরভাগই বললেন, আমরা সুস্মিতা বাউড়ির এজেন্ট। সুস্মিতা বাউড়িই বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী।

সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বর্ধমানের দামোদরের কৃষক সেতু পার হতেই দেখা গেল রায়নার তৃণমূলের নেতা শেখ ইসমাইল শান্তু প্রায় ছ’টি গাড়ির কনভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। গাড়ি পিছু ভেতরে রয়েছেন প্রায় ১২-১৪ জন। এরা কারা? কোথায় চলেছে? ততক্ষণে মোবাইলে শান্তু বলছেন, “সে কি? এখনও ওই বুথটা থেকে হার্মাদদের এজেন্টটাকে ওঠাতে পারিসনি? তোদের নিয়ে আর পারা গেল না! যাচ্ছি, আমি এখনই যাচ্ছি।” দেখা হতে বললেন, “দাদা, একটু কামালপুর থেকে ঘুরে আসি। ওখানে গোলমাল চলছে।” আপনি তো রায়নার তৃণমূলের নেতা। খণ্ডঘোষে কেন? শান্তু বললেন, “আমাদের কী আর রায়না-খণ্ডঘোষ দেখলে চলে? তাছাড়া এখানের ভৌগলিক অবস্থান এমন যে কারও বাড়ি রায়নায় পড়েছে তো, পাকশাল খণ্ডঘোষে। গোয়াল খণ্ডঘোষে তো খামারটা রায়নায়! এত বাছাবাছি করতে পারি না।”

সিপিএমের অবশ্য অভিযোগ, রায়নার ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা খণ্ডঘোষের উদয়কৃষ্ণপুরের বুথে বুথে দাপাদাপি করেছেন। সিপিএমের প্রশ্ন, উনি তো রায়নার ভোটার, খণ্ডঘোষে কী করে এলেন? প্রশাসন দেখেও দেখছে না কেন? অভিযোগের তির যাঁর দিকে সেই বামদেব মণ্ডল অবশ্য ফোনে বললেন, “না, না। আমি তো খন্ডঘোষে আজ ঢুকিনি। আমাকে প্রশাসন থেকে বারণ করে দেওয়া হয়েছিল খণ্ডঘোষে ঢুকতে। আমি সেটা শুনেছি। হ্যাঁ, তবে মঙ্গলবার খণ্ডঘোষের কয়েকটা এলাকায় গিয়েছিলাম বটে।”

বুধবার বড় গোলমাল বলতে একটাই। খণ্ডঘোষের উলে গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। আহত হয়েছেন দু’পক্ষের প্রায় কুড়ি জন। সিপিএমের দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

সিপিএমের খণ্ডঘোষ জোনাল কমিটির সম্পাদক দেশবন্ধু হাজরা জানান, ২৭১টি বুথের মধ্যে প্রায় দেড়শো বুথে সকালে এজেন্ট বসাতে পেরেছিলেন তাঁরা। তবে বেলা বাড়তে প্রায় তিরিশটি বুথ থেকে ওই এজেন্টদের মেরেধরে তুলে দেওয়া হয় বলেও তাঁর অভিযোগ। দেশবন্ধুবাবুর দাবি, মানুষ প্রতিরোধের ঢঙে প্রায় সমস্ত বুথে ভোট দিতে গিয়েছেন।

এ দিন উখরিদ হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালনা এফপি বিদ্যালয়, বোঁয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে একাধিক বুথ রয়েছে এমন চত্বরে দেখা গিয়েছে, সিপিএমের কোনও এজেন্ট না থাকলেও তৃণমূলের দু-তিন জন করে এজেন্ট রয়েছেন। একই দলের একাধিক এজেন্টকে বুথের ভেতর বসতে দেওয়া হয়েছে কেন? কিছু প্রিসাইডিং অফিসারেরা বলেন, “বারবার বারণ করা হচ্ছে। ওঁরা বলছেন, এতে ওঁদের সুবিধা হয়।” আরও অনেকে বললেন, “কী বলব? ওরা কি আর আমাদের কথা শুনছে?” কিন্তু নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে বুথের ভেতর ঢোকা অবাঞ্ছিত লোকেদের গ্রেফতার করার পর্যন্ত ক্ষমতা রয়েছে আপনাদের। অন্তত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের তো অতিরিক্ত অজেন্ট সরিয়ে দিতে বলতেই পারেন। প্রশ্ন শুনে মুখে তালা প্রিসাইডিং অফিসারদের।

তবে বর্ধমান গ্রামীণ তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “খণ্ডঘোষে যা সন্ত্রাস করার তা সিপিএমই করেছে। ওরা কয়েকটি বুথ জ্যাম, কোথাও বুথের ভেতরে ঢুকে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিছু বুথে প্রিসাইডিং অফিসারেরা নির্লজ্জ ভাবে সিপিএমের হয়ে কাজ করেছেন। সিপিএমের সন্ত্রাসেই আমাদের এক মহিলা-সহ সাত কর্মীর মাথা ফেটেছে।”

খণ্ডঘোষ বিধানসভার ভোটের দায়িত্বে থাকা মহকুমাশাসক অরুনকুমার রায় অবশ্য বলেন, “অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়ায় বুথের নিরাপত্তা বাড়ানো গিয়েছে। ভোট অবাধ ও শান্তিতেই হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta khandaghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE