কুলটির সভায় মমতা ও মিঠুন। শুক্রবার। ছবি: শৈলেন সরকার।
গত কয়েক দিন ধরেই নরেন্দ্র মোদীর দলকে নিশানা করছিলেন তিনি। শুক্রবার আসানসোলে গিয়ে বিজেপি-কে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এমন ভাবে আক্রমণ করলেন, যেন পশ্চিম বর্ধমানের এই খনি এলাকায় সিপিএম নয়, বিজেপি-ই তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। মোদীর নাম না করেও কুলটিতে মমতা বললেন, “দাঙ্গা যারা করে তারা প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না।” সন্ধ্যায় রানিগঞ্জে বললেন, “বাংলায় কোনও ভাবেই দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করতে দেবেন না।”
কুলটির জনসভায় মিঠুন চক্রবর্তী। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের দাপুটে নেতা বংশগোপাল চৌধুরী আসানসোলের বিদায়ী সাংসদ। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচন ইস্তক বামেদের পায়ের তলায় মাটি অনেকটাই সরে গিয়েছে। খনি এলাকা হওয়ায় দলের শ্রমিক নেত্রী দোলা সেনকে এই আসনে দাঁড় করিয়েছেন মমতা। কিন্তু তারকা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে দাঁড় করিয়ে প্রচারের আলো অনেকটাই টেনে নিয়েছে বিজেপি। কিছুটা হলেও চাপে পড়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।
এই পরিস্থিতিতেই আর এক তারকা, সদ্য নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে কুলটি, সালানপুর ও রানিগঞ্জে পরপর তিনটি সভায় পাল্টা আক্রমণে গেলেন মমতা। টিপ্পনী কাটলেন, “বাবুল সুপ্রিয় নিজেই গত কুড়ি বছর ভোট দেয়নি। সে এসেছে ভোট চাইতে! যে নিজে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সে কী করে মানুষের ভাল করবে?”
গুজরাতের উন্নয়নের প্রচারকেও কার্যত চ্যালেঞ্জ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দাবি করলেন, “গুজরাতের রেভিনিউ আর্নিং ১৫ শতাংশ, আমাদের ৩১। গুজরাতে শিশুমৃত্যুর হার ৪১ শতাংশ, আমাদের মাত্র ৩২ শতাংশ।’’ দাবি করলেন, “গুজরাত কেন ভারতের মডেল হবে, আমরাই ভারতের মডেল।’’ বারবার টানলেন দাঙ্গার প্রসঙ্গও। রানিগঞ্জে গিয়ে বললেন, “এখন যা অবস্থা, কেউ হিন্দুর নেতা হয়ে রয়েছে, কেউ মুসলমানের। দাঙ্গা হিন্দু-মুসলমান করে না। দাঙ্গা করে কিছু বদমাশ লোক। আমরা এমন নেতা চাই, যে সব ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের নেতা হয়েছে।” বললেন, “কংগ্রেস দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। আর এক জন ভোটে দাঁড়িয়েই ভাবছে, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলাম।”
শুধু মোদীকে আক্রমণ করাই নয়। সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও দাঙ্গা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব, এমনকী কংগ্রেসকেও জড়িয়ে দিলেন মমতা। দাবি করলেন, “বাবরি মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনার কথা তিন জন জানতেন। এক জন কংগ্রেসের নেতা। বাকি দু’জন বিজেপি-র। ওই সময়ে অজিত পাঁজা ছিলেন কেন্দ্রের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী। আমি অজিতদাকে জিগ্যেস করেছিলাম, আপনি তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রকে কিছুই জানাননি? উত্তরে অজিতদা বলেছিলেন, তিনি পুরো বিষয়টি রেকর্ড করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে (তখন পি ভি নরসিংহ রাও) দেখিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, ওই দিকটা তোমায় দেখতে হবে না।” যোগ করলেন, “বাবরি মসজিদ যখন ধ্বংস হয়, আমি সংসদে প্রতিবাদ করেছিলাম।’’
চড়া গরমের দুপুরে জনসভা হলেও ভিড় যথারীতি উপচে পড়েছে। কুলটিতে বাঁশের ব্যারিকেড খুলে দিতে হয়েছে পুলিশকে। এক সময়ে মঞ্চ থেকে নেমে এসে জনতাকে শান্ত করতে হয়েছে নেতাদের। গাড়ি থেকে নেমে যখন নিচু গলায় কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন মমতা, তত ক্ষণে নীল-সাদা ডোরা শার্ট আর কালো ট্রাউজার্সে হাত নাড়তে-নাড়তে মঞ্চে উঠে গিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। একেবারে ফিল্মি কায়দায় বলে উঠেছেন, ‘নমস্কার, ক্যায়সে হ্যায়? বাংলায় বলব, না হিন্দিতে? আচ্ছা ঠিক আছে, দোনো ভাষামেই বোলেঙ্গে।’’
এই হাল্কা চাল কিন্তু দলনেত্রীর গলায় ছিল না। বরং মাইক্রোফোন হাতে দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় সামলানোর নির্দেশ দিয়েই তিনি সরাসরি আক্রমণে চলে যান। মোদীর রাজ্য গুজরাতে যে ২০টি বন্দর আছে সে কথা তুলে তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে আছে মাত্র দু’টি বন্দর, সেগুলিও কেন্দ্রের চক্রান্তে শুকিয়ে যাচ্ছে। দাবি করেন, গুজরাটের কোনও দেনা নেই। তাঁরা দেনা মাথায় নিয়ে সরকার গড়েছেন। তবুও তাঁদের আমলে রাজ্যবাসীর জীবনযাপনের মানের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিজেপি টাকা খরচ করে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। “ওরা সাম্প্রদায়িক দল। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছে। গুজরাতে দাঙ্গা করেছে। ভোট এলেই ওরা বসন্তের কোকিলের মতো উদয় হয়। বাকি সময় দিল্লিতে বসে থাকে। একটি ভোটও দেবেন না” তোপ দাগেন মমতা।
এই দ্বৈরথে বংশবাবুরা কোথায়? ময়দানেই নেই নাকি? বিদায়ী সাংসদ পাল্টা বলেন, “আমি তো শুনলাম, তৃণমূল নেত্রী বিজেপি-র সঙ্গে একই সুরে আমাদেরও আক্রমণ করছেন! আমরা লড়াইয়ে নেই কে বলল?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy