পলি জমে কোনও কোনও জায়গায় হাঁটু জল ব্যারাজে। —নিজস্ব চিত্র।
পলি, বালি জমে কমে গিয়েছে ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার হয় না। দুর্গাপুরে এই ডিভিসি ব্যারাজ সংস্কার নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে সিপিএম-তৃণমূলে। সিপিএম সাংসদের দাবি, কেন্দ্র প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি। তৃণমূল বিধায়কের পাল্টা অভিযোগ, ব্যারাজ সংস্কারের পরিকল্পনা জমা দেওয়ার পরে দু’বছর কেটে গেলেও কেন্দ্রের দিক থেকে কোনও সাড়া মেলেনি।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা খুব কমে গিয়েছে। অবিলম্বে সংস্কার করে পলি না তুলে ফেললে অতিবৃষ্টিতে বড় বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, জলের তোড়ে ভেঙে পড়তে পারে ব্যারাজ। নিম্ন দামোদরের বিস্তীর্ণ এলাকা পড়তে পারে বিপদে। ১৯৪৩ সালে দামোদরের বন্যায় বড় ক্ষতি হয়েছিল। এর পরেই পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে নিয়ে সরকারি স্তরে একটি কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি আমেরিকার ‘টেনেসি ভ্যালি অথরিটি’র অনুকরণে একটি সংস্থা গড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করে। ‘টেনেসি ভ্যালি অথরিটি’র বাস্তুকার ডব্লিউএল ভুরডুইন ১৯৪৪ সালে দামোদর ঘিরে নানা পরিকল্পনার কথা শোনান। তিনি জানান, দামোদরের জল পরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করা গেলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ১৯৪৮ সালে গড়ে তোলা হয় ডিভিসি। বরাকর নদের উপর তিলাইয়া ও মাইথন, দামোদরে তেনুঘাট ও পাঞ্চেত এবং কোনার নদীর উপরে কোনার জলাধার গড়ে তোলা হয়। ১৯৫৫ সালে একমাত্র ব্যারাজটি গড়া হয় দুর্গাপুরে।
দামোদর-বরাকর অববাহিকার প্রায় সাড়ে ১৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই ব্যারাজের ক্যাচমেন্ট এলাকা। ব্যারাজটি লম্বায় ৬৯২ মিটার। গেটের সংখ্যা ৩৪টি। ব্যারাজ নির্মাণের ফলে নিম্ন দামোদরে বন্যার আশঙ্কা কমে। এ ছাড়া খরিফ চাষে প্রায় ৮ লক্ষ একর, রবি চাষে ৪৫ হাজার একর এবং বোরো চাষে প্রায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার একর জমিতে সেচের ব্যবস্থাও গড়ে ওঠে। ডিভিসি ব্যারাজ গড়ে ওঠার ফলে লাভ হয় দুর্গাপুর শহরেরও। ব্যারাজ থেকে দামোদরের জল কিনে তা পরিশোধন করে গৃহস্থালী ও বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে দিন-দিন।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ব্যারাজের উপরিভাগে পলি ও বালি জমেছে। শুরুতে জলধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের হিসেবে তা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন কিউবিক মিটারে। অবিলম্বে ব্যারাজ সংস্কারের দাবি দুর্গাপুরবাসী বহুদিন ধরে করে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। লোকসভা ভোটের মুখে এ নিয়ে একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দল।
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাংসদ সাইদুল হকের দাবি, বিষয়টি তিনি সংসদে তুলেছেন। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াত পরে তাঁকে চিঠি দিয়ে জানান, জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় দুর্গাপুর ব্যারাজের পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। রাজ্য সরকার বালি তোলার কাজ করবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। সাংসদের অভিযোগ, “প্রায় ছ’মাস কেটে গিয়েছে। রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য জানিয়ে চিঠি দিয়েও কোনও জবাব পাইনি। কাজ শুরুর কোনও ইঙ্গিতও মেলেনি রাজ্য সরকারের তরফে।”
সিপিএম সাংসদের এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ব্যারাজ সংস্কারের বিষয়টিতে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অপূর্ববাবু বলেন, “মাঝে ডিভিসি ব্যারাজ-সহ মাইথন থেকে রণডিহা পর্যন্ত বালি ও পলি তোলার কাজ করা প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের কাছে বালি ও পলি তোলার জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। তার কোনও জবাব আসেনি। সিপিএম সাংসদ ভোটের মুখে এ সব বলে ঠুনকো রাজনীতি করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy