জামুড়িয়ার বোগড়াচটিতে উল্টে পড়ে বাস। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
সকালের ব্যস্ত সময়ে যাত্রী বোঝাই করে একে অপরকে টেক্কা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে প্রতি দিনই। কে তাড়াতাড়ি আগের বাসস্টপে পৌঁছে বেশি যাত্রী তুলবে, সেই লক্ষ্যে ঝুঁকি নিয়ে টপকে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মাতেন বাসকর্মীরা। আর তার ফল ভুগতে হয় যাত্রীদের। যেমন, মঙ্গলবার ভুক্তভোগী হলেন আসানসোল-বর্ধমান রুটের একটি বাসের জনা তিরিশ যাত্রী।
এ দিন সকালে জামুড়িয়ার বোগড়াচটির কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় ওই বাসটি। আহত যাত্রীদের আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস রাতে বলেন, “তিন জন গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও ভর্তি রয়েছেন।”
আহত যাত্রীদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, এক্সপ্রেস বাসটি দ্রুত গতিতে ছুটছিল। বোগড়াচটির কাছে আচমকা পিছন থেকে আর একটি যাত্রিবাহী বাস সেটিকে পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সামনের বাসটি কিছুতেই জায়গা ছাড়ছিল না। নাছোড় পিছনের বাসটি এর পরে জোর করে সামনের বাসটির গায়ে গায়ে এগোতে যায়। তাতেই ভারসাম্য হারিয়ে সামনের বাসটি উল্টে যায়। দুর্ঘটনার আওয়াজ পেয়ে আশপাশের মানুষজন ছুটে আসেন। যাত্রীদের বের করে আনা হয়।
জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বাসের যাত্রী ইন্দ্রজিৎ পাল জানান, আসানসোল সিটি বাস্ট্যান্ড ছাড়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষি শুরু হয়। তিনি বলেন, “খুব ভয় লাগছিল, কিছু না হয়ে যায়। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। হঠাৎ বাসটি জোরে ঝাঁকুনি দিতে শুরু করে। তার পরে এক দিকে কাত হয়ে উল্টে গেল। আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। বেঁচে ফিরব ভাবিনি।”
বেশ কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি দিনই জাতীয় সড়কে একাধিক বাস নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করে। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনায় যে বাস দু’টি জড়িয়ে পড়ে, তারাও প্রতিদিন রেষারেষি করে। যাত্রীরা জানান, আসানসোল ছাড়ার পরেই শুরু হয়ে যায় রেষারেষি। চলে দুর্গাপুর পর্যন্ত। প্রায়ই বাসের চালক ও কন্ডাক্টরদের সাবধান করলেও কথা কানেই তোলে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এমনিতেই ভীষণ ব্যস্ত জাতীয় সড়ক ধরে অতি দ্রুত গতিতে যানবাহন চলাচল করে। এর পরে যাত্রিবাহী বাসের রেষারেষি বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
বাস দুর্ঘটনায় আহতেরা আসানসোলে।
শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের অভিযোগ, এর জন্য দায়ী মালিকপক্ষ ও পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। বেশি আয়ের জন্য মালিকেরা চালক ও খালাসিদের উপরে বেশি করে যাত্রী তুলতে চাপ দেন। আবার পরিবহণ কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতায় আইন না মেনে বাস চালান চালকেরা। সিটু নেতা হেমন্ত সরকারের বক্তব্য, “এটা তো পুরনো রোগ। পরিবহণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাস মালিকেরা নিয়মের বালাই না রেখে গাড়ি চালাচ্ছেন। ফলে, এই ঘটনা ঘটছে। ফল ভুগছেন যাত্রী ও বাসকর্মীরা।” আইএনটিইউসি নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “রেষারেষির জন্য শুধু বাসকর্মীরা নন, মালিকপক্ষও দায়ী। প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক। আমরা সাহায্য করব।” আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ারও দাবি, “মালিকপক্ষের পরোক্ষ মদতেই রেষারেষির ঘটনা ঘটছে। প্রশাসন কঠোর হলে এ সব বন্ধ করা যাবে।”
বাস মালিকদের সংগঠনের কার্যকরী সমিতির নেতা শান্তনু ঘোষ যদিও মালিকপক্ষের দিকে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “পরিবহণ দফতরের গাফিলতির কারণে প্রতি দিন এই ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করছেন না। তাই যে যেমন খুশি বাস চালাচ্ছেন।” পরিবহণ দফতর মালিকপক্ষের সঙ্গে আলেচনা করে নির্দিষ্ট সময়সূচি করে দিলে আর কোনও সমস্যাই থাকবে না। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসের আশ্বাস, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy