Advertisement
E-Paper

বাড়িতে ফাটল বারবার, নাম নেই পুনর্বাসনের

আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বারাবনির মনোহরবহাল গ্রামের বাসিন্দাদের। বৃষ্টি নামলেই ভয়ে হাত-পা সেঁধিয়ে যায় তাঁদের। প্রমাদ গোনা শুরু করেন, এই বুঝি কোথাও মাটি ফেটে ধস নামল, ঘর-বাড়ি দুলে উঠল। মাসখানেক ধরে এমনটাই নিত্য অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্রামে। গত কয়েক দিনে পরপর তিনটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে আসানসোল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৭
ফাটল দেওয়াল জুড়ে।—নিজস্ব চিত্র।

ফাটল দেওয়াল জুড়ে।—নিজস্ব চিত্র।

আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বারাবনির মনোহরবহাল গ্রামের বাসিন্দাদের। বৃষ্টি নামলেই ভয়ে হাত-পা সেঁধিয়ে যায় তাঁদের। প্রমাদ গোনা শুরু করেন, এই বুঝি কোথাও মাটি ফেটে ধস নামল, ঘর-বাড়ি দুলে উঠল। মাসখানেক ধরে এমনটাই নিত্য অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্রামে।

গত কয়েক দিনে পরপর তিনটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে আসানসোল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে। ধসের জেরে সেখানে হাঁ করে ঝুলছে দেওয়াল। মেঝে ফেটে চৌচির। এই কথা মহকুমা প্রশাসন থেকে এডিডিএসব পক্ষকেই জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু সমস্যা মেটার ব্যাপারে আশার কথা কেউ শোনায়নি বলে অভিযোগ তাঁদের।

বারাবনির নুনি পঞ্চায়েতের অধীনস্থ এই গ্রামে সাকুল্যে ২২৫টি পরিবার বাস করে। বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে এখানে রয়েছেন তাঁরা। রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। এখানকারর মূল সমস্যা হল ধস। ২০০৩ সালে প্রথম বার যখন কোল ইন্ডিয়ার তরফে আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলের ধসপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়, তখন এই গ্রামটিকে ধস কবলিত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই গ্রামের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হবে। এডিডিএ-র তরফে এই গ্রামে জনবিন্যাসের সমীক্ষা করে বাসিন্দাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়ে গিয়েছে প্রায় দু’বছর আগে। কিন্তু, তার পরেও পুনর্বাসনের কাজ এক চুল এগোয়নি। ফলস্বরূপ, প্রতি মুহূর্তে ভূগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক সঙ্গে নিয়ে বেঁচে রয়েছেন বাসিন্দারা।

বাসিন্দারা কতটা আশঙ্ক মধ্যে রয়েছেন, তা এলাকায় গেলেই মালুম হয়। মাস পাঁচেক আগে বাড়ি সংস্কার করেছেন চন্দন কুণ্ডু। তিনি জানালেন, দিন কয়েক আগে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। মাঝ রাতে হঠাৎ মাটি ফাটার আওয়াজ পেয়ে হুড়মুড় করে উঠে দেখেন, দেওয়াল ও মেঝেতে অজস্র ফাটল। চন্দনবাবু বলেন, “প্রশাসনকে জানিয়েছি। তাঁরা সব কিছু শুনেও কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি।” এই ঘটনার দিন পাঁচেক পরেই ফাটল দেখা দেয় রামপদ বাউরির বাড়িতে। তাঁর বাড়ির একটি দিক অনেকটা হেলে পড়েছে। তিনি বলেন, “এখানে আর থাকতে চাই না। পুনর্বাসন পেলে চলে যাব।” এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে দেওয়াল, মেঝে মাকড়সার জালের মতো ফেটে চৌচির হয়ে যায় সুশীল বাউরির বাড়িতে।

বারবার এখানে ধস নামছে কেন? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের খুব কাছে রয়েছে বন্ধ পড়ে থাকা ভূগর্ভস্থ মনোহরবহাল কয়লা খনি। মাটির তলার কয়লা কেটে নেওয়ার পরে বালি ভরাট ঠিক মতো না হওয়ায় ধস নামছে। এই গ্রামের বাসিন্দা, বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য সুধাকর কর্মকারের অভিযোগ, “প্রায় প্রতি দিনই কারও না কারও বাড়িতে ফাটল হচ্ছে। এডিডিএ-কে পুনর্বাসনের ব্যাপারে অনেক বার বলেছি। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়েরও অভিযোগ, “এই এলাকার পুনর্বাসনের দায়িত্ব এডিডিএ-র। কিন্তু তারা কিছু করছে না। এর পরে আমরা বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করব।” ইসিএলের সালানপুর এরিয়া অফিসেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা।

ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, পুনর্বাসনের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ করবে এডিডিএ। মহকুমাশাসক (আসানসোল) অমিতাভ দাস জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি এডিডিএ-র সঙ্গে আলোচনা করবেন। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ওই এলাকার জনবিন্যাস সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজও শুরু হবে।

barabani sushanta banik Cracks in the house rehabilitation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy