Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ভাঙল সেতু, সাঁতরে কাজে যাচ্ছেন বাসিন্দারা

চার দশক ধরে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের ভরসা বলতে ছিল একটিমাত্র বাঁশের সেতু। ভরা বর্ষায় গুরজোয়ানি নদীর জল বাড়ায় গত ১৬ অগস্ট ভেঙে গিয়েছে সেই সেতুটাই। ঘটনাটি ঘটেছে কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের ঘুঘুডাঙা গ্রামে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন ওই গ্রামের হাজার তিনেক বাসিন্দা। সোমবার এই খবর পাওয়ার পরে এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নির্দেশে ওই গ্রামে যান কালনা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল ও ওই ব্লকের তৃনমূল নেতা সেলিম শেখ।

ঘুঘুডাঙায় এভাবেই চলছে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

ঘুঘুডাঙায় এভাবেই চলছে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৯
Share: Save:

চার দশক ধরে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের ভরসা বলতে ছিল একটিমাত্র বাঁশের সেতু। ভরা বর্ষায় গুরজোয়ানি নদীর জল বাড়ায় গত ১৬ অগস্ট ভেঙে গিয়েছে সেই সেতুটাই। ঘটনাটি ঘটেছে কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের ঘুঘুডাঙা গ্রামে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন ওই গ্রামের হাজার তিনেক বাসিন্দা।

সোমবার এই খবর পাওয়ার পরে এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নির্দেশে ওই গ্রামে যান কালনা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল ও ওই ব্লকের তৃনমূল নেতা সেলিম শেখ। শ্রাবণীদেবী জানান, গ্রামবাসীদের নদী পারাপারের জন্য আপাতত একটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিনা ভাড়ায় সেই নৌকার মাধ্যমে বাসিন্দাদের এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নদীর জল কমলে ভেঙে যাওয়া বাঁশের সেতুটিকে পাকা করার আশ্বাস দিয়েছে ব্লক প্রশাসন।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ঘুঘুডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের বেশির ভাগের জীবিকা চাষাবাদ। চাষের জন্য তাঁদের নির্ভর করতে হয় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গুরজোয়ানি নদীর উপর। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামবাসীদের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল প্রায় ৬০ ফুট লম্বা ওই বাঁশের সেতুটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁশের ওই সেতুটিকে পাকা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। বাসিন্দাদের দাবি, বর্ষাকালে মাটিতে পোঁতা বাঁশ মাঝে মধ্যেই পচে যায়। সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বর্ষায় জল বেড়েছে গুরজোয়ানি নদীর। বাঁশের উপরে জলের চাপ বাড়ার ফলেই ১৬ আগস্ট সকালে নদী ভাসিয়ে নিয়ে এই বাঁশের সেতুটিকে। তার পর থেকেই অন্য পাড়ে বাজার ও অন্যান্য কাজে যাওয়ার জন্য নদী সাঁতরাতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন গ্রামের মহিলারা। যাতায়াতের উপায় না থাকায় গ্রামের প্রাথমিক ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বর্তমানে বন্ধ। সমস্যায় পড়েছেন গ্রামের পাট চাষিরাও। সেতু ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাটের বেচাকেনা।

এলাকার যুবক সাবিরুল শেখ জানান, গামছা পরে সাঁতার কেটে অন্য পাড়ে যেতে হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও একই ব্যবস্থা। তাঁর আশঙ্কা, “এর ভিতর যদি গ্রামের কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে হয়ত বেঘোরে প্রাণ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।” গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, প্রতি বার ভোট এলেই পাকা সেতুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের পর কারওকেই দেখা যায় না।

শুধু সেতু ভেঙে যাওয়াই নয়, এই গ্রামে সমস্যা রয়েছে আরও। গ্রামবাসীরা জানান, নদীর পাশের মোরাম রাস্তার অবস্থাও বেশ খারাপ। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুর উচ্চতায় কাদা জমে রয়েছে। এ দিন এলাকা ঘুরে দেখে তৃণমূল নেতা সেলিম শেখ বলেন, “এলাকার বিধায়ক স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে গুরজোয়ানি নদীর পাশ দিয়ে ২০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি করা হবে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা।”

শুকনো আশ্বাসের বদলে এ বার সত্যিই কাজ চাইছে ক্ষুব্ধ ঘুঘুডাঙা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalna ghughudanga bamboo bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE