Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মিছিল, অবরোধে ভোগান্তি জেলা জুড়ে

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিষেধ সত্ত্বেও ফের মন্ত্রীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অবরোধ-বিক্ষোভের রাস্তা নিল তৃণমূল। রবিবার জেলার বিভিন্ন শহরে বিক্ষিপ্ত ভাবে মিছিল করে তারা। রেললাইনে পতাকা নিয়ে বসে, জাতীয় সড়ক আটকেও বিক্ষোভ করে একাধিক জায়গায়। যদিও জেলা তৃণমূলের নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষকে যথাসম্ভব কম দুর্ভোগে ফেলেই প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছেন তাঁরা। ছুটির দিনে সকাল থেকেই ২ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের বিক্ষোভের জেরে যানজটে পড়ে বহু যানবাহন।

আসানসোলের হাটন রোডে।

আসানসোলের হাটন রোডে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩০
Share: Save:

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিষেধ সত্ত্বেও ফের মন্ত্রীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অবরোধ-বিক্ষোভের রাস্তা নিল তৃণমূল।

রবিবার জেলার বিভিন্ন শহরে বিক্ষিপ্ত ভাবে মিছিল করে তারা। রেললাইনে পতাকা নিয়ে বসে, জাতীয় সড়ক আটকেও বিক্ষোভ করে একাধিক জায়গায়। যদিও জেলা তৃণমূলের নেতাদের দাবি, সাধারণ মানুষকে যথাসম্ভব কম দুর্ভোগে ফেলেই প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছেন তাঁরা।

ছুটির দিনে সকাল থেকেই ২ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের বিক্ষোভের জেরে যানজটে পড়ে বহু যানবাহন। সকালে পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়ে এবং দুর্গাপুরের মুচিপাড়া মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। বিকালে ফের পানাগড় বাজারে বিক্ষোভ দেখায় তারা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ১১টা নাগাদ পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়ের বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন কাঁকসার যুব নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “সিবিআই অন্যায় ভাবে মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। তার প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছি।” আধ ঘণ্টার ওই বিক্ষোভে আটকে পড়া যানবাহন চলালচল স্বাভাবিক হতে আরও ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। এরপরে বিক্ষোভ শুরু হয় দুর্গাপুরের মুচিপাড়া মোড়ে। সেখানে নেতৃত্ব দেন যুব তৃণমূলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি হৃদয় সাঁই। বিক্ষোভ চলে প্রায় আধঘন্টা। যানজট স্বাভাবিক হতে আরও আধঘন্টা লাগে। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের বৈকুন্ঠপুর জোতগ্রামের কাছেও মন্ত্রীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। আটকে পড়ে বহু বাস, গাড়ি ও মালবাহী গাড়ি। মিনিট পনেরোর ওই বিক্ষোভে দুভোর্গে পড়েন বহু দূরপাল্লার যাত্রীও।

বিকেলে আবার পানাগড় ক্যানাল পাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করেন দলে পল্লববাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত প্রাক্তন কাঁকসা ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী। মিছিল শেষ হয় পানাগড় বাজারে। সেখানে প্রায় আধঘন্টা বিক্ষোভ চলে। ফলে দু’বেলায় যানজটে থমকে যায় জাতীয় সড়ক। দুর্গাপুরের সগড়ভাঙ্গায় দলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মিছিল হয়। তবে রবিবার কুয়াশাঘেরা আবহাওয়া, সঙ্গে বৃষ্টিতে ব্যক্তিগত গাড়ি কম ছিল। ফলে যানজট নিয়ন্ত্রণে তেমন সমস্যা হয়নি বলে পুলিশের দাবি।


দুর্গাপুরের মুচিপাড়ায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে তৃণমূলের অবরোধ।

আসানসোলেও দিনভর বিক্ষোভ-অবরোধে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। বেলা ১১টা নাগাদ তৃণমূল নেতা তথা আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির নেতৃত্বে আসানসোলের বিএনআর মোড় থেকে হাজার দুয়েক মানুষের মিছিল বের হয়। শেষ হয় হাটন রোডে। একেবারে জিটি রোডের মাঝখান দিয়ে মিছিল যাওয়ায় শহরে ব্যাপক যানজট হয়। মিছিলের দু’মাথায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস-গাড়ি। আবার শীত শুরুর ছুটির দিনে অনেকেই সপরিবারে বেরিয়েছিলেন কাছেপিঠে ঘুরতে। ভরদুপুরের এই মিছিলে গাড়িতে ‘বন্দি’ হয়ে তাদের অনেকেরেই আনন্দ মাটি হয়ে যায়। হাটন রোড এলাকায় রাস্তার মাঝে তৃণমূল কর্মীদের টায়ার পোড়ানোয় যানজট আরও বাড়ে। দলের নেতার গ্রেফতারের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের মুশকিল বাড়ানোয় বিরক্তি প্রকাশ করেন অনেক যাত্রীই। আসানসোল পুরসভার সামনেও তৃণমূলের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন হয়। সভা শেষে পুরসভার সামনে জিটি রোড অবরোধও করা হয়। ফলে ওই এলাকাতেও বিপাকে পড়েন মানুষজন। বারাবনিতেও মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। স্থানীয় যুব নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দোমহানি হাটতলা থেকে কয়েকশো সদস্য সমর্থকের মিছিল করেন।

পথে পথে প্রতিবাদের সঙ্গে অবরোধ চলে রেললাইনেও। রবিবার সকালে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা বর্ধমানের রসুলপুরের কাছে রেললাইনে অবরোধ শুরু করেন। মিনিট দশেকের ওই অবরোধের জেরে আটকে পড়ে একটি লোকাল ট্রেন। আসানসোলের বল্লভপুর রেল গেটের কাছেও প্রায় আধ ঘণ্টা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করল তৃণমূল। সেনাপতি মণ্ডলের নেতৃত্বে চলা ওই অবরোধের জেরে এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়।

এ দিন বিকেলে দুর্গাপুরের বিধাননগরের হাডকো মোড় থেকে মিছিল করে সিপিএম। অবিলম্বে সারদা মামলায় মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা এবং যুক্ত বাকিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মিছিল বিধাননগর পরিক্রমা করে শেষ হয় বিধাননগর ফাঁড়ির কাছে। সিপিএমের বিধাননগর-জেমুয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক পংকজ রায় সরকার বলেন, “যেভাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মাঠে নেমেছেন তা মেনে নেওয়া যায় না। তাছাড়া সারদা’র লক্ষ লক্ষ টাকা হাপিস করে দেওয়ার ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁদের দ্রুত গ্রেফতার করা উচিত।”

তবে দলের মহাসচিবের নির্দেশের পরেও জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ, অশান্তি বাড়িয়ে এমন প্রতিবাদ কেন? তৃণমূলের বর্ধমান জেলার (গ্রামীণ) অন্যতম সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “মানুষের দুর্ভোগ হয়ত হয়েছে। কিন্তু আমরা মহত্‌ স্বার্থে, বৃহত্‌ প্রতিবাদে সামিল হয়েছি। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।” জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনেরও জবাব, “রাজনৈতিক উদ্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই কর্মসূচি পালন করতে যতটা সম্ভব সাধারণ মানুষকে কম দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে।”

ছবি: শৈলেন সরকার ও বিশ্বনাথ মশান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra arrest traffic jam blockade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE