Advertisement
০৮ মে ২০২৪

মনমরা বন্ধুর অসুস্থ বাবার চিকিৎসায় চাঁদা সহপাঠীদের

হাসিখুশি ছেলেটাকে দিনকয়েক বেশ মনমরা দেখাচ্ছিল। শুকনো মুখে বসে থাকছিল ক্লাসঘরের এক কোনে। শেষে এক দিন পাকড়াও করে বন্ধুরা। “কী ব্যাপার, কথা বলছিস না কেন?”চেপে ধরতে আর চুপ থাকতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্রটি। জানায়, বাবার দু’টি কিডনিই বিকল। অভাবের সংসারে কী করে তাঁর চিকিৎসা হবে, ঘুম নেই সে চিন্তায়।

বাবার সঙ্গে হিল্লোল। ছবি: মধুমিতা মজুমদার

বাবার সঙ্গে হিল্লোল। ছবি: মধুমিতা মজুমদার

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০২:১৭
Share: Save:

হাসিখুশি ছেলেটাকে দিনকয়েক বেশ মনমরা দেখাচ্ছিল। শুকনো মুখে বসে থাকছিল ক্লাসঘরের এক কোনে।

শেষে এক দিন পাকড়াও করে বন্ধুরা। “কী ব্যাপার, কথা বলছিস না কেন?”চেপে ধরতে আর চুপ থাকতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্রটি। জানায়, বাবার দু’টি কিডনিই বিকল। অভাবের সংসারে কী করে তাঁর চিকিৎসা হবে, ঘুম নেই সে চিন্তায়।

এ কথা শোনার পরে বসে থাকতে পারেনি বর্ধমানের কালনা মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র হিল্লোল পালের সহপাঠীরাও। প্রথমে তারা ঠিক করে, নিজেদের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে হিল্লোলের বাবা আশিসবাবুর চিকিৎসার টাকা তুলবে। কিন্তু সেই সঞ্চয় যে চিকিৎসা খরচের খুব সামান্য অংশ জোটাবে, অচিরেই তা বুঝতে পারে তারা। তাই ক্লাসের ফাঁকে অন্য ক্লাসের পড়ুয়াদের কাছে, শিক্ষকদের থেকে, অভিভাবকদের কাছে গিয়ে টাকা তুলছে তারা। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এই অভিযান। শনিবার পর্যন্ত উঠেছে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা।

কালনার শ্যামরায় পাড়ায় টালির চালের বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে হিল্লোল। গানের টিউশন করে আশিসবাবু যে রোজগার করেন, তাতেই কোনও মতে সংসার চলে। পড়শিরা জানান, আশিসবাবু অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন। মাস তিনেক আগে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এক ছাত্রী তাঁকে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানেই জানা যায়, তাঁর দু’টি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফেরার পরে এখন প্রতি সপ্তাহে ডায়ালিসিস করাতে হয়। হিল্লোল জানায়, সে জন্য ১২ হাজার টাকা করে খরচ হয়। ধার-দেনা করে আপাতত চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন চলবে, সে ভাবনাতেই হাসি নেই তার মুখে।

হিল্লোলের সহপাঠী টুটুল গুপ্ত, সৃজন পাত্র, তন্ময় মুখোপাধ্যায়েরা জানায়, হঠাৎ মুষড়ে পড়া বন্ধুর উপরে জোরাজুরি করে এই সমস্যা জানার পরে তাদেরও মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তার পরেই তারা ঠিক করে, বন্ধুর বাবার চিকিৎসার জন্য সাধ্য মতো সাহায্য করতে হবে। কালনার এই স্কুলে এখন মোট পড়ুয়া প্রায় ১৬০০। টুটুল বলে, “আমরা ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে বোঝাচ্ছি, হিল্লোলকে সাহায্য করা খুব জরুরি। তাতে কাজ হচ্ছে। অনেকে স্কুলে এসেও টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।” প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ বলেন, “ছাত্রদের মুখে খবরটা শোনার পরেই আমি হিল্লোলকে ডেকে পাঠাই। ও জানায়, বাবার দু’টি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোটা পরিবারটাই মুশকিলে পড়েছে। আমরা ওর পাশে আছি।”

আশিসবাবু বলেন, “যত দিন যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আয়ু ফুরিয়ে আসছে। তবে সবাই এ ভাবে সাহায্য করায় কিছুটা আশা দেখছি।” কিছুটা হাসি ফিরেছে হিল্লোলের মুখেও। সে বলে, “আমাদের বিপদে গোটা স্কুল যে ভাবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, ভাবা যায় না!” এর পরেই ফের আশঙ্কা ঝরে পড়ে তার গলায়, “ডাক্তার জানিয়েছে, শীঘ্রই বাবার একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। সে জন্য দরকার অন্তত পাঁচ লক্ষ টাকা। কোথা থেকে তা পাব, জানি না!”

হাসি ফের মিলিয়ে যায় বছর পনেরোর ছেলেটার মুখ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE