Advertisement
০৫ মে ২০২৪
ছাতিমডাঙায় বিজেপির দল

রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ ভাতারে

হিমঘরে লম্বা লাইন। আড়তদারেরাও আলু নিতে চাইছেন না। সরকারি সহায়ক মূল্যে অবিলম্বে আলু কেনা শুরুর দাবিতে বৃহস্পতিবার রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখালেন ভাতারের বেশ কিছু চাষি। পুলিশ তখনকার মতো আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ তুললেও পরে ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। এ দিন ভাতারের ছাতিমডাঙা গ্রামে আত্মঘাতী আলুচাষির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিজেপি-র একটি প্রতিনিধি দল। এ দিনই আবার মঙ্গলকোটের এক যুবকের কীটনাশকে মৃত্যু ও জামালপুরের এক জনের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় আলু চাষে বিপর্যয়ের দিকে আঙুল তুলেছে পরিবার।

ভাতারে অবরোধে আটকে পড়েছে গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ভাতারে অবরোধে আটকে পড়েছে গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

হিমঘরে লম্বা লাইন। আড়তদারেরাও আলু নিতে চাইছেন না। সরকারি সহায়ক মূল্যে অবিলম্বে আলু কেনা শুরুর দাবিতে বৃহস্পতিবার রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখালেন ভাতারের বেশ কিছু চাষি। পুলিশ তখনকার মতো আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ তুললেও পরে ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। এ দিন ভাতারের ছাতিমডাঙা গ্রামে আত্মঘাতী আলুচাষির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিজেপি-র একটি প্রতিনিধি দল। এ দিনই আবার মঙ্গলকোটের এক যুবকের কীটনাশকে মৃত্যু ও জামালপুরের এক জনের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় আলু চাষে বিপর্যয়ের দিকে আঙুল তুলেছে পরিবার।

আলুর অতিফলন, কম দাম, হিমঘর মালিকদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ, সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু না হওয়া-সহ নানা কারণে এ দিন গুসকরা-বলগনা রুটে ঝাড়ুল গ্রামের কাছে রাস্তায় আলু ফেলে পথ অবরোধ করেন চাষিরা। অবরোধ শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। তা চলে দুপুর পর্যন্ত। ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডল ও পুলিশের হস্তক্ষেপে তখন অবরোধ ওঠে। অবরোধে যোগ দেওয়া স্থানীয় ঝাড়ুলের চাষি কলিম মোল্লা, উজ্বল খাঁ-রা বলেন, “আমাদের এখানে আলুর দাম খুব কম। বাজারে আড়তদারেরা আলু নিতে চাইছেন না। হিমঘরে রাখতে যাচ্ছি। সেখানেও প্রচুর লাইন। হিমঘরে আলু নিয়ে যাওয়ার খরচও আমরা জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছি। সব মিলিয়ে খুব বিপদে পড়েছি।” বিডিও প্রলয়বাবু বলেন, “চাষিদের দাবির কথা আমি জেলা প্রশাসন ও কৃষি দফতরে জানাব। তার বেশি কিছু তো আমার করার নেই।” তবে আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে ভাতারের ব্লক অফিসে গিয়ে অবরোধকারীরা ফের এক দফা বিক্ষোভ দেখান।

মঙ্গলকোটের পালিগ্রাম পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল (২৬) ৯ মার্চ কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবার। বুধবার দুপুরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। হাসপাতালে আসা পরিজনদের দাবি, সঞ্জয় কয়েক বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। বাজারে দেনা হয়ে গিয়েছিল। অথচ, আলুর দাম নেই। তাই হতাশ হয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। তাঁরা আরও জানান, ফসলের দাম না পেয়ে বছর চারেক আগেও এক বার তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রশাসনের যদিও দাবি, গ্রামের এক বধূর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনের জেরে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক।

জামালপুরের সোনা গড় ধাপধাড়া গ্রামের অতনু দাস নামে এক আলুচাষি কীটনাশক খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর মা কমলাদেবী ও জেঠিমা মালতীদেবী দাবি করেন, “অতনু চার বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিল। বাজারে কিছু দেনা করতে হয়েছিল। এখন আলুর দাম কম বলে প্রচুর লোকসান হয়েছে। নাবি ধসাতেও কিছু আলু নষ্ট হয়েছে। টাকা শোধ করার চাপ রয়েছে। তাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সে মঙ্গলবার সকালে কীটনাশক খেয়েছে।”

এ দিন দুপুরে ভাতারের ছাতিমডাঙা গ্রামে আত্মঘাতী আলুচাষির বাড়ি যান বিজেপি-র জেলা (গ্রামীণ) সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ নন্দী, ভাতার ব্লক সম্পাদক সঞ্জিত ঘোষ-সহ দলের পাঁচ জন। তাঁরা নিহতের স্ত্রী লক্ষ্মী মুর্মু ও ছেলে রামের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। দু’জনই বিজেপি-র প্রতিনিধি দলের কাছে অভিযোগ করেন, আলু চাষ করতে গিয়ে দেনায় জড়িয়ে পড়েই আত্মঘাতী হয়েছেন গুড্ডু মুর্মু। আলুর কম ফলন ও দাম পড়ে যাওয়ায় তিনি যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন, সে কথাও প্রতিনিধি দলকে জানান তাঁরা।

মৃতের বাড়ি কাছে দাঁড়িয়ে স্থানীয় চাষি কার্তিক মিস্ত্রি বলেন, “এলাকায় অধিকাংশই ছোট চাষি। তাঁদের ঋণ বা দাদন নিয়ে চাষ করতে হয়। তাই সবাই এ বার সমস্যায় পড়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ মল্লিক বলেছেন, “আলুর দাম এ বার খুবই কম। আজই মাঠে আলু বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা বস্তা দামে। অথচ, এর দ্বিগুণ খরচ হয়েছে।”

প্রশাসন অবশ্য ছাতিমডাঙার চাষির মৃত্যুর সঙ্গে আলুচাষে বিপর্যয়ে কোনও যোগের কথা এখনও মানতে নারাজ। বিডিও বলেন, “ওই আত্মঘাতী আলু চাষি সম্পর্কে একটি তদন্ত করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” জেলাশাসক বলেন, “ছাতিমডাঙার ওই ব্যক্তি আদতে চাষি নন। তিনি এক ব্যক্তির ১৭ কাঠা জমিতে আলু চাষ করেন। ভাগ চাষি হিসেবে তাঁর ওই ফসলের এক তৃতীয়াংশ পাওয়ার কথা ছিল। এমনই রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।”

বৃহস্পতিবার বর্ধমান জেলা যুব কংগ্রেসের পক্ষে অভিজিৎ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এক দল কংগ্রেস কর্মী জেলাশাকের দফতরে গিয়ে সরকারের উদ্যোগে ন্যায্য মূল্যে আলু কেনার দাবিতে স্মারকলিপি দেন। তাঁদের দাবি, সরকার শুধু ঘোষণা করেই দায় সেরেছে। এখনও কোথাও এক বস্তা আলু কেনা হয়নি। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের অভিযোগ, আলু, টমেটো এবং অন্য কৃষিজাত পণ্যের দাম না পেয়ে কৃষকরা বিপর্যস্ত। লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ এ দিন বলেন, “সরকারকে মাঠে গিয়ে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনতে হবে। এই দাবিতে কালনা, মেমারি, সাতগাছিয়া, বৈঁচি প্রভৃতি অঞ্চলে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করা হবে।”

এ দিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (খাদ্য) রত্নেশ্বর রায়ের ঘরে গুসকরার কাছের একটি হিমঘরের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয় প্রশাসনের কর্তাদের। তাতে বলা হয়েছে, চাষিদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব আলু নিতে হবে হিমঘরকে। হিমঘর কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিজেদের নিরাপত্তা চেয়েছেন। তাঁদের দাবি, ওই হিমঘরে আউশগ্রাম ১ ও ২, ভাতার, মঙ্গলকোট, এমনকী বীরভূমের একাংশ থেকে আলু নিয়ে আসেন চাষিরা। এই চাপ সামলাতেই তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। তবে এ দিন বৈঠকের পরে বিকেল থেকে ফের ওই হিমঘরে আলু রাখার কাজ শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bjp agitation bhatar potato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE