Advertisement
০৪ মে ২০২৪

রক্ষী কম, বন্ধ ইউনিটে দেদার চুরি ডিপিএলে

একে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সংস্থা। তার উপরে আবার চোরের উৎপাত। বন্ধ ইউনিটগুলি থেকে যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা ডিপিএলে। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে এই চুরিতে জড়িত সন্দেহে দশ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত আছে বলে পুলিশের অনুমান।

চুরির অভিযোগে ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র।

চুরির অভিযোগে ধৃতেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৩
Share: Save:

একে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সংস্থা। তার উপরে আবার চোরের উৎপাত। বন্ধ ইউনিটগুলি থেকে যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা ডিপিএলে। বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে এই চুরিতে জড়িত সন্দেহে দশ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত আছে বলে পুলিশের অনুমান।

১৯৬০ সালে গড়ে ওঠা এই সংস্থায় গোড়ার দিকে ৩০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট ছিল। বছর ছয়েকের মধ্যে ৭৭ মেগাওয়াট করে আরও তিনটি ইউনিট গড়ে ওঠে। ১৯৮৭ সালে ১১০ মেগাওয়াটের একটি ও ২০০৮-এ ৩০০ মেগাওয়াটের আরও একটি ইউনিট তৈরি হয়। আড়াইশো মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিটটি চালু হলেও এখনও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি। প্রথম দু’টি ইউনিট আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। পরের তিনটি পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বন্ধ করে দেওয়া ইউনিট নিলাম করে বিক্রি করার কথা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই চোরেদের রমরমা শুরু হয়ে গিয়েছে ডিপিএলে।

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে সংস্থার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেশির ভাগই বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। সংস্থায় প্রায় ৪২৫ জন সরকারি নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা। কিন্তু অবসরের পর নতুন করে শূন্যপদে লোক নিয়োগ না করায় এখন তা কমে প্রায় এক চতুথার্ংশ হয়েছে। বেসরকারি রক্ষীর সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। কাজেই নিরাপত্তার জন্য সংস্থাকে মূলত বেসরকারি কর্মীর উপরেই নির্ভর করতে হয়।

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের মতো বিস্তীর্ণ কারখানা চত্বর জুড়ে সর্বত্র কড়া নজরদারি আর নেই। মাঝে-মাঝেই লোহা চোরেরা রক্ষীদের নজর এড়িয়ে ঢুকে পড়ে কারখানা চত্বরে। অনেক সময়ে চোরেদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে রক্ষীরা আগেভাগে বাধা দিতে যান না। তাঁরা থানায় খবর দেন। সেই সুযোগে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাতে অবশ্য পুলিশ গিয়ে কয়েক জনকে ধরে ফেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতে অভিযান চালিয়ে দশ জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, এক রাউন্ড কার্তুজ এবং লোহার যন্ত্রাংশ কাটার যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়। পুলিশ জানায়, এই দলে আরও কয়েক জন ছিল। কিন্তু তারা পালিয়ে যায়। পুলিশের অনুমান, চোরাই সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য কারখানার বাইরে গাড়ি রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। সেই গাড়িতেই পালায় তারা। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়। ধৃত ৮ জনের ৬ দিন জেল-হাজত এবং বাকি দু’জনের ৬ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ধৃত দু’জনকে জেরা করে দলের বাকিদের খোঁজ করা হবে।

ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, “সংস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে কতটা ঢিলেঢালা তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল। অবিলম্বে নিরাপত্তারক্ষীর ফাঁকা পদে লোক নিয়োগ করতে হবে।” একই দাবি আইএনটিটিইউসি নেতা আলোময় ঘড়ুইয়েরও। ডিপিএলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে নতুন নিয়োগ সম্ভব নয়। বর্তমান পরিকাঠামো ব্যবহার করে কী ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যায়, সেই ভাবনাচিন্তা চলছে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dpl security theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE