Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ডপিএল

সিদ্ধান্তের আগেই বদলি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি, অসন্তোষ

আর্থিক সঙ্কটে চলা ডিপিএলকে রাজ্যের অন্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু তার আগেই ডিপিএলের কর্মীরা কে কোন সংস্থায় এবং রাজ্যের কোথায় বদলি হতে ইচ্ছুক সেটা জানতে বিজ্ঞপ্তি দিল ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ইতিমধ্যেই এই বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করে আইএনটিইউসি এবং আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ডিপিএলের কর্মী সংগঠন চিঠি দিয়েছে ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৫
Share: Save:

আর্থিক সঙ্কটে চলা ডিপিএলকে রাজ্যের অন্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু তার আগেই ডিপিএলের কর্মীরা কে কোন সংস্থায় এবং রাজ্যের কোথায় বদলি হতে ইচ্ছুক সেটা জানতে বিজ্ঞপ্তি দিল ডিপিএল কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ইতিমধ্যেই এই বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করে আইএনটিইউসি এবং আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ডিপিএলের কর্মী সংগঠন চিঠি দিয়েছে ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষকে। যদিও ডিপিএলের দাবি, বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। কর্মী সংগঠনগুলি এটি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক ছড়াচ্ছে।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানা ও বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ১৯৬০ সালে গড়ে উঠেছিল ডিপিএল। বয়স ও কারিগরী সমস্যার কারণে এই সংস্থার ৩০ মেগাওয়াটের দু’টি এবং ৭৭ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট অনেক দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। মেরামতির কারণে বর্তমানে ষষ্ঠ ইউনিটটিও বন্ধ। ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিটটিতে এখনও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি। তবে বহু দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে সপ্তম ইউনিট। এই ইউনিট থেকে বর্তমানে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ২০০-২১০ মেগাওয়াট। কিন্তু এখন ডিপিএলের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদা হল গড়ে ২৫০ মেগাওয়াট। এই চাহিদা পূরণ করতে বাকি বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করছে ডিপিএল।

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অর্থবর্ষে তাদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল। চলতি অর্থবর্ষে লোকসানের পরিমাণ ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডিপিএল পরিদর্শনে এসেছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। তখন তিনি জানান, সংস্থার অব্যবহৃত জমিতে আবাসন, আইটি পার্ক, শপিং মল তৈরি করে সেখান থেকে আয় করবে ডিপিএল। ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত একটি নতুন ইউনিট গড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু তারপর পিছু হটে সরকার। চলতি বছরের ১৬ জুন ডিপিএলের পরিচালন সমিতি এই সংস্থাকে অন্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১ নভেম্বর থেকে এই প্রস্তাব কার্যকর হবে। প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি তৈরি করেছিল রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। ওই কমিটি ইতিমধ্যেই ডিপিএল পরিদর্শন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। যদিও নিগম এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। কিন্তু তার মধ্যেই কর্মীদের উদ্দেশ্য দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তি উস্কে দিয়েছে বিতর্ক।

আইএনটিইউসি অনুমোদিত ডিপিএল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক উমাপদ দাসের ক্ষোভ, “কি হবে কেউ জানে না। কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিলেন কী করে?” তাঁর অভিযোগ, এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আসলে কর্তৃপক্ষ কর্মীদের চাপে রাখতে চাইছেন। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ডিপিএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি অমর মণ্ডল বলেন, “ডিপিএলকে বাঁচানোর যে কোনও সরকারি উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু নিশ্চিত ভাবে কিছু হওয়ার আগে এভাবে কর্মীদের উপরে কর্তৃপক্ষের চাপ দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছি।” কোন প্রেক্ষিতে ডিপিএল এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেটা জানানো না হলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন অমরবাবু।

ডিপিএলের পার্সোনেল বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার টিটো দেব জানান, ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের কথা ভেবেই প্রাথমিক মূল্যায়ন সেরে রাখতে চাইছে ডিপিএল। ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মীদের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই সেটা করেননি। কর্মীদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে টিটোবাবু বলেন, “কর্মী সংগঠনগুলি আমাদের বক্তব্যের ভুল মূল্যায়ণ করছে। আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

এ দিন লিফলেট বিলি নিয়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ডিপিএলের আইএনটিটিইউসির দু’টি গোষ্ঠী। আইএনটিটইউসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপিএল সংস্থাটি অন্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থায় সংযুক্ত হয়ে গেলে বকেয়া ভাতা, মৃত কর্মীর পোষ্যের চাকরি, ডিপিএলের জমিতে বহুতল গড়ার প্রস্তাব-সহ কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে কি না সেই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ওই লিফলেট বিলি করছিল আইএনটিটিইউসির একটি গোষ্ঠী। আইএনটিটইউসি নেতা জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তাঁর অনুগামীরা সংগঠনেরই অন্য নেতা দেবদাস মজুমদারের বাড়িতে ওই লিফলেট দিতে এলে তিনি তা নিতে অস্বীকার করেন। সেই নিয়েই বচসা শুরু হয়। পরে পুলিশ দুই গোষ্ঠীর ৬ জনকে আটক করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dpl subrata sit durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE