Advertisement
০২ মে ২০২৪

সময়ে শেষ না হওয়ায় বাড়ছে প্রকল্পের খরচ

জলকষ্ট থেকে নিস্তার নেই আসানসোলের। আট বছর আগে জলপ্রকল্প অনুমোদন করেছিল কেন্দ্র। তা এখনও চালু হয়নি। কী অবস্থা সেই প্রকল্পের? কেনই বা তা এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি? আজ শেষ পর্ব।ডিহিকা জলপ্রকল্পের অনুমোদন যখন আসে, তখন পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামের দাবি, বামেরা শুধু আটটি জলাধার গড়া ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি। ২০০৯ সালের জুনে পুরভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। কিন্তু তার পরে পাঁচ বছর ধরেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারল না কেন বর্তমান পুরোবোর্ড? রবিউল ইসলাম বলেন, “প্রথমে প্রকল্পটির জন্য ১০০ কোটি টাকার অনুমোদন এসেছিল।

জলের জন্য অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। —নিজস্ব চিত্র।

জলের জন্য অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

ডিহিকা জলপ্রকল্পের অনুমোদন যখন আসে, তখন পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামের দাবি, বামেরা শুধু আটটি জলাধার গড়া ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি।

২০০৯ সালের জুনে পুরভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। কিন্তু তার পরে পাঁচ বছর ধরেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারল না কেন বর্তমান পুরোবোর্ড? রবিউল ইসলাম বলেন, “প্রথমে প্রকল্পটির জন্য ১০০ কোটি টাকার অনুমোদন এসেছিল। কিন্তু সময় মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের খরচ আরও প্রায় ৩০ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছে।” তাহলে কি টাকার অভাবেই প্রকল্পের কাজ মাঝ পথে থমকে গিয়েছে? এ নিয়ে খোলসা করে কিছু বলতে চাননি তিনি।

মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জল সঙ্কটের কথা একেবারে মানতে নারাজ। এলাকায় জলের সঙ্কট নেই বলেই কেউ অবরোধ, বিক্ষোভ হচ্ছে না, স্মারকলিপিও জমা পড়ছে না বলে দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু গত বছর মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত পুরসভায় প্রায় ১০টি স্মারকলিপি দেওয়া ও মেয়রকে ঘেরাও হয়েছে। চলতি বছরে পুরসভায় বিক্ষোভ না হলেও জল সমস্যায় ভোগা এলাকাগুলিতে অশান্তি চলেছেই।

আটটি জলাধারের মধ্যে তিনটির বেশি কেন চালু করা যায়নি? রবিউল ইসলাম জানান, ধাদকা জলাধারে দামোদরের জল তোলার জন্য পাইপলাইন বার্নপুর রোড দিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ওই রাস্তায় ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের ভেহিকেলস গেটের কাছে কারখানার পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য একটি রেললাইন আছে। রবিউল ইসলাম বলেন, “লাইনের তলা দিয়ে পাইপ নিয়ে যাওয়ার সময়ে রেল কর্তৃপক্ষের বাধায় কাজটা করা যায়নি। তবে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করেছি।” তিনি আরও জানান, বকবাধি জলাধারে জল তুলতে হলে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের তলা দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে যেতে হবে। সম্প্রতি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, সড়কটি চওড়া করার পরিকল্পনা হয়েছে। সেই কাজ হওয়ার আগে তাঁরা সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে পাইপলাইন বিছোতে চাইছেন না। বাকি তিনটি জলাধারে দ্রুততার সঙ্গে কাজ হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

রবিউল ইসলাম জানান, ডিহিকার প্রকল্প শেষ করা না গেলেও ইতিমধ্যে পুরসভার একক চেষ্টায় তিনটি ছোট প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর সব ক’টিই সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে নদীগর্ভ থেকে জল তুলে পাইপলাইনে করে এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, ডামরায় এই রকম একটি প্রকল্প গড়ে ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে জল দেওয়া হচ্ছে। ডিহিকার একটি ছোট প্রকল্প ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে ও ভুতাবুড়ি প্রকল্প তৈরি করে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে জল দেওয়া হচ্ছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮২ সালে পুরসভার উদ্যোগে প্রথম তৈরি হয় কালাঝরিয়া জলপ্রকল্প। বার্নপুরে ইস্কো এয়ারপোর্টের কাছে দামোদরের পারে তৈরি এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। প্রায় ১০ মিলিয়ন গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২৫ বছর। পুরসভার ৩০টি ওয়ার্ডে এই প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা হয়। ২০০৭ সালে তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরপরই আসানসোলে যাতে আর একটি জলপ্রকল্প চালু করা যায়, সে জন্যই ডিহিকার প্রকল্পটি তৈরির উদ্যোগ হয়। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের দাবি, “কালাঝরিয়া প্রকল্পটি আমাদের উদ্যোগেই তৈরি হয়েছিল। নতুন প্রকল্পটিও আমরা অনুমোদন করে এনেছিলাম।” তাঁর মন্তব্য, “২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটে পুরবোর্ড নিজেদের কোন্দল সামলাতেই হিমসিম খেল। জলপ্রকল্প আর কবে শেষ করবে!”

কবে সম্পূর্ণ হবে এই প্রকল্প, তা সত্যিই শহরবাসীর কাছে বড় প্রশ্ন। তত দিন জলকষ্টে দিনযাপনই ভবিতব্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE