Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিরোধীরা একজোট, প্রশ্ন রেখেও পাশ বিপণন বিল

প্রত্যাশিত ভাবেই বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে সোমবার পাশ হয়ে গেল কৃষিপণ্য বিপণন সংক্রান্ত সংস্কার আইন। যার ফলে এ রাজ্যে কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রফতানি এবং বেসরকারি বাজার খোলার ক্ষেত্রে আর আইনি বাধা রইল না। কিন্তু আগের বিলটি প্রায় অবিকৃত রেখেই যে ভাবে এ দিন পাশ করানো হয়েছে, তাতে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে তা হলে এই বিল প্রথমে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো এবং আবার তড়িঘড়ি অধিবেশন ডেকে তা পাশ করানোর দরকার কী ছিল?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

প্রত্যাশিত ভাবেই বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে সোমবার পাশ হয়ে গেল কৃষিপণ্য বিপণন সংক্রান্ত সংস্কার আইন। যার ফলে এ রাজ্যে কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রফতানি এবং বেসরকারি বাজার খোলার ক্ষেত্রে আর আইনি বাধা রইল না। কিন্তু আগের বিলটি প্রায় অবিকৃত রেখেই যে ভাবে এ দিন পাশ করানো হয়েছে, তাতে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে তা হলে এই বিল প্রথমে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো এবং আবার তড়িঘড়ি অধিবেশন ডেকে তা পাশ করানোর দরকার কী ছিল?

বিরোধীদের তরফে এ দিন প্রবল প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে। প্রধান বিরোধী পক্ষ বামেরা তো বটেই, এসইউসি এবং এমনকী, কংগ্রেসও বিলের পূর্ণ বিরোধিতা করেছে। তাদের আপত্তি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নয়। যে ভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না রেখে গোটা কৃষি বিপণন ব্যবস্থা বেসরকারি হাতে দেওয়া হচ্ছে এবং যে পদ্ধতিতে বিল পাশ করানো হচ্ছে, বিরোধীরা আপত্তি তুলেছে তা নিয়েই। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, “বিশেষ অধিবেশন ডেকে এত জরুরি ভিত্তিতে যে বিল পাশ করানো হচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় না থেকে সুন্দরবনে কেন?”

২০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ কৃষিপণ্য বিপণন (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল পেশ করেও সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়েছিল সরকার। সিলেক্ট কমিটিতে বাম এবং কংগ্রেস ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ জমা দিয়েছে। কমিটির সেই রিপোর্ট এ দিনই পেশ হয়। কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেছেন, কর্মসংস্থানের জন্য আরও আর্থিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি করতে এবং কৃষি বিকাশের জন্য এই আইনের সংশোধন প্রয়োজন ছিল। এই আইনের মাধ্যমে চুক্তি চাষ কিংবা খুচরো পণ্যে বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা খুলে যাবে বলে বিরোধীরা ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করছেন বলে মন্ত্রীর অভিযোগ। মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর দল এখনও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী। তাঁর মতে, এখন রাজ্যের অধিকাংশ বেসরকারি বাজারের উপরে নিয়ন্ত্রণ আনতেই এই বিল পাশ করা হল। তবে বিলে প্রস্তাবিত বৃহৎ কৃষি বাজারের জমির সংস্থান কী ভাবে হবে বা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা কোনও উৎসাহ দেখিয়েছেন কি না, সে সব বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস মন্ত্রী দেননি।

বিল-বিতর্কে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, কৃষিপণ্য বিপণনে যে বেসরকারি উদ্যোগ উৎসাহ দেখাবে, তারা পণ্যের উৎপাদনও হাতে নিতে চাইবে। সেখান থেকেই চুক্তি চাষের পথ খোলে, অভিজ্ঞতা তেমনই বলছে। এ রাজ্যে ’৭২ সালের কৃষিপণ্য আইন অনুযায়ী, বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করলে ২% লেভি আদায় করতে পারে বাজার কমিটি। এই বিলে সেই ব্যাপারে কিছু বলা নেই। এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করের প্রস্তাব ছিল, আরও মতামত নেওয়া হোক বিলটির উপরে। তাঁর ওই সংশোধনী সমর্থন করে ভোট দেন বাম বিধায়কেরাও। কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা প্রশ্ন তোলেন, এত তাড়াহুড়ো কেন? বিতর্কে অংশ না নিলেও তড়িঘড়ি বিল পাশ করানোকে ‘রহস্যময়’ আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও। আর সূর্যকান্ত মিশ্র পরে বলেন, “বেসরকারি বাজার সব দেশেই থাকে। কিন্তু এখানে যা বন্দোবস্ত করা হল, কৃষকেরাই এক দিন এ সব জ্বালিয়ে দেবেন!”

তবে কৃষি বিপণন দফতরের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রের মডেল আইনের রূপরেখা গত ১১ বছরে না মানায় দিল্লির বিশেষ অনুদানও পায়নি এ রাজ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এ বার নতুন যাত্রা শুরু হল। কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তার কথায়, “এখানকার ফল, সবজি, মাছ ইত্যাদি উৎপাদন করেও যথাযথ দাম পান না চাষিরা। সেই ব্যবস্থা দূর করে বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই এই সংশোধনী। এই আইন কাযর্কর হলে কৃষি ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিযোগ এবং রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনাও প্রবল।” মন্ত্রী অরূপবাবু জানিয়েছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে এ বার থেকে কৃষকদের পণ্য সরাসরি বিপণনকারীর হাতে পৌঁছবে। ফলে, ক্রেতারা কম দামে পণ্য পাবেন।

একই দিনে আরও দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল (অ্যামিটি এবং ইউনির্ভাসিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) বিরোধিতা করেও সভা ত্যাগ করেছেন বিরোধী বিধায়কেরা। সূর্যবাবুর বক্তব্য, “উৎকর্য কেন্দ্র গড়তে চাইলে আলাদা কথা ছিল। কিন্তু সাধারণ শিক্ষায় ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। চিট ফান্ডের মতো ঘটনা ঘটে যায় কি না, দেখা দরকার!” শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ইচ্ছামতো ফি ধার্য করতে না পারে, তার জন্য এক বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE