কোথাও সময়ের আগেই চিকিৎসকেরা ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন রোগীদের! কোথাও আবার ঠিক মতো পরিষেবা তো জোটেইনি, উপরন্তু থাকতে হচ্ছে ফাঁকা ওয়ার্ডে। সেই আতঙ্কে নিজেরাই ছুটি নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াচ্ছেন বহু রোগী। রাজ্য জুড়ে পাঁচ দিন ধরে চলা চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি এখন এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ঠিক মতো পরিষেবা জুটছিল না। তার উপরে ফাঁকা ওয়ার্ডে একা থাকার ‘ভয়’ ধরেছিল হাওড়ার আন্দুলের সৌমি কাঁড়ারের মনেও। আর তাই শনিবার বিকেলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছুটি লিখিয়ে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময়ে ওই তরুণী বললেন, ‘‘ওয়ার্ডে আমি ছাড়া আর মাত্র এক জন ছিলেন। আস্তে আস্তে সকলেই চলে যাচ্ছেন। ফাঁকা ঘরে একা থাকতে রীতিমতো ভয় করছিল। আর কোনও চিকিৎসকই তো কথা শুনছেন না। কিছু বলতে গেলে ওঁরা বলছেন, বাড়ি চলে যাও।’’ চার দিন ভর্তি থাকলেও পাঁচটি ইঞ্জেকশন ছাড়া মেয়ের তেমন কোনও চিকিৎসাই হয়নি বলে অভিযোগ সৌমির বাবা স্বপন ভুঁইয়ার। মেয়েকে নিয়ে ট্যাক্সি ধরার আগে তিনি বললেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরাই তো আসছেন না ঠিক মতো দেখতে। শুধু শুধু ফেলে রেখে কী হবে? তাই নিয়ে যাচ্ছি।’’
ঠিকঠাক চিকিৎসা না পাওয়ায় নাতিকে ছুটি করিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন দারাপাড়ার বাসিন্দা তসলিমা বেগমও। দিন চারেক আগে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল জ্বরে আক্রান্ত সেই এক বছরের শিশু। এ দিন তার ঠাকুরমা বলেন, ‘‘ঠিক মতো তো কেউ দেখছেন না। জ্বর একটু কমতেই তাই ছুটি লিখিয়ে নিলাম।’’ আগের কয়েক দিনের মতো এ দিনও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সব ক’টি গেট বন্ধ ছিল। মূল গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসক ও নিরাপত্তারক্ষীরা। কোনও রোগী এলে আগে তাঁদের কাছে কাগজপত্র দেখাতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা কাগজপত্র দেখে যদি মনে করেন, তবেই রোগী জরুরি বিভাগ পর্যন্ত যেতে পারছেন।