বন্যা নিয়ে কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ নতুন নয়। বামফ্রন্ট সরকারও এই অভিযোগ বার বার তুলেছে। তবে তা হত মূলত আর্থিক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে। এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন ঘিরে সেই অভিযোগ নতুন মাত্রা পেল।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার অসম ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রীদের ফোন করে ওই দুই রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কাছে ফোন আসেনি। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর এ হেন ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি বিস্মিত, স্তম্ভিত! প্রধানমন্ত্রী একটা রাজ্যের বন্যার্ত নাগরিকের খোঁজ নিলেন না! প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে এই আচরণ পরিতাপের বিষয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীও এ দিন টুইটে বলেন, ‘‘দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আগে দক্ষিণবঙ্গে বন্যা হয়েছিল। এখন উত্তরবঙ্গও বিপর্যস্ত। উদ্ধার ও ত্রাণ-কাজের জন্য ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’ রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী এই কয়েকটি কথা টুইট করে আসলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেই এ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি মনে করাতে চেয়েছেন। ক’দিন আগে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লি যান, তখন মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, তিনি আপাতত গুজরাতের বন্যা সামলান। পশ্চিমবঙ্গটা রাজ্য সরকার দেখে নিচ্ছে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য ছিল তাঁর সৌজন্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি যখন যথেষ্ট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তখন তাদের বাদ দিয়ে শুধু এনডিএ-শাসিত অসম ও বিহারের খোঁজ নেওয়া কি প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যের পরিচয়? সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রতিক কালে দু’বার দিল্লি গিয়েও রাজ্যের দুর্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রের সাহায্য চাইলেন না কেন? দলের নেতাদের কেলেঙ্কারির তদন্ত থেকে রক্ষা করাই কি মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল?’’
আরও পড়ুন:রেল-পথে বিচ্ছিন্ন উত্তরবঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব সর্বদা দাবি করেন, কেন্দ্র উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি করে না। তৃণমূলের প্রশ্ন, তা হলে এ রাজ্যে বন্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এমন উদাসীন কী করে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু অবশ্য বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য, যারা বন্যার তথ্য কেন্দ্রে পাঠায়নি। অসম, বিহার ও অন্যান্য রাজ্য তা পাঠিয়েছে।’’ তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে এক বারও যোগাযোগ করেনি। সহযোগিতা চাইলে উভয় তরফেরই উদ্যোগ লাগে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy