Advertisement
E-Paper

দামাল শিশুর দুষ্টুমিতে বিমুখ দুই সাগর, তাই দেরি বর্ষার

যে দেয়, সে-ই যদি মারে, বাঁচায় কে! বাংলায় বর্ষা মানে এক দিকে বঙ্গোপসাগর আর অন্য দিকে আরবসাগরের দাক্ষিণ্য। এ বার কিন্তু সূচনা পর্বেই দানের বদলে মারের পথ ধরেছে ওই দুই সাগর। আর সেই মারের পিছনে আছে ‘এল নিনো’ (সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি)-র উস্কানি। তার কারিকুরিতে দুই পথেই আটকে গিয়েছে মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০৪:২২

যে দেয়, সে-ই যদি মারে, বাঁচায় কে!

বাংলায় বর্ষা মানে এক দিকে বঙ্গোপসাগর আর অন্য দিকে আরবসাগরের দাক্ষিণ্য। এ বার কিন্তু সূচনা পর্বেই দানের বদলে মারের পথ ধরেছে ওই দুই সাগর। আর সেই মারের পিছনে আছে ‘এল নিনো’ (সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি)-র উস্কানি। তার কারিকুরিতে দুই পথেই আটকে গিয়েছে মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা।

দীর্ঘ দহনে অতিষ্ঠ বাংলার ধারাস্নানের আশা তাই প্রবল ধাক্কা খেযেছে। লাগাতার গরম এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে এই মুহূর্তে দরকার ছিল ধুন্ধুমার বর্ষার। নিদেন পক্ষে প্রাক্‌-বর্ষার বৃষ্টিও স্বস্তি দিতে পারত। তার জন্য কলকাতা তাকিয়ে ছিল কেরলের দিকে। কারণ, কেরল দিয়ে বর্ষা বা মৌসুমি বায়ুর যে-শাখাটি ঢোকে, সেটিই ধীরে ধীরে উঠে আসে উপরের দিকে। কেরলের উপরে অনেকাংশেই নির্ভর করে বাংলার বৃষ্টিভাগ্য।

আক্ষরিক অর্থেই দু’হাত ভরে পশ্চিমবঙ্গকে বৃষ্টি দেয় আরবসাগর আর বঙ্গোপসাগর। আরবসাগর থেকে জেগে উঠে মৌসুমি বায়ুর কেরল শাখা ওই রাজ্য দিয়ে ভারতভূমিতে ঢুকে চলে আসে এ রাজ্যে। সেটা বর্ষার কেরল-বাহু বা কেরল-পথ। আবার বঙ্গোপসাগর দিয়ে বাংলায় বৃষ্টি আনে মৌসুমি বায়ুর দক্ষিণ বাহু। সেটা বর্ষার আন্দামান-পথ।

এল নিনো বা দামাল শিশুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়তে থাকায় সেই প্রাকৃতিক বিরূপতার জোরদার ধাক্কা লেগেছে আরবসাগরে। ফলে দুর্বল হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। আর নির্দিষ্ট সময়ে মায়নমারে পৌঁছেও বর্ষা সেখানে আটকে গিয়েছে। তার মূলে আছে বঙ্গোপসাগরের প্রতিকূল বায়ুপ্রবাহ। এবং সেই প্রতিকূলতার জন্যও দায়ী এল নিনো। দুইয়ে মিলিয়ে বাংলায় বর্ষা সমাগমের জোড়া সমুদ্রপথেই আপাতত কাঁটা!

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

অথচ এ বার আরবসাগরে বর্ষার বায়ুপ্রবাহ সক্রিয় হওয়ার সময়েই অর্থাৎ দিন দশেক আগে থেকেই দিল্লির মৌসম ভবন বলতে শুরু করে দিয়েছিল, কেরলে মৌসুমি বায়ু ঢুকবে নির্দিষ্ট সময়ের কিছূটা আগে। এমনিতে দক্ষিণের ওই রাজ্যে
বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুন। আরবসাগরের বায়ুপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে মৌসম ভবন জানিয়েছিল, ৩০-৩১ মে নাগাদ কেরলে পদচিহ্ন পড়বে বর্ষার। কিন্তু রবিবার তারা জানাল, সেই পূর্বাভাস মিলছে না। এমনকী ১ জুন (আজ, সোমবার), নির্ধারিত দিনেও বর্ষার দেখা পাবে না কেরল। কবে আসবে, সেই বিষয়েও ধন্দ রয়ে গিয়েছে। এক আবহবিদের মন্তব্য, ‘‘অন্তত দিন তিনেকের মধ্যে কেরলে বর্ষা ঢোকার তেমন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।’’

কোনও অঞ্চলে বর্ষার আগমনের দিন দুয়েক আগে থেকে সেখানে বড় এলাকা জুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়। সেটাকে বলা হয় প্রাক্‌-বর্ষার বৃষ্টি। এ দিন কেরলের তিরুঅনন্তপুরম-সহ কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে ঠিকই। সেই বৃষ্টিকে কিন্তু প্রাক্‌-বর্ষার বৃষ্টি বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রাক্‌-বর্ষার বৃষ্টির নির্দিষ্ট একটা ছন্দ রয়েছে। কেরলের কিছু এলাকায় এ দিন যে-বৃষ্টি হয়েছে, তার ছন্দটা প্রাক্‌-বর্ষার বৃষ্টির চেনা ছন্দের সঙ্গে মিলছে না মোটেই।

কী এমন হল যে, কেরলে বর্ষা ঢোকার দিনটা এ ভাবে পিছিয়ে গেল?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা জানাচ্ছেন, ২০১৫টা আসলে ‘এল নিনো’ বছর। অর্থাৎ এই বছর প্রশান্ত মহাসাগরে জলের উষ্ণতা বেশি। ওই নিনোর ফলেই দুর্বল হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। সুগতবাবুর মতে, এল নিনোর প্রভাব থাকবে গোটা জুন মাস জুড়েই। তার ফলে জুনে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্ষা জোরালো হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। অনেক আবহবিদ বলছেন, জুনের ঘাটতি পোষাতে জুলাই-অগস্টে বেশি বৃষ্টি হতে হবে।

এ বার এল নিনো যে শক্তিশালী হয়ে উঠবে, সেটা তো আগে থেকেই জানা। তা হলে সেই অনুযায়ী পূর্বাভাস দেওয়া গেল না কেন?

মৌসম ভবনের এক আবহবিদ বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, কেরলে বর্ষা ঢুকে পড়ার পরেই এল নিনো শক্তিশালী হবে। কিন্তু সেই হিসেব মেলেনি। আগেই সক্রিয় হয়ে গিয়েছে এল নিনো।’’ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, এখন সারা দেশেরই বর্ষাভাগ্য নির্ভর করবে এল নিনোর মতিগতির উপরে।

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কেরলে বর্ষা ঢুকলেও কত সে দিনে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আবহবিদেরা। কেরল থেকে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষাকে দ্রুত পৌঁছে দিতে চালিকা শক্তির কাজটা করে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। সেই নিম্নচাপ তৈরিরও কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বঙ্গোপসাগরে।

আরবসাগর হয়ে কেরল-পথ ছাড়াও বর্ষার অন্য যে-পথ রয়েছে, সেটি আন্দামান-পথ। সেই পথে আন্দামান-মায়ানমার হয়ে বর্ষা পৌঁছয় উত্তর-পূর্ব ভারতে। আশা জাগিয়ে শুরু করলেও সেই পথে বর্ষা ফের আটকে গিয়েছে মায়ানমারে। ন’দিন ধরে একই জায়গায় আটকে আছে সে। এবং তার জন্যও দায়ী বঙ্গোপসাগরের প্রতিকূল বায়ুপ্রবাহ।

আরবসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের জোড়া বাধা পেরিয়ে ঠিক কবে ছন্দে ফিরবে মৌসুমি বায়ু?

আগ বাড়িয়ে আর কিছু বলার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না আবহবিদেরা।

monsoon El Nino culprit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy