সকাল থেকেই নির্বাচনের মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তির খবর পাচ্ছিলাম। দুপুরে অফিসে এসে জানতে পারলাম, আলিপুর প্রশাসনিক ভবনে খবর সংগ্রহ করতে ঢুকে ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছেন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের এক মহিলা সাংবাদিক। এর পরে অফিসের নির্দেশে আমিও সওয়া দু’টো নাগাদ সেখানে পৌঁছে দেখি প্রশাসনিক ভবনের মূল গেটের বাইরে প্রচুর সাংবাদিক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁরা জানান, ভিতরে তাঁদের কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বহিরাগতরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
অথচ প্রশাসনিক ভবনের উল্টো দিকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, অনেকেই কিন্তু মূল গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন। প্রশ্ন জাগল, আলিপুর প্রশাসনিক ভবনে কি ১৪৪ ধারা চলছে! যদি তা-ই হয়, তা হলে কিছু মানুষ ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন কী ভাবে? কৌতূহলের বশে প্রশাসনিক ভবনের মূল গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই বেশ অবাক হলাম। দেখলাম, যে বিল্ডিংয়ে মনোনয়ন জমা হচ্ছে, তার সামনে ষণ্ডামার্কা যুবক ও মহিলাদের ভিড়। কেউ ভিতরে ঢুকতে গেলেই ওই যুবকেরা তেড়ে আসছে। যদিও ঢিল-ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে পুলিশের গাড়ি। কিছুটা দূর থেকেই সব দেখছিলাম। স্মার্টফোন দিয়ে একটা ছবি তুলতেই কয়েক জন যুবক জিজ্ঞাসা করল, ‘কী ছবি তুললি রে?’
উত্তর দেওয়ার আগেই ওরা জনা কুড়ি যুবক আমার জামার কলার ধরে একটা গলির দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। আমি চেঁচালেও কেউ এগিয়ে এলেন না। প্রাণের দায়ে বারবার বলতে থাকলাম, ‘সবে ঝাড়খণ্ড থেকে বদলি হয়ে এসেছি। তাই আপনাদের নিয়মকানুন জানি না। ভুল করে একটা ছবি তুলে ফেলেছি। ছেড়ে দিন।’ কিন্তু ওরা এলোপাথাড়ি চড়, ঘুসি মারতে থাকল আমার পেটে, বুকে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি, পড়ে যাচ্ছি, তাও রেহাই না দিয়ে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের পিছনের মাঠে টেনে নিয়ে গিয়ে ওরা বলল, ‘সব ডিলিট কর।’ ওরাই মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করল।