চব্বিশ ঘণ্টাও পেরোল না। হুগলিতে এক ‘লড়াই’ জিতে উঠে ফের এক ‘লড়াই’ সামাল দিতে নেমে পড়ল শাসক দল!
এই জেলায় ভোটে বিরোধীদের ঠেকানো খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না তৃণমূলের সামনে। মনোনয়নপর্বের সময় থেকে নেতারা জেরবার হচ্ছিলেন প্রার্থী দেওয়া নিয়ে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে। ঠেকানো যায়নি গোষ্ঠী-সংঘর্ষ। ‘নির্দল কাঁটা’ থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পেরেছে তৃণমূল। এ বার পদ বিলি নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষা। কে হবেন প্রধান, কে উপপ্রধান, সঞ্চালকই বা কে? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বা কর্মাধ্যক্ষ নিয়েও থাকছে একই প্রশ্ন। শুক্রবার থেকেই নানা গোষ্ঠীর নেতারা নিজেদের মতো করে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে তদ্বির শুরু করে দিয়েছেন।
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তবে, তাঁর দাবি, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশে যোগ্য এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে প্রধান বা দলনেতা করা হবে। এবং তা বিচার করবেন স্থানীয় মানুষ। কোথাও কাউকে প্রধান হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হলে দল তা মানবে না।”
তপনবাবু এ কথা বললেও পরিস্থিতি যে জটিল, মানছেন জেলা নেতৃত্বেরই একটি বড় অংশ। এ নিয়ে ফের এক দফা সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। দলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট পদগুলির দাবিদার অন্তত ২-৪
জন। এর মধ্যে আবার পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে সভাপতি পদের দাবি নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব জটিল আকার নিচ্ছে। এক গোষ্ঠী পদের দাবিদারের নাম পাঠালে অন্য গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের ফিরিস্তি পাঠানো শুরু করে দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে।
মনোনয়নপর্বে তবু অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে অনেক ক্ষেত্রে দলের যুযুধান গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে দেন নেতারা। যেমন, গোঘাটের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতে ১১টি আসনের মধ্যে পাঁচটি দেওয়া হয় চঞ্চল রায় গোষ্ঠীকে। আরও পাঁচটি মোহন মণ্ডল গোষ্ঠীকে, একটি শেখ মোজাম্মেল গোষ্ঠীকে। শ্যামবাজার পঞ্চায়েতের ১২টি আসন অর্ধেক করে ভাগ করে দেওয়া হয় দুই অঞ্চল নেতা সাহাবুদ্দিন এবং অরুণ পালের মধ্যে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। কিন্তু এ বার ওই সব গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের প্রার্থীকেই পদ দেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করে দিয়েছেন।
জেলা স্তরের এক তৃণমূল নেতা স্বীকার করেছেন, অনেক জয়ী প্রার্থী পদ না-পেয়ে ক্ষোভে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জেতা পঞ্চায়েত হাতছাড়া হবে, এই আশঙ্কাও রয়েছে। সিঙ্গুরেই বড়া পঞ্চায়েতে ১৮টি আসনের মধ্যে শাসক দল পেয়েছে ৯টি। বিজেপি ৮টি, সিপিএম ১টি। বাসুবাটি পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল সাতটি, বিজেপি চারটি এবং নির্দল দু’টি। বিরোধীরা শাসকের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, এমন পঞ্চায়েত আরও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পদ না-পাওয়া ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা ঘুরিয়ে দিতে পারেন পঞ্চায়েতের সমীকরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy