Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
গোঁজ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ তৃণমূলের

নির্দল প্রার্থীর প্রচারে প্রধান ভরসা মমতাই

মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই ভোট চেয়ে কেউ লিফলেট ছড়াচ্ছেন। কেউ বা বাড়ি গিয়ে বলছেন, ‘আমিই দিদির অনুগামী। আমাকে ভোট দিন।’ একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, নির্দল প্রার্থী হয়েও তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর নানা প্রকল্পের কথা বলে ভোট-প্রচার করছেন।

শনিবার জামালপুরে তৃণমূলের র‌্যালি। রয়েছেন অরূপ বিশ্বাস, স্বপন দেবনাথ-সহ অন্য নেতারা।

শনিবার জামালপুরে তৃণমূলের র‌্যালি। রয়েছেন অরূপ বিশ্বাস, স্বপন দেবনাথ-সহ অন্য নেতারা।

সৌমেন দত্ত
ভাতার শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

নির্দলদের ভরসাও তিনি! তিনি অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই ভোট চেয়ে কেউ লিফলেট ছড়াচ্ছেন। কেউ বা বাড়ি গিয়ে বলছেন, ‘আমিই দিদির অনুগামী। আমাকে ভোট দিন।’ একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, নির্দল প্রার্থী হয়েও তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর নানা প্রকল্পের কথা বলে ভোট-প্রচার করছেন। নির্দল-প্রচারের এমন দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে ভাতার ও মেমারিতে।

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভোটের নামগন্ধ নেই। তবুও যে টুকু রয়েছে, সে সব জায়গার একাংশে তৃণমূলের লড়াই দলেরই ‘নির্দল’-দের সঙ্গে, বলছেন শাসক দলের কর্মীরাই। সেই নির্দলদের ভোট চাওয়ার বড় ভরসা মুখ্যমন্ত্রীই। তাই, বেশ কয়েক জন নির্দল প্রার্থীর প্রচারে দেখা যাচ্ছে, ‘মমতা ব্যানার্জী জিন্দাবাদ’ বা ‘তৃণমূল সরকার, মা-মাটি-মানুষ জিন্দবাদ’!

কিন্তু কেন এমনটা? ভাতারের আমারুণ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগরে নির্দল প্রার্থী সেলিম শেখ ‘বাল্ব’ চিহ্নে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূল। কিন্তু ওই নির্দল প্রার্থীর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই আমরা তৃণমূল করি। আমি দীর্ঘদিন পঞ্চায়েত সদস্য। অথচ এ বার আমাকে প্রার্থী করা হল না। এলাকার মানুষের চাপে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। দিদির নামেই ভোটে নেমেছি।” লাগোয়া এলাকায় নির্দল প্রার্থী সাহেনা বেগমের প্রচারপত্রে লেখা, ‘তৃণমূল সরকার জিন্দাবাদ’। তাঁরও কথায়, “কয়েকজন মানুষের জন্য তো আর দিদির হাত ছাড়ছি না। জিতলে তো তৃণমূলেরই থাকব।”

ওই নির্দল প্রার্থীদের বেশির ভাগেরই সাহেনার মতোই দাবি, তাঁরা তৃণমূল। কিন্তু তাঁরা ক্ষুব্ধ দলের ব্লক স্তরের নেতৃত্বের ভূমিকায়। তাঁদেরই কয়েক জনের অভিযোগ, “দলের ব্লক স্তরের নেতারা কোনও বাছবিচার না করে ইচ্ছেমতো প্রার্থিপদ দিয়েছেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন লোকেরাও টিকিট পেয়েছেন। অথচ, গতবারের প্রার্থীরা দলের প্রতীক পাননি।”

নির্দল প্রার্থীর প্রচারপত্র। নিজস্ব চিত্র

মেমারির কুচুট, বোহার ২, বিজুর ২-সহ বেশ কিছু পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। ওই এলাকার জেলার পরিষদের ১৮ নম্বর আসনেও নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। ওই সব নির্দল প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থিত নির্দল’ বলে প্রচার করছেন। জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী সুনীল টুডুর দাবি, “আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নেমেছি। লড়াইয়ের অপর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেস। তাই ভোট-প্রচারে দলনেত্রীকে স্মরণ করছি।”

নির্দল প্রার্থীদের এমন প্রচারে খানিকটা হলেও যে শাসক দল ফাঁপরে পড়েছেন, তা মানছেন তৃণমূল কর্মীরাই। সম্প্রতি জেলা পরিষদের প্রার্থী বাপি হাঁসদা, মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সদস্য সান্ত্বনা রায়, কুচুট গ্রামের বিদায়ী উপপ্রধান প্রসাদি মণ্ডলেরা দলের পর্যবেক্ষক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে লিখিত ভাবে জানান, ‘ওই সব নির্দল প্রার্থীরা নিজেদের তৃণমূল বলে প্রচার চালাচ্ছেন। এতে ভোটারেরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’

তবে অন্যরকম ছবিও রয়েছে। যেমন, ভাতারের আমারুণ গ্রামের নারায়ণ পণ্ডিত। গত বার পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের হয়ে জিতেছিলেন তিনি। সিপিএমের বিরুদ্ধে তিনি টানা ন’বার প্রার্থী ছিলেন। তিনি এ বার তৃণমূলের টিকিট পাননি, কিন্তু প্রতীক পাবেন ভেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বলে জানান নারায়ণবাবু। মনোনয়ন প্রত্যাহারও করা হয়নি। কিন্তু ‘নির্দল’ নারায়ণবাবুও ভোট-প্রচারে তৃণমূলের দলীয় পতাকা কাঁধে কয়েকজন অনুগামীদের নিয়ে প্রচার করছেন। কেন এমনটা? প্রৌঢ় মানুষটির কথায়, “দিদি হারবেন, এটা তো মানতে পারব না। তাই দলের (তৃণমূল) পতাকা নিয়েই প্রচারে নেমেছি।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে এই বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা বলে বলেন, ‘‘নির্দল হয়েও অনেকেই দলের পতাকা কাঁধে নিয়ে প্রচার করছেন। ভোটের আগেই বাকিরাও দলের স্রোতেই ফিরবেন। কারণ সবার উপরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE