সহায়: নির্দল প্রার্থীর ফেসবুক প্রোফাইলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি দলের সহায়, নির্দলেরও!
গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মনে রাখবেন সব আসনে আমিই প্রার্থী’। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এমন কোনও ঘোষণা এখনও হয়নি। তবে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের দলীয় প্রার্থীরা তো বটেই, যে সব বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে লড়ছেন তাঁরাও ভরসা রাখছেন ‘সততার প্রতীক’ মমতাতেই। ভোটের মুখে তাই প্রার্থীদের ফেসবুক প্রোফাইলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের হিড়িক পড়ছে। কেউ নিজের ছবি বদলে নেত্রীর ছবিকে প্রোফাইলে দিয়েছেন, কেউ আবার নিজের ছবির সঙ্গে মমতার ছবি সুপার ইম্পোজ় করে জুড়ে ফেসবুকের প্রোফাইল বা কভার ছবি করেছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের কয়েকজন নির্দল প্রার্থী সম্প্রতি ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি বদলে মমতার ছবি দিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম সাবরার নেতা পঞ্চায়েত সমিতির বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী ইফতেকার আলি। দলীয় প্রার্থী না হয়েও কেন নেত্রীর ছবি ব্যবহার করছেন? ইফতেকারের জবাব, “ব্লকের কিছু তৃণমূল নেতা দুর্নীতিতে জড়িতদের প্রার্থী করেছেন। প্রতিবাদে আমরা নির্দল হিসেবে লড়ছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তাই সততার প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ফেসবুকে দিয়েছি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘নির্দলরা সকলেই লিফলেট ছ়ড়িয়ে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করবেন। তার পরেও যদি কেউ লড়েন ও নেত্রীর ছবি ব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
নির্বাচনী প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়া এখন জনপ্রিয়। পঞ্চায়েত ভোটে গাঁ-গঞ্জের প্রার্থীদেরও হাতিয়ার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ। সেই সূত্রেই ঘাসফুলের বহু প্রার্থী ব্যবহার করছেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী কল্পনা শিট কয়েক দিনে বেশ কয়েক বার ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি বদলেছেন। কখনও শুধু মমতার ছবি, কখনও নিজের সঙ্গে নেত্রীর ছবি। কল্পনা বলছেন, “দিদি বাংলার মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছেন, তা আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। তাই দিদির ছবি দিয়েছি।” ঘাটালের কৈজুরির পঞ্চায়েত সমিতির প্রবীণ প্রার্থী কাশীনাথ মণ্ডলের ফেসবুকের প্রোফাইলেও মমতার ছবি। কাশীনাথবাবুর ছেলে তৃণমূলের যুব নেতা সুমন মণ্ডল বলছেন, “বাবা ফেসবুকে সড়গড় নন। আমরাই ওই ছবি দিয়েছি। এটা তো সত্যি যে দলে নেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা সবার উপরে।” এই গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নেই বিঁধছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের দলীয় বা নির্দল বেশির ভাগ প্রার্থীই দুর্নীতিতে জড়িত। তাই মমতার মুখ দেখিয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলে যে নিজেকে নেত্রীর যত কাছাকাছি প্রমাণ করতে পারবে, তারই তো উন্নতি। তাই মমতার ছবি ব্যবহারের হিড়িক।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি পাল্টা বিঁধছেন, ‘‘যারা প্রার্থী পায় না, আমাদের দলীয় বা নির্দল প্রার্থী নিয়ে তাদের কথা কেন শুনব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy