Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
State News

অতীতের শিক্ষা থেকে অশান্তিতে না এথোড়ার

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে অশান্তির মাঝে এ দৃশ্য পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের এথোড়া পঞ্চায়েতের। মনোনয়ন পর্বে সালানপুরের নানা এলাকায় হামলা-হুমকির অভিযোগ উঠেছে।

মিলেমিশে: এক দেওয়ালে নানা দলের লিখন। সালানপুরের এথোড়ায়। ছবি:পাপন চৌধুরী

মিলেমিশে: এক দেওয়ালে নানা দলের লিখন। সালানপুরের এথোড়ায়। ছবি:পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
সালানপুর শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

ভোটের প্রচার চলছে। তবে চোখরাঙানির নালিশ নেই। পঞ্চায়েতের সব আসনে রয়েছেন নানা তরফের প্রার্থী। মনোনয়ন জমায় বাধা বা প্রত্যাহারের জন্য চাপের অভিযোগ ওঠেনি। লিখন রয়েছে নানা দলের। কিন্তু দেওয়াল দখলের জন্য গোলমাল বাধেনি।

পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে অশান্তির মাঝে এ দৃশ্য পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের এথোড়া পঞ্চায়েতের। মনোনয়ন পর্বে সালানপুরের নানা এলাকায় হামলা-হুমকির অভিযোগ উঠেছে। ব্লকে জেলা পরিষদের দু’টি আসনে লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতির ২৩টি আসনের মধ্যে ১২টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল। ১১টি পঞ্চায়েতের ছ’টিতে লড়াই নেই। তবে এথোড়ায় অন্য চিত্র। গোলমাল নয়, বরং ভোট যেন উৎসব— বলছেন নানা দলের প্রার্থীরাই।

এই আবহের পিছনে অবশ্য রয়েছে এক অশান্তির অতীত। ১৯৬৯ সালের ৫ জুলাই গ্রামে কংগ্রেস-সিপিএম গোলমাল হয়। খুন হন গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা কংগ্রেস নেতা সত্যেন্দ্র সিংহ ও ছাত্র পরিষদ নেতা ভবানী শর্মা। অশান্তি ছড়ানোয় গ্রাম ছাড়েন অনেক বাসিন্দাই। পরে গ্রামে ফিরে সবাই মিলে ঠিক করেন, এমন ঘটনা যেন আর না হয়। ভবানীবাবুর ভাই বাণীপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘সেই সময়টা ভুলিনি। কিন্তু সন্ত্রাস-পাল্টা সন্ত্রাসের বদলে ভ্রাতৃত্বে জোর দিয়েছি।’’

গ্রামের ধর্মরাজ মন্দিরের কাছে দেওয়াল লিখছিলেন বিজেপি প্রার্থী রুনা কর্মকার ও তাঁর সঙ্গীরা। রুনাদেবী বলেন, ‘‘তৃণমূল কিছু দেওয়ালে লিখেছে। কিছু আমাদের জন্য ছেড়ে রেখেছে। কোথাও বিবাদ নেই।’’ সিপিএম প্রার্থী ববিতা মুদির স্বামী হিরু মুদি বলেন, ‘‘আমরা নানা দলের লোক। কিন্তু এক সঙ্গে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছি।’’ কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এখানে মিলেমিশে ভোটই পরম্পরা।’’ কথা বলার ফাঁকেই তাঁর কুশল জানতে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্রীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘কয়েক দিনের ভোটের জন্য এতদিনের সম্পর্ক নষ্ট করা অর্থহীন।’’

পাঁচ আসনের পঞ্চায়েতে কখনও কংগ্রেস, কখনও সিপিএম বোর্ড গড়েছে। গত বার বাম ও কংগ্রেস দু’টি করে ও তৃণমূল একটি আসনে জেতে। বামেদের সমর্থনে বোর্ড গড়ে কংগ্রেস। পরে কংগ্রেস সদস্যেরা দলে যোগ দেওয়ায় তৃণমূল পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আসে।

আসানসোলের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, এই পরম্পরা বাম আমলেই শুরু হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘এথোড়ায় এখনও সে পরম্পরা বজায় আছে জেনে ভাল লাগছে।’’ বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের ক্ষোভ, ‘‘এমন রাজনৈতিক সৌজন্যই আদর্শ। তবে এখন শাসক দলের কাছে তা পাওয়াই যায় না!’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা এমন গণতান্ত্রিক পরিবেশেই বিশ্বাস রাখি। বিরোধীদের সন্ত্রাসের অভিযোগ যে মিথ্যা, এথোড়ার বাতাবরণই তার প্রমাণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE