Advertisement
০১ মে ২০২৪

ভোট কোন পথে, বলবে কি আদালত

২০০৩ সালের পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী মনোনয়নের দিন বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। সেই ধারা প্রয়োগ করেই সোমবার রাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ জানিয়েছিলেন, বাধার মুখে অনেক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।

নির্বাচন নিয়ে আজ শুনানি আদালতে।

নির্বাচন নিয়ে আজ শুনানি আদালতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:০৮
Share: Save:

কথা ছিল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে আবার শুরু হবে মনোনয়ন। কিন্তু তা শুরুর মুখেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার তাঁর নিজেরই সেই নির্দেশ খারিজ করে জানিয়ে দিলেন মনোনয়নের দিন আর বাড়ছে না। তা নিয়েই দিনভর তপ্ত থাকল পঞ্চায়েত-রাজনীতি। আঁচ গড়াল আদালতেও।

২০০৩ সালের পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী মনোনয়নের দিন বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। সেই ধারা প্রয়োগ করেই সোমবার রাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ জানিয়েছিলেন, বাধার মুখে অনেক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। তাঁদের সুযোগ দিতেই মঙ্গলবারও মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। এই নির্দেশ জারির সময় কমিশনার সুপ্রিম কোর্টের আদেশকেই ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন। কিন্তু ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ডিগবাজি খেয়ে সেই কমিশনারই জানিয়ে দেন, মনোনয়নের সময় বাড়ছে না কারণ, বিডিও অফিস থেকে এসডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করার সঙ্গেই দিন বাড়ানোর কথা জানাতে হত। রাজ্য সরকার সেই তথ্য কমিশনের সামনে এনেছে। তা ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দেওয়া স্মারকলিপিতে সর্বোচ্চ আদালতের এ নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ না থাকার কথাও কমিশনারকে জানায়। সে সব মেনেই কমিশনার তাঁর পুরনো নির্দেশ ফিরিয়ে নেয়।

এর পরেই আদালতে ছোটে বিজেপি। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার কমিশনের সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। প্রথমে মনোনয়নের দিন বাড়ানোর পর তা আবার ফিরিয়ে নিয়েছিলেন কমিশনার। আদালত সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে কি মনোনয়নের দিনক্ষণ আবার বাড়বে। কিন্তু কমিশনের দাবি, সময় বাড়িয়ে ১০ এপ্রিল বেলা ৩টে পর্যন্ত করা হয়েছিল। আদালতের স্থগিতাদেশ তারা হাতে পেয়েছে সেই সময়ের পরে। ফলে দিন বাড়ানোর আর কোনও প্রশ্নই নেই। এখন আদালত নতুন করে কিছু না বললে নির্বাচন পুরনো নির্ঘণ্ট মেনেই হবে। আজ, বুধবার সকাল ১১টা থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পত্রের স্ক্রুটিনির কাজ শুরু হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন:
নগ্ন করে নিগ্রহ চিত্র-সাংবাদিককে

১২ ঘণ্টাতেই ডিগবাজি

আজ, বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য বিজেপি। আইনজীবী কবীরশঙ্কর বসু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে জানান, সোমবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন পেশের মেয়াদ বাড়িয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের থেকে চিঠি আসার পর কীসের ভিত্তিতে সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিতে পারে কমিশন? আজ, এই নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা।

বসে নেই দলগুলিও। আজ সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশনের সামনে দলগুলি বিক্ষোভ ও ধর্না চালাবে। সিপিএম স্থির করেছে, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি না বদলালে আগামী ১৪ ও ১৫ এপ্রিল বাদে প্রতিদিনই কমিশনের সামনে ধর্নায় বসবে তারা। স্ক্রুটিনি চলাকালীন নানা অজুহাতে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হলে বা প্রত্যাহারে চাপ বাড়াতে থাকলে বাংলা বন্‌ধও ডাকা হতে পারে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘‘তৃণমূল পুলিশ, প্রশাসনের সাহায্যে রাজ্যে গণতন্ত্র-হত্যার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা দেশেই এ পরিস্থিতি নজিরবিহীন।’’ শাসক দল কমিশনারের উপর ‘চাপ’ সৃষ্টি করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে বলে যে অভিযোগ উঠছে, সে প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘গণতন্ত্র হত্যা করতেই চার মন্ত্রী কমিশনারের বাড়ি গিয়ে তাঁর চোদ্দো পুরুষ উদ্ধার করে দিয়েছেন। খালি উত্তম-মধ্যম দিতে বাকি রেখেছেন। তার চাপেই কমিশনারের এই সিদ্ধান্ত।’’ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর হস্তক্ষেপ দাবি করে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘যেন অন্ধা নগরী, চৌপাট রাজার দেশে বাস করছি আমরা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE