Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

সরকার বলল, মেনে নিল কমিশন, ১৪ মে এক দিনে ভোট, গণনা ১৭-য়

এক দফায় ভোট হওয়ার অর্থ, পুলিশের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) মেনে চললে, ৫৮ হাজারের মধ্যে মাত্র ২৩ হাজার বুথে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:১৪
Share: Save:

রাজ্য সরকারের সুপারিশ মেনে এক দফাতেই হচ্ছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট। বৃহস্পতিবারই কমিশনকে ফ্যাক্স বার্তা পাঠায় সরকার। ১৪ মে এক দিনে ভোট করার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাতে। এর আগে এক দফায় ভোটের প্রস্তাবে সায় না থাকলেও, শেষ পর্যন্ত সেই সুপারিশই মেনে নিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

১৪ মে ভোটের পর, রাজ্য সরকার ১৬ তারিখ গণনা চেয়েছিল। কমিশন তার পরদিন অর্থাত্ ১৭ মে গণনার দিন স্থির করে রেখেছে। মাঝে ১৬ মে প্রয়োজন মতো পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।

এক দফায় ভোট হলে কী করে বুথে বুথে নিরাপত্তার ব্যবস্থা হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। ৫৮ হাজার ৪৬৭টি বুথে ভোট নেওয়া হবে। রাজ্য সরকার সশস্ত্র ও লাঠিধারী পুলিশ মিলিয়ে ৫৮ হাজারের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে কমিশনকে আগেই জানিয়েছে। এই অবস্থায় কী ভাবে এক দফায় ভোট মেনে নিচ্ছে কমিশন, সেই প্রশ্নও তুলছে সব বিরোধী দল। বিষয়টি আদালতের গোচরে আনা হবে বলেও জানিয়েছেন সিপিএম নেতা এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

এক দফায় ভোট হওয়ার অর্থ, পুলিশের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) মেনে চললে, মাত্র ২৩ হাজার বুথে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব। এসওপি অনুযায়ী, ভোটের সময় কোনও বুথে এক জন সশস্ত্র পুলিশ রাখা যাবে না। রাখলে অন্তত দু’জন রাখতে হবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আগেই কমিশনকে জানানো হয়েছে, তারা ৪৬ হাজার সশস্ত্র এবং ১২ হাজার লাঠিধারী পুলিশ কর্মী দিতে পারবে। সেই হিসেবে ২৩ হাজার বুথের বেশি সশস্ত্র পুলিশ দেওয়া যাবে না। তবে এসওপি ভেঙে বুথ প্রতি এক জন করে সশস্ত্র পুলিশ দেওয়া হলেও, ৪৬ হাজার বুথে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। বাকি ১২ হাজার বুথে শুধু এক জন করে লাঠিধারী পুলিশ থাকবে।

নির্বাচনী নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখবে। আমরা সরকারের থেকে এ ব্যাপারে আশ্বাসও পেয়েছি।” এক দিনে ভোট করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নেওয়া হবে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে কমিশন সচিব বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনও কথা হয়নি।”

এর আগে ১, ৩, ৫ মে তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছিল কমিশন। কিন্তু মনোনয়ন প্রক্রিয়া ঘিরে মামলার জেরে, হাইকোর্টের নির্দেশ মতো পুরোন নির্ঘণ্ট বাতিল হয়ে যায়। নতুন করে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে বলা হয় কমিশনকে। হাইকোর্টের নির্দেশ মতো অতিরিক্ত এক দিন মনোনয়নও নিতে হয় কমিশনকে।

নতুন করে শুরু হওয়া ভোট প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। রাজ্য সরকারের সঙ্গেও কথা শুরু হয়। রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রথম থেকেই রমজান মাসের আগে ভোট শেষ করে দেওয়ার পক্ষে মত জানায়। ১৬ মে শুরু হতে পারে রমজান। রাজ্যের পক্ষ থেকে কমিশনকে বলা হয়, রমজানের কথা মাথায় রেখেই এক দফায় ভোট শেষ করতে। কিন্তু প্রথমে তাতে রাজি ছিল না কমিশন। এক দফায় ভোট হলে বুথে বুথে নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা সম্ভব নয় বলেই, অন্তত দু’দফায় ভোট চাইছিল কমিশন।

বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে ফ্যাক্সবার্তায় কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাব আসে। তাতে ১৪ মে এক দফায় ভোট করার সুপারিশ করা হয়। শেষ পর্যন্ত সরকারের প্রস্তাবই মেনে নিল কমিশন। কমিশনের যুক্তি, গোটা প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে যাওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত। নির্বাচন কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, “আমরা তো প্রথমে তিন দফায় ভোটের ব্যবস্থা করেছিলাম। সে সময় বর্ষাকাল বা রমজান বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু এখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই এক দফাতেই ভোট করতে হচ্ছে।”

কমিশনের পক্ষ থেকে এ দিন জানানো হয়েছে, ভোটের জন্য প্রতি দু’টি ব্লক পিছু এক জন করে পর্যবেক্ষক এবং প্রত্যেক জেলায় এক জন করে বিশেষ পর্যবেক্ষক রাখা হচ্ছে।

ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী সংখ্যাও এ দিন জানিয়েছে কমিশন। জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪০৮। পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ২৭ হাজার ১০ জন। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ৪৮ হাজার ৬৫০। প্রার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ২২ হাজার ৫৮৭।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE