Advertisement
E-Paper

দলের নেতাদের উপরে ভরসা নিহতের বাবার

কিছুক্ষণ আগেই খবর পেয়েছেন ছেলে যে প্রার্থীর হয়ে ভোট করাতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন, সেই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন।

দীক্ষা ভুঁইয়া 

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:৩৮
পায়ে-পায়ে: ভাঙড়ের মাছিভাঙায় মিছিল করলেন অলীক। ছবি: সামসুল হুদা

পায়ে-পায়ে: ভাঙড়ের মাছিভাঙায় মিছিল করলেন অলীক। ছবি: সামসুল হুদা

বিকেলের নমাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন বছর সত্তরের বৃদ্ধ খাজাবক্স আলি। কুলতলির মেরিগঞ্জ ওয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের খুন হওয়া সক্রিয় তৃণমূলকর্মী আরিফ আলি গাজির বাবা।

কিছুক্ষণ আগেই খবর পেয়েছেন ছেলে যে প্রার্থীর হয়ে ভোট করাতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন, সেই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন।

আর সেই খবরে কোথাও যেন চোখে-মুখে একটা সান্ত্বনা— ছেলে যে ভোটের জন্য প্রাণ দিয়েছে, সেই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী রইচ আলি মোল্লা ভোটে জিতেছেন। এই কেন্দ্র ছিনিয়ে নিতেই তো আততায়ীরা তাঁর ছেলের বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে ভোট বানচাল করতে চেয়েছিল!

কমিশনের নির্দেশে এই কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচন হয়েছিল বুধবার। ছেলে খুন হলেও ভোট দিতে গিয়েছিলেন আরিফের স্ত্রী জরিনা, তাঁর বাবা খাজাবক্স আলি। বৃহস্পতিবার সকালে জামতলা ভগবানচন্দ্রপুর হাইস্কুলে ভোটের গণনা শুরু হতেই এই কেন্দ্রের প্রার্থী ও আরিফের সঙ্গীদের নজর ছিল দেখার মতো। গত বারেও এই কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাতে ছিল। কিন্তু ভোটের দিন হঠাৎ করে আরিফ খুন হতেই সকলের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। একটাই অভিযোগ ছিল, বিরোধী সিপিএম এবং এসইউসিআই মিলে ভোট বানচাল করতে এই বোমবাজি করেছিল এবং তারাই আরিফকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। ফলে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয় কোথাও যেন আরিফের জয় বলে মানছেন তাঁর পরিবার, বিশেষ করে বাবা খাজাবক্স আলি।

বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই গ্রামে তৃণমূলপ্রার্থীর জেতার খবর আসতে শুরু করে। জেতার আনন্দে কেউ কেউ আবিরও খেলেছেন। কিন্তু সক্রিয় কর্মী খুন হওয়ায় সে ভাবে কেউ আর আনন্দে মাতবেন না বলেই ঠিক করেছেন। এ দিন দুপুরের পর থেকেই খাজাবক্সের বাড়ির দাওয়ায় গ্রামের বুড়ো আর মহিলাদের ভিড় উপচে পড়েছিল। সেখানেই বসেছিলেন নিহত আরিফের স্ত্রী বছর পঁচিশের জরিনা। হঠাৎ করে আরিফ খুন হওয়ায় তিনি একেবারেই শান্ত হয়ে গিয়েছেন। রমজান শুরু হয়েছে। কিন্তু এই শোকের মধ্যে এমনিই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে রোজা রাখেননি তিনি। তবে খাজাবক্সের কিন্তু কোনও হেরফের হয়নি। রমজান শুরু হয়েছে। রোজাও রেখেছেন।

আর সেই নমাজের পরেই বিকেলে ছেলের কথা উঠতেই চোখের কোণে জল এলেও তা সামলে নিয়ে কঠিন স্বরে খাজাবক্স আলি বলে উঠলেন, ‘‘বালির চরে বাস করি। কেউ কোনও দিন আমাদের দেখেনি। ছেলেটা দলে তাই নাম লিখিয়েছিল, যদি কিছু করতে পারে। কিন্তু তা-ও সইল না ওদের।’’ কিন্তু যে দলের জন্য খুন হল ছেলে সেই দল কী বলছে?

এখনও গ্রামস্তরে কেউ কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে প্রার্থী রইচ মোল্লা জিতেছেন। তিনি যদি কিছু করেন, শেই আশায় রয়েছেন খাজাবক্স। তবে তার থেকেও বেশি ভরসা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে। তিনি যদি কিছু করেন! কিন্তু সে কথা এত দূর থেকে তাঁর কানে কে পৌঁছবেন? তাই একবার সে কথা বলার পরেই তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘ছেলেকে কবরে দিয়ে এসেছি। ও কোনও দিন কারও ক্ষতি করেনি। জন্নতে যাক— এটুকুই চাই।’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Elections 2018 BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy