Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ বার শাসককে মারল বিরোধীরা

বিরোধীদের মতে, গত কয়েক দিন ‘একতরফা’ মার খেয়ে এ দিন পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ভিন্ রাজ্য থেকে বহিরাগতদের এনে গোলমাল পাকানোর চক্রান্ত এবার পরিষ্কার।

অশান্ত: বোমাবাজির পরে তির-লাঠি নিয়ে তৃণমূলকে ধাওয়া বিজেপি কর্মীদের। বীরভূমের মহম্মদবাজারে। ছবি:তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

অশান্ত: বোমাবাজির পরে তির-লাঠি নিয়ে তৃণমূলকে ধাওয়া বিজেপি কর্মীদের। বীরভূমের মহম্মদবাজারে। ছবি:তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নের সন্ত্রাস-পর্বে শনিবার উলটপূরাণ। বিভিন্ন জেলায় ‘আক্রান্ত’ হল শাসক তৃণমূল। কোথাও মারমুখী বিজেপি, কোথাও সিপিএম। মার খেয়ে, তাড়া খেয়ে, বাধা পেয়ে বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ির মতো নানা জেলায় পিছু হঠতে হল শাসক দলকে।

বিরোধীদের মতে, গত কয়েক দিন ‘একতরফা’ মার খেয়ে এ দিন পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ভিন্ রাজ্য থেকে বহিরাগতদের এনে গোলমাল পাকানোর চক্রান্ত এবার পরিষ্কার।

এ দিনের সব চেয়ে বড় ঘটনা বীরভূমের মহম্মদবাজারে। মারের মুখে পড়েও পাল্টা মার দিতে দিতে প্রথমে পুলিশ, তার পরে তৃণমূলের বাধা টপকে শনিবার দুপুরে সেখানকার প্যাটেলনগর ব্লক অফিসে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি মিলিয়ে প্রায় আশিটি মনোনয়ন জমা করল বিজেপি। তা করতে গিয়ে পড়ল বোমা, চলল গুলি, ছুটল তির। তৃণমূল অবশ্য ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদী এনে মনোনয়নে অশান্তির অভিযোগ তুলেছে। বিজেপি সে অভিযোগ মানতে চায়নি।

বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিন সকালে বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক এনে জড়ো করা হয়েছিল আঙ্গারগড়িয়া, শেওয়াকুড়ি মোড়ে। লোক ছিল কয়েক হাজার। অধিকাংশই আদিবাসী। সঙ্গে ছিল লাঠি, তির-ধনুক। শাসক দলের দুষ্কৃতীরা পথ আটকে রেখেছে, এই অভিযোগ করে সম্মিলত ভাবে মিছিল করে প্যাটেলনগরে পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমেই পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের যুক্তি ছিল, আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে জমায়েত নয়, আলাদা আলাদা ভাবে ব্লক অফিসে পৌঁছতে হবে। ফলে মিছিল আটকে যায়। ওই সময়েই খবর আসে সিউড়িতে দলের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, মনোনয়নও জমা করা যায়নি— তা শুনে কয়েক হাজার লোকের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। অল্প সংখ্যক পুলিশের পক্ষে তখন আর ওই মিছিল ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের থেকে ছাড় পেয়ে ৬০ জাতীয় সড়ক ধরে মিছিল ব্লক অফিসের কাছাকাছি পৌঁছলে প্যাটেলনগরের কাছে মিছিল আটকায় শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ! মিছিলের দিকে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে থাকে। অভিযোগ, বিজেপির মিছিল থেকেও ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে তির, পাথরের টুকরো। পুলিশ দু’পক্ষের মাঝে এসেও শুরুতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। মুহুর্মুহু তিরের মুখে পিছু হটে তৃণমূলের বাহিনী।

জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘বিজেপি যে গোলমাল করার পরিকল্পনা করেছে, তা টের পায়নি পুলিশ। এটা ওদের ব্যর্থতা। ঝাড়খণ্ড থেকে কিছু মাওবাদীকে এনে অশান্তি পাকাচ্ছে বিজেপি।’’ তির, বোমায় দলের আট কর্মী জখম হয়েছেন বলেও তাঁর দাবি। মাও-যোগ উড়িয়ে জেলা বিজেপি সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘কোথাও কোনও মাওবাদী নেই। এটা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের প্রকাশ।’’

বিকেলে প্যাটেলনগরে পৌঁছে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইজি জাভেদ শামিম পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কেন পুলিশের কাছে বিজেপির জমায়েত নিয়ে খবর ছিল না, তিনি সেই প্রশ্ন তোলেন বলেও খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE