E-Paper

হিংসার পূর্ণগ্রাসে পঞ্চায়েত ভোট! বাংলা জুড়ে নিহত অন্তত ১৬

প্রত্যেকটি বিরোধী দল তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে। আর শাসক দলের তরফে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, কোথাও কোনও বড় গোলমালের খবরই নেই, ছোটখাটো অশান্তি হয়েছে, সে সবের দায়ও বিরোধীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ২০:২০
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভয়াবহ নির্বাচন। স্মরণাতীত কালের সবচেয়ে রক্তাক্ত নির্বাচনের সাক্ষী হল বাংলা।

রবিবার রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল সন্ত্রাস। সোমবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে অশান্তির খবর আসতে শুরু করল রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে। বেলা একটু গড়াতেই সেই ছবি বদলে গেল অবাধ হিংসায়। এমন কোনও জেলা নেই, যেখান থেকে হিংসার খবর এল না এ দিন। গুলি, বোমা, বিরোধীদের উপরে হামলা, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বিরোধী এজেন্টদের বার করে দেওয়া, প্রিসাইডিং অফিসারের দিকে বন্দুক তাক করা, ব্যালট ছিঁড়ে দেওয়া, ব্যালট বাক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এবং একের পর এক খুন— গোটা দিন কাটল হিংসার এমন অবাধ উৎসবেই।

প্রত্যেকটি বিরোধী দল তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে। আর শাসক দলের তরফে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, কোথাও কোনও বড় গোলমালের খবরই নেই, ছোটখাটো অশান্তি হয়েছে, সে সবের দায়ও বিরোধীদের।

লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে যেমন সর্বত্র ভোট হয়, পঞ্চায়েতে তেমন নয়। শুধু গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ পঞ্চায়েত ভোট। এ বারের নির্বাচনে আবার গ্রাম-বাংলার পুরোটাতেও ভোট ছিল না। ভোট হয়েছে এ দিন ৬৬ শতাংশ পঞ্চায়েতে। তা সত্ত্বেও হিংসাত্মক আবহের নজির গড়ে ফেলল বাংলা। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার রাত পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অন্তত ১৬। যদিও সন্ধ্যায় রাজ্য পুলিশের দাবি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। তার মধ্যে তিন জন তৃণমূল, দু’জন সিপিএম এবং এক জন ঝাড়খণ্ড দলের। বাকিগুলির সঙ্গে ভোটের যোগ নেই।

উজ্জ্বল সুর হাবড়া (উত্তর চব্বিশ পরগনা)

সঞ্জয় সরকার তপন (দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা)

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রবিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে সিপিএম কর্মী দম্পতিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনাকে অবশ্য খুন বলে মানতে নারাজ নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলও দাবি করছে, ওই মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত। ওই দু’জনের মৃত্যু যদি তালিকায় যোগ হয়, তা হলে মৃতের সংখ্যা ১৮-তে পৌঁছবে।

আরও পড়ুন: ভোটে হিংসা নিয়ে রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্র, সক্রিয় কেশরীও

সোমবার বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অশান্তি থামেনি। ভোট মেটার পরেও বিভিন্ন এলাকা থেকে সংঘর্ষের খবর আসছে। দুষ্কৃতী বাহিনী নামিয়ে বুথ দখলের চেষ্টা হয়েছে প্রায় প্রতিটি জেলারই কোনও না কোনও অংশে। কিন্তু অনেক এলাকাতেই পাল্টা প্রতিরোধও হয়েছে। ফলে ভেস্তে গিয়েছে ভোট লুঠের ছক। ভোট চলাকালীন এই প্রতিরোধ যে সব এলাকায় হয়েছে, সেই সব এলাকাতেই ভোট মেটার পরে উত্তেজনা বেড়েছে বলে খবর। ভোট লুঠ করতে না পারার আক্রোশে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল, দাবি বিরোধী দলগুলির।

আক্রোশ যে রয়েছে, তা সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলাতেই স্পষ্ট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে এ দিন আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যম। উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙাতে মিডিয়ার উপরে আরও বড় হামলা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে ঘটনাস্থলে সে সময় হাজির থাকা সাংবাদিকদের।

হিংসার গ্রাসে গণতান্ত্রিক অধিকার, দেখুন ভিডিয়ো:

৬৬ শতাংশ পঞ্চায়েতে নির্বাচন। কিন্তু বেলা গড়াতেই যে ভাবে হু হু করে বাড়তে থাকল মৃত্যুর সংখ্যা, তা দেখে স্তম্ভিত গোটা রাজ্য। শুধু রাজ্য নয়, বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে অবাধ হিংসার খবর এ দিন শিরোনামে এসেছে গোটা দেশের মিডিয়াতেই।

কেন্দ্রীয় সরকারও হিংসায় উদ্বিগ্ন বলে খবর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে রাজ্যের কাছ থেকে। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিও রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন বলে রাজভবন সূত্রের খবর।

এত কাণ্ডের পরেও শাসক দল অবশ্য বলছে, সে ভাবে হিংসা হয়নি। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ভোট চলাকালীনই নিজের প্রতিক্রিয়া দেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে, কোনও বড় ঘটনার খবর নেই। যে সব এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে প্রশাসন সক্রিয়। শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মিডিয়ার উপর হামলার ঘটনা যে ঘটেছে, তা অবশ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করে নিয়েছেন। ঘটনার নিন্দাও করেছেন। কিন্তু বড় হিংসার ঘটনা ঘটেনি বলে যে দাবি তিনি করেছেন, তাতে রাজনৈতিক শিবির বিস্মিত।

বামেদের তরফে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন খোদ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ আজ যে বর্বরতা দেখছে, তার নিন্দার জন্য কোনও কঠোর শব্দই যথেষ্ট নয়।’’ ইয়েচুরি আরও বলেন, ‘‘যে পরিমাণ হিংসা আজ দেখা গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, তৃণমূল নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অধীনে কোনও ভাবেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়।’’ নির্বাচন কমিশনকেও তীব্র আক্রমণ করেছেন ইয়েচুরি। কমিশন, প্রশাসন এবং শাসক দল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

আরও পড়ুন: হারের আশঙ্কা সম্ভাব্য সভাধিপতির, রাত থেকেই বোমাবাজি শুরু স্বরূপনগরে

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও তীব্র আক্রমণ করেছেন রাজ্য সরকারকে। কোচবিহারের একটি বুথে এক জনকে চড় মারার যে অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে, সে প্রসঙ্গে এ দিন প্রবল আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন দিলীপ। অবিলম্বে মন্ত্রিত্ব থেকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অপসারণ দাবি করেন তিনি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার কোনও চেষ্টা বাদ রাখেননি তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রকম দৃশ্য আমরা কোনও দিন দেখিনি। পুলিশ এবং তৃণমূলের গুন্ডারা একসঙ্গে ভোট লুঠ করেছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অধীর এ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের সরকারের কাছে আমি দাবি জানাচ্ছি, বাংলাকে দেখুন, মা-মাটি-মানুষের নেত্রী কী ভাবে সন্ত্রাসবাদী নেত্রী হয়ে উঠেছেন দেখুন।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হওয়া সম্ভব নয় বলে অধীর চৌধুরী এ দিন মন্তব্য করেছেন। ফের তিনি রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবিও তুলেছেন।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Political Clash Violence

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy