‘কোচ’ তো নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু ভাইচুং ভুটিয়া আদৌ বিধানসভার ভোট ময়দানে নামতে পারবেন কি না, সংশয় দেখা দিয়েছে তাই নিয়েই। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় এখনও পর্যন্ত তাঁর নাম নেই। এখনও তিনি সিকিমের ভোটার। যদি মনোনয়নপত্র পেশের শেষ দিন, অর্থাৎ ২৯ মার্চের মধ্যে তালিকায় নাম না ওঠে, তবে মাঠ ছাড়তে হবে ভাইচুংকে। স্ক্রুটিনিতেই বাতিল হয়ে যাবে তাঁর মনোনয়নপত্র। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাই তিনি নিজের রাজ্য ছেড়ে ‘সরকারি’ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে বরাবরই ‘ঘরের ছেলে’ ভাইচুং ময়দানে পাহাড়ি বিছে নামেই পরিচিত। তিনি নিজেও বলেন, কেরিয়ারের সেরা সময়টা কেটেছে বাংলাতেই। তাঁর দাবি, কলকাতার একটি অভিজাত উপনগরীতে ‘কটেজ’ও রয়েছে তাঁর। যদিও সরকারি ভাবে তিনি দক্ষিণ সিকিমের রাবাংলার বাসিন্দা। এবং সিকিমের বারফুং বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার। গত লোকসভা ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তাতে অবশ্য সমস্যা কিছু হয়নি। কারণ, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভায় প্রার্থী হতে গেলে দেশের যে কোনও প্রান্তের বাসিন্দা এবং ভোটার হলেই চলবে। তবে এর ফলে তিনি নিজেকে নিজে ভোট দিতে পারেননি।
বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে কিন্তু নিয়ম— যে রাজ্যে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন, তার কোনও কেন্দ্রের ভোটার হতে হবে। অর্থাৎ কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলের ভোটার হয়েও ভাইচুং শিলিগুড়ির প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু বাস্তব হল, না কলকাতা, না শিলিগুড়ি— এখনও কোথাও-ই ভোটার তালিকায় নাম ওঠেনি তাঁর। অথচ তৃণমূল নেত্রী তাঁর নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। সে খবর শুনেই বিধির গেরো এড়াতে সিকিম থেকে নাম কাটিয়ে রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন করেছেন ভাইচুং। এবং দাবি করেছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি নাকি পাকাপাকি ভাবে কলকাতার-ই বাসিন্দা। বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, শুধুমাত্র ভোটে দাঁড়ানোর তাগিদেই ভাইচুং সরকারি ভাবে কলকাতাবাসী হওয়ার আবেদন করেছেন।
ভাইচুং অবশ্য এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সিকিমের ভোটার তালিকা থেকে নিজের নাম কাটিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমার নাম এক সময়ে সিকিমের ভোটার তালিকায় ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সব তথ্য দিয়ে জানাব।’’ নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি কোনও এলাকায় ভোটার তালিকায় নাম তুলতে চায়, তবে তাকে সেখানে অন্তত ছ’মাস বসবাসের প্রমাণ দিতে হবে। তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা বলছেন, সে জন্যই কলকাতার নিকটবর্তী যে অঞ্চলে ভাইচুংয়ের কটেজ রয়েছে, সেখানেই ভোটার তালিকায় নাম তুলতে চাইছেন তিনি। ওখানে গিয়ে ভাইচুং মাঝেমধ্যে থাকেন। তাই নাম তুলতে তুলনামূলক ভাবে সুবিধেই হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের মুখেও প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে এ দিন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা সকলেই প্রার্থী হিসেবে সব মাপকাঠিতে যোগ্য কি না তা দেখে নেওয়া হয়েছে। যতদূর জানি, ভাইচুং নাম পরিবর্তেনের আবেদন করেছেন, সম্ভবত ইতিমধ্যে তালিকায় নাম উঠেও গিয়েছে।’’
তবে ভাইচুং বা দলীয় সূত্র যা-ই বলুক, শিলিগুড়ির তৃণমূলের কর্মীরা কিছুটা হলেও সংশয়ে রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, হাতে তো মোটে সপ্তাহতিনেক। তার মধ্যে কি নাম তোলা সম্ভব হবে? আর তা যদি না হয়, তবে তো হারা খেলা খেলছি আমরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy