Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

লোধা, টোটোদের মতো লুপ্তপ্রায় জনজাতির ভোটও ঝুলিতে ভরতে হবে, মোদীর উদ্যোগ বাংলাতেও

জনজাতি ভোট এমনিতেই বিজেপির বড় ভরসার। এর উপরে লুপ্তপ্রায় জনজাতি ভোটও দলের জন্য নিশ্চিত করতে চায় গেরুয়া শিবির। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রের নতুন কর্মসূচি ‘প্রধানমন্ত্রী জনমন’।

লুপ্তপ্রায় জনজাতির ভোট পেতে কর্মসূচি বিজেপির।

লুপ্তপ্রায় জনজাতির ভোট পেতে কর্মসূচি বিজেপির। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৮
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনে ৪০০ আসন চাই। আর তার জন্য ভোটারদের কোনও অংশকেই হাতছাড়া করতে চায় না বিজেপি। আদিবাসী, জনজাতি ভোটের জন্য আগেই অনেক উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এ বারের লক্ষ্য বিলুপ্তপ্রায় জনজাতিরা। দেশের মোট ১৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এমন ৭৫টি সম্প্রদায় রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব একটা সময়ে ‘লুপ্তপ্রায়’ ছিল। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, গত ১০ বছরে এই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা দেশে বিশেষ কমেনি।

এই জনজাতির সদস্যদের কাছে টানতে সোমবারই প্রথম পর্যায়ে এক লক্ষ পরিবারকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার কাজ শেষ করল কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী নয়া মহা অভিযান’ নামের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। বক্তৃতায় মোদী বলেন, কেন এই অংশের মানুষের কাছে সব রকমের সরকারি পরিষেবা পৌঁছে যাওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’মাস ধরে ১০০ জেলার জনজাতি অধ্যুষিত গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের আধার কার্ড সংগ্রস করা হয়েছে। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বার বাড়ি বানানো থেকে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় নিয়ে আসার মতো বিবিধ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা লুপ্তপ্রায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

এই ধরনের তিনটি জনজাতির বাস রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আলিপুরদুয়ার জেলায় টোটো, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে লোধা এবং পুরুলিয়ার বিরহর সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই সুবিধা পাবেন। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির কাছেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লাভ পাওয়া এই সব ‘লাভার্থী’-দের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ এসেছে। সেই মতো কাজও শুরু করে দিয়েছে বিজেপির তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি মোর্চা।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে বাজেট পেশের সময়েই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ‘প্রধানমন্ত্রী জনমন’ নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেন। সেই প্রকল্পে তিন বছরের জন্য ২৪,১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যার মধ্যে কেন্দ্রের অংশীদারি ১৫,৩৩৬ কোটি এবং রাজ্যগুলির ভাগে ৮,৭৬৮ কোটি টাকা। শুরুতে ১০০টি জেলার লুপ্তপ্রায় জনজাতি গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই সব সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি মধ্যপ্রদেশে। সে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেই এই কর্মসূচি শুরুর কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগেও সেই কাজ শুরু হয়ে গেল।

তারা যে সমাজের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ভোট পেতে চায়, তা ‘সাঁওতাল’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করার মধ্য দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। এর আগে ‘দলিত’ রামনাথ কোবিন্দকে ওই সাংবিধানিক পদে বসিয়েছিল বিজেপি। বার বার বিজেপি এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে, তারা দেশের প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে আছে। এর পিছনে রাজনৈতিক যুক্তিও রয়েছে। প্রথমত, এই শ্রেণির মানুষের ভোটদানের হার বেশি। ২০১৯ সালের ‘লোকনীতি-সিএসডিএস’-এর সমীক্ষা বলছে, ভারতে গড়ে ভোট পড়ে ৬২ শতাংশ। সেখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৭২ শতাংশ মানুষ ভোট দেন। সেই সমীক্ষাতেই বলা হয়েছিল, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ওবিসি ভোট পেয়েছিল ২২ শতাংশ। আঞ্চলিক দলগুলি পেয়েছিল ৪২ শতাংশ। আর ১০ বছর পরে ২০১৯ সালে বিজেপির দখলে আসে ৪৪ শতাংশ ওবিসি ভোট। আঞ্চলিক দলের প্রাপ্তি কমে হয় ২৭ শতাংশ। সেই অঙ্কেই ২০২৪ সালের ভোট-প্রস্তুতি।

প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশে সেই অঙ্ক মেলাতে পেরেই বিজেপি এখন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। দেশের সব চেয়ে বড় রাজ্যে বিজেপি জোটের হাতে উচ্চবর্ণের বিধায়ক ১১৭ জন। আর পিছড়েবর্গ ও তফশিলি জাতি-উপজাতি মিলিয়ে বিধায়ক ১৫৫ জন। ২০২৩ সালে ‘পদ্মসম্মান’ প্রাপকদের মধ্যে জনজাতি সম্প্রদায়ের একটা বড় প্রতিনিধিত্ব ছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, “জনজাতি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা এবং তা নিয়ে গবেষণার প্রচেষ্টা চলছে। টোটো, হো, কুই, কুভি, মান্ডা সম্প্রদায়ের মানুষেরা— যাঁরা জনজাতির বিভিন্ন ভাষার উপরে কাজ করেছেন, তাঁরা পদ্মশ্রী পেয়েছেন। এটা আমাদের সকলের গর্বের বিষয়।’’ সোমবার ‘প্রধানমন্ত্রী জনমন’ কর্মসূচিতেও মোদী বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশ এবং সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ জনজাতি সম্প্রদায়। দেশ ও সমাজ গড়ে তোলায় তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।”

প্রসঙ্গত, বাংলায় পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ১০০ শতাংশ লোধা অধ্যুষিত গ্রামের সংখ্যা ৩৯৮টি। এর বাইরেও বিভিন্ন গ্রামে অনেক লোধা সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। আবার আলিপুরদুয়ারে হাউড়ি নদী পার হলেই টোটো বসতি। তবে বিরহর জনজাতির মানুষের মূলত থাকেন ঝাড়খণ্ডে। ওই রাজ্য লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গেও ওই জাতির মানুষ রয়েছেন। সংখ্যায় কম হলেও তাঁদের ভোট পেতে চায় বিজেপি। তবে দলের দাবি, সবটাই ভোটের জন্য নয়। ‘বিকশিত ভারত’ গড়তে হলে সকলের উন্নয়ন চাই বলেই মনে করেন রাজ্যের নেতারা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘আসলে দেশের উন্নয়ন করার চেষ্টাকে ভোটের লক্ষ্য ভাবাটাই ঠিক নয়। অতীতেও দেশের যা যা কাজ হয়েছে, তা যেমন সবটাই ভোটের জন্য নয়, তেমনই এখনও নয়। প্রধানমন্ত্রী ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ এবং সব কা বিশ্বাস’ নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। বিজেপিও সেটাই চায়। তার জন্যই এই কর্মসূচি।’’ একই সঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘আর যদি ভোটের কথা ধরতেই হয়, তা হলে বলব, গোটা দেশই তৃতীয় বার মোদীজিকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পেতে চাইছে। সেটা তাঁর হাতে নতুন ভারত গড়ে ওঠার স্বপ্ন থেকেই। ব্যক্তি, পরিবার বা দল নয়, রাষ্ট্রকে সকলের উপরে রাখে বিজেপি। আমাদের দল মানুষের সেই আস্থা অর্জন করেছে।’’

প্রসঙ্গত, এই অংশের মানুষেরা এমনিতেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পান। এর পরেও বিজেপি তাঁদের বলবে আবাস যোজনা, কৃষক সম্মাননিধির মতো প্রকল্পের সুবিধাও কেন্দ্র তাঁদের দিতে পারে। অন্য রাজ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের কথা বলা হলেও সেটি বাদ থাকবে বাংলার জন্য। কারণ, কেন্দ্রের ওই প্রকল্পটি এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার গ্রহণ করেনি। তার পরিবর্তে বাংলায় ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের সুবিধা চালু রয়েছে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE