Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘বহিরাগত’ মামা না ভাগ্নে, প্রচারে জোর তরজা নয়াগ্রামে

এই সেদিনও ভাগ্নে দুলালকে ‘বহিরাগত’ বলে খোঁচা দিতেন বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু ভূমিপুত্র বকুল মামার প্রচারে বেরিয়ে এখন সেই একই কথা শুনতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের কর্মীদের। পাল্টা প্রচারের ধার বাড়িয়ে বিজেপি-র কর্মীরাও সাফাই দিচ্ছেন, শাসকদলের বিধায়ক হওয়ার সুবাদে কাঁথির স্কুল থেকে স্পেশ্যাল ট্রান্সফার নিয়ে দুলাল মুর্মু এখন এলাকার হাইস্কুলে শিক্ষকতা করছেন।

দুলাল মুর্মু ও বকুল মুর্মু। —নিজস্ব চিত্র।

দুলাল মুর্মু ও বকুল মুর্মু। —নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৩
Share: Save:

এই সেদিনও ভাগ্নে দুলালকে ‘বহিরাগত’ বলে খোঁচা দিতেন বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু ভূমিপুত্র বকুল মামার প্রচারে বেরিয়ে এখন সেই একই কথা শুনতে হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের কর্মীদের।

পাল্টা প্রচারের ধার বাড়িয়ে বিজেপি-র কর্মীরাও সাফাই দিচ্ছেন, শাসকদলের বিধায়ক হওয়ার সুবাদে কাঁথির স্কুল থেকে স্পেশ্যাল ট্রান্সফার নিয়ে দুলাল মুর্মু এখন এলাকার হাইস্কুলে শিক্ষকতা করছেন। কাঁথির বাড়িতে এখনও স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা থাকেন। সময় পেলেই কাঁথিতে ছোটেন নয়াগ্রামের বিধায়ক। তাই ভূমিপুত্র হলেও সেই অর্থে দুলালবাবুও ‘বহিরাগত’। মামা ও ভাগ্নের তরজায় সরগরম রাজনীতি।

ভাগ্নে বছর চল্লিশের দুলাল মুর্মু এ বারও তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী। অন্য দিকে, গাঁয়ের সম্পর্কিত মামা ৪৮ বছরের বকুল মুর্মুও ফেলনা নন। তিনিও পূর্ব মেদিনীপুরের হাইস্কুলের শিক্ষক। ভাগ্নের বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মামাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। দুই প্রার্থীকে নিয়ে এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জন। তৃণমূল শিবিরের দাবি, চতুর ভাগ্নের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছেন না মামা। গেরুয়া শিবিরেরও পাল্টা বক্তব্য, মামার ভাবমূর্তির সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছেন না ভাগ্নে। তাই বহিরাগত তকমা দিয়ে অপপ্রচার শুরু হয়েছে।

নয়াগ্রামের পাতিনা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়পাট গ্রামে দুলালবাবুর আদিবাড়ি। বকুলবাবুর পৈতৃকবাড়িও বড়পাট গ্রামে। জ্ঞাতি সম্পর্কে তিনি দুলালবাবুর মামা। তবে শিক্ষকতা পেশার সূত্রে বকুলবাবু কয়েক বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাসিন্দা। সপরিবারে মহিষাদলে থাকেন তিনি। সেখানেই একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন বকুলবাবু। প্রচারের ফাঁকে প্রায়ই তাঁকে ছুটতে হচ্ছে মহিষাদলে।

২০১১ সালে ভোটে নয়াগ্রাম আসনে প্রার্থী হওয়ার সময় কাঁথির করলদা বাণী নিকেতন হাইস্কুলের শিক্ষক দুলালবাবুকে বহিরাগত অপবাদ শুনতে হয়েছিল। বিধায়ক হওয়ার পরে সেই অপবাদ ঘোচাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি। অবশেষে মাস খানেক আগে স্পেশ্যাল ট্রান্সফার নিয়ে নয়াগ্রামের খড়িকা ভীমার্জুন এসসি হাইস্কুলে যোগ দিয়েছেন দুলালবাবু। তৃণমূল কর্মীদের একাংশের কথায়, “ভোটের আগে বিরোধীদের প্রচারের ধার ভোঁতা করতেই দাদা বদলি নিয়ে এলাকার স্কুলে চলে এসেছেন।”

বিদায়ী বিধায়ক ভাগ্নেকে নিয়েও চিন্তিত মামার দল। গত মাসে নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখার উপর কেশিয়াড়ি-নয়াগ্রামের মধ্যে সংযোগকারী জঙ্গলকন্যা সেতুর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়াগ্রামে চালু হয়েছে সরকারি কলেজ ও মডেল স্কুল। পরিষেবা না মিললেও বিশাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ঝাঁ চকচকে ভবন তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া স্টেডিয়াম ও আইটিআইয়ের ভবনও তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভোটের আচরণবিধি জারি হওয়ার দিন পর্যন্ত দুলালবাবু ও তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত সরকারি প্রকল্পের নানা শিলান্যাস ও দান খয়রাতি করে গিয়েছেন।

দুলালবাবুর দাবি, “গাঁয়ের মামার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালই। তবে উনি তো এখন এলাকায় থাকেন না। ভোটাররা আমাকেই পুনর্নির্বাচিত করবেন।” বকুলবাবুর পাল্টা জবাব, “শিক্ষকতার সূত্রে বাইরে থাকি। কিন্তু নয়াগ্রামের সঙ্গে আমার নাড়ির টান। এই সব উন্নয়ন-কাজের পুরো টাকাটাই তো দিয়েছে কেন্দ্র। মানুষকে সে কথাটাই গিয়ে বোঝাচ্ছি।” এ বার নয়াগ্রামে লড়াইয়ের ময়দানে সিপিএম নেই। আসনটি জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে বামেরা। কংগ্রেস অথবা ঝাড়খণ্ডী দলের যিনিই প্রার্থী হোন না কেন, একবাক্যে সকলেই মানছেন ভোটের লড়াইটা সরাসরি মামা-ভাগ্নের মধ্যেই হবে।

অঙ্কের বিচারে অবশ্য এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী দুলালবাবু ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে সিপিএম প্রার্থী ভূতনাথ সরেনকে পরাজিত করেন। গতবার দুলালবাবু ৫০ শতাংশ (৭৫,৬৫৬টি) ভোট পেয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন। গত বার সিপিএম প্রার্থী ৩৯ শতাংশ ভোট পান। আর বিজেপি পেয়েছিল মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ ভোট।

২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে নয়াগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৯টি পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। এরপর ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে নয়াগ্রাম বিধানসভা এলাকা থেকে ৮৪,৮৮৬টি ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। আর বিজেপি-র পেয়েছিল সাড়ে ১৯ হাজার ভোট। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিপিএম ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। পড়শি রাজ্য ওড়িশার বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা নয়াগ্রামে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। সংগঠনের ভরসায় তাই অসম্ভবের আশায় রয়েছে গেরুয়া শিবির। ভাগ্নের ঘাসফুলের বাগানে মামা কী পারবেন পদ্মফুল ফোটাতে? এ প্রশ্ন এখন নয়াগ্রামবাসীর মুখ মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE