Advertisement
০৯ মে ২০২৪
লক্ষ্য বিরোধী পরিসর দখল

হাড়িকাঠ নেই, গলা বাড়িয়ে তৈরি বিজেপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। শুধু তৃণমূল নেতারা অভিযোগ তুলেছেন। তাতেই আগ বাড়িয়ে বিজেপি র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবার জানিয়ে দিলেন, শ্রীনু হত্যা মামলায় তাঁকে অন্যায় ভাবে জড়িয়ে গ্রেফতারের চক্রান্ত হচ্ছে। এবং সেখানেই না থেমে হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘আমাকে গ্রেফতার করলে তৃণমূল যেটা পারেনি, বিজেপি সেটাই করে দেখাবে। দু’দিনে বাংলাকে এ-দিক থেকে ও-দিক করে দেবে।’’ বিজেপির অন্দরের খবর, আসলে তারা চাইছে, দিলীপবাবুকে অল্প সময়ের জন্য হলেও অন্তত এক বার গ্রেফতার করা হোক। কারণ, তারা মনে করছে, সে ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরোধী রাজনীতির পরিসরে সহজেই জাঁকিয়ে বসতে পারবে তারা।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও বলেছেন, ‘‘দিলীপবাবুর গায়ে হাত দিলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার খেসারত দিতে হবে!’’ বস্তুত, গোটা বিজেপি-তেই এখন চর্চার বিষয়— রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে তৃণমূলের দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পালের গ্রেফতারির জবাবে দলের সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এর পরে দিলীপবাবু-সহ তাদের আরও কয়েক জন নেতাকে ‘ফাঁসানো’র চেষ্টা করবে। তার মধ্যে দলের এক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক, এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দলের সম্পাদক পদমর্যাদার এক নেত্রীর দিকে প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলার জন্য হুগলির চণ্ডীতলা থানায় এ দিনই কৈলাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মনোভাব বুঝেই পুরনো মামলায় কর্মীদের আগাম জামিন নিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দিলীপবাবুরা।

আসলে এই পরিস্থিতিকে দলের পক্ষে অনুকূল বলেই মনে করছে বিজেপি। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁদের ব্যাখ্যা, দিলীবাবু-সহ একাধিক নেতাকে বিভিন্ন ঘটনায় ফাঁসালে তৃণমূলেরই মুখোশ খুলে যাবে। বিপরীতে, বিজেপির গুরুত্ব এবং জনপ্রিয়তা— দু’টোই বাড়বে। এক রাজ্য নেতার সকৌতুক মন্তব্য, ‘‘দিলীপবাবু বা অন্য নেতাদের গ্রেফতার করলে আমাদের তো আর খাটতেই হবে না।’’

দিলীপবাবুদের গলার জোর এ দিন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে শ্রীনু হত্যা মামলায় ধৃত নন্দ দাসের বক্তব্য। মেদিনীপুর আদালতে এ দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নন্দ দাবি করেছেন, দিলীপবাবু ওই খুনে জড়িত নন। আর দিলীপবাবু জানিয়েছেন, শ্রীনু হত্যার তদন্ত করার জন্য তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সিবিআইকে চিঠি লিখছেন। নিয়ম অনুযায়ী, সিবিআই অবশ্য রাজ্য সরকারের ডাক বা আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও ঘটনার তদন্ত করতে পারে না। কিন্তু দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমি সিবিআইকে লিখব, তারা ওই খুনের তদন্ত করুক। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকেও তদন্তের আওতায় আনা হোক। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে খুনের আগে-পরে সাত দিনের কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হোক।’’ দিলীপবাবুর সঙ্গে শ্রীনু হত্যার সম্পর্ক থাকতে পারে, এমন ইঙ্গিত প্রথম করেছিলেন খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার। তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার মানহানির মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিলীপবাবু।

এমন সংঘাতের আবহে রাজ্য সরকারের বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী শুক্রবার কলকাতায় আসছেন না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি ওই অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত ভাবে আসতে চেয়েছিলেন। তাঁর আসার বার্তা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক থেকে নবান্নে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জয়প্রকাশবাবু গ্রেফতারের পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দল ও সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী জেটলিকে ওই অনুষ্ঠানে আসতে নিষেধ করেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।

দিলীপবাবু এ দিনও বলেন, তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রথম নিশানা হয়েছেন জয়প্রকাশবাবু। পুলিশ দাবি করেছে, জয়প্রকাশবাবু যে টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তারা প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয়েছে। সেই টাকার সন্ধানে ধৃতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যের হদিস শুরু করেছে পুলিশ। তাদের ইঙ্গিত, প্রয়োজনে আরও কিছু লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে তারা। রবিবার বিকেল থেকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে জয়প্রকাশবাবুকে। এ দিন তাঁকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে বিজেপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জেলে ভরেও তা সম্ভব হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE