Advertisement
০৪ মে ২০২৪
সুর নরমে ঘর গরম

বিঁধলেন জয়ও, অনড় বাবুল

ঝালমুড়ির ঝাল যেন বাড়ছে! জ্বালা বাড়ছে রাজ্য বিজেপি-র! রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরে এ বার টলিউ়়ড থেকে আসা বিজেপি-র আরও এক মুখ জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের মমতা-প্রশস্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। বাবুলের মন্তব্যের বিরোধিতা করলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহও।

দুর্গাপুরের সভায় জয়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

দুর্গাপুরের সভায় জয়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৪:২৩
Share: Save:

ঝালমুড়ির ঝাল যেন বাড়ছে! জ্বালা বাড়ছে রাজ্য বিজেপি-র!

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরে এ বার টলিউ়়ড থেকে আসা বিজেপি-র আরও এক মুখ জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের মমতা-প্রশস্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। বাবুলের মন্তব্যের বিরোধিতা করলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহও। বাবুল অবশ্য তাঁর অবস্থান থেকে সরছেন না। আর এ সবেরজেরে ক্রমেই প্রকট হয়ে যাচ্ছে বিজেপি-র অন্তর্দ্বন্দ্ব।

বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসনের মদতে শাসক তৃণমূলের হাতে তাঁদের কর্মীরা নিয়মিত আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাবুলের ‘ঝালমুড়ি কূটনীতি’ অর্থহীন। সেই মতেরই শরিক জয় রবিবার দুর্গাপুরের ডিটিপিএস কলোনিতে এক কর্মিসভার শেষে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘বাবুল আর একটু সতর্ক হয়ে চললে ভাল হয়। যাতে মানুষ ওঁকে ভুল না বোঝেন। উনি মিরাক্‌ল উইনার। ওঁর আরও ভেবে কাজ করা উচিত!’’ পরে দুর্গাপুরের শঙ্করপুরে দলের একটি কার্যালয় উদ্বোধনে গিয়ে অবশ্য সুর ঈষৎ নরম করে জয় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও বাবুল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তা সরকার পক্ষের হয়ে। বিজেপি-র হয়ে নয়। সেখানে সৌজন্য দেখানোই নিয়ম।’’ বিতর্কের জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে দেখে এ দিন সকালে বাবুলকে ‘সরি’ লিখে রূপাও মেসেজ পাঠিয়েছেন বলে একটি সূত্রের দাবি।

কিন্তু তাতেও বিজেপি-র অন্দরের অস্বস্তি চাপা থাকছে না। কারণ, দলের অস্বস্তি স্পষ্ট করে দিয়েই সিদ্ধার্থনাথ বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক একটা আলাদা বিষয়। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের উপরে তৃণমূল যে সন্ত্রাস করছে, সেটাকে লঘু করে দেখা যায় না। আমাদের এবং তৃণমূলের মতাদর্শ আলাদা এবং তাদের সঙ্গে সমঝোতার কোনও প্রশ্নই নেই!’’ বিষয়টি হাতের বাইরে চলে যেতে বসেছে বুঝেই এ দিন সন্ধ্যায় বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে কড়া গলায় জানাতে হয়েছে, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে তাঁদের কোনও সমঝোতা হচ্ছে না। দলের অন্দরের বিবাদ চাপা দিতেই বৈঠকে নির্মলার আরও ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিজেপি-র রাজ্য নেতারা নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা থেকে পার পেতে চাইছেন। কিন্তু তা হবে না। নির্মলা নিজেই ৩০ জুনের মধ্যে এ রাজ্যের সব জেলায় গিয়ে সংগঠনের খতিয়ান নেবেন।

রাজ্য বিজেপি নেতাদের মনোভাবে অবশ্য সংগঠন শোধরানোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা বাবুল-জ্বালাতেই বেশি জ্বলছেন! শুক্রবার রাজারহাটে কোল ইন্ডিয়ার এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক মঞ্চে বসে বাবুল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্বের নয়া ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এক দিকে ই যদি এনার্জি হয় এবং অন্য দিকে সি আলোর গতিবেগের বদলে কোল বা কয়লা, তা হলে মাঝে হলেন মমতা দিদি।’’ অর্থাৎ, তিনি বোঝাতে চান, কেন্দ্রের প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের সাহায্য দরকার হয়। বাবুলের ওই মন্তব্যের পাল্টা এ দিন সিদ্ধার্থনাথের কটাক্ষ, ‘‘ঝালমুড়ি কূটনীতি বাংলায় সফল হবে না! ই ইক্যুয়ালস টু এনার্জি, এম ইক্যুয়ালস টু মার্ডার, সি ইক্যুয়ালস টু করাপশন!’’

পক্ষান্তরে বাবুলও দমবার পাত্র নন! শনিবার তিনি জানিয়েছিলেন, মাঠের লড়াই তিনি মাঠে লড়েছেন। কিন্তু সরকারি মঞ্চটা উন্নয়নের জায়গা। সেখানে রাজনৈতিক বৈরিতার আঁচ তিনি সচেতন ভাবেই পড়তে দেননি। বাবুল এ দিনও বলেছেন, ‘‘সাংসদ এবং মন্ত্রী হিসাবে আমার দায়িত্ব এক রকম। রাজনীতির ময়দানে দায়িত্ব অন্য রকম। দু’টোর মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হয়। আমি জানি, কেমন করে সেই ভারসাম্য রাখতে হয়।’’ কিন্তু দলের ভিতর থেকেই তো প্রশ্ন উঠছে? বাবুলের জবাব, ‘‘ওঁদের মন্তব্য নিয়ে কিছু বলব না। তবে আমি জানি, আমি কী করছি!’’

বাবুলকে নিয়ে এত কাণ্ডের সূত্রপাত গত শনিবার। সে দিন নজরুল মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সভা সেরে রাজভবন যাওয়ার সময় বাবুলকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন মমতা। পথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ঝালমুড়ি এবং ভেলপুরি খাইয়েছিলেন তিনি। লোকসভা ভোটের সময় থেকে যে বাবুলকে বারবার তৃণমূল নেতৃত্ব এবং রাজ্য সরকারের নানা আক্রমণ হজম করতে হয়েছে, তাঁর সঙ্গে মমতার এই সাম্প্রতিক সৌহার্দ্য তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে নতুন সমীকরণ নিয়ে জল্পনার জন্ম দিয়েছে। ঘরছাড়াদের ফেরানোর দাবি জানাতে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে গিয়ে বিমান বসুর নেতৃত্বে বাম নেতারা ফিশ ফ্রাই খেয়ে যেমন প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন, ঝালমুড়ির দৌলতে নিজের দলে একই অবস্থা হয়েছে বাবুলেরও! দলের মধ্যে বড় অংশেরই প্রশ্ন, যাদের হাতে কর্মীরা আক্রান্ত, তাদের হাতেই কেন ঝালমুড়ি-ভেলপুরি খাওয়া? সেই ভাবাবেগই সামনে এনে ফেলেছিলেন রূপা। সেই কাজই এ দিন করেছেন সিদ্ধার্থনাথ বা জয়েরা। যদিও বাবুল এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘উনি কেন ঝালমুড়ি খাওয়ালেন, সেটা মুখ্যমন্ত্রীই বলতে পারবেন! এটা তো সৌজন্য!’’ যদিও ঘটনা হল, ঝালমুড়ি-পর্বের পরে আইনস্টাইনের আলোয় মমতা-প্রশস্তি করতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলেছেন বাবুল!

পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্মলার সঙ্গে বৈঠকের পরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে শেষ পর্যন্ত বলতে হয়েছে, ‘‘এটা ক্লোজ্ড চ্যাপ্টার। ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কারও মনে আঘাত লাগতে পারে। কিন্তু কেউ যেন দলের বাইরে কিছু না বলেন।’’ ঘটনার এই গতিপ্রকৃতি দেখে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কটাক্ষ, ‘‘দিল্লি থেকে মোদী লাড্ডু পাঠিয়েছিলেন। এঁরা পুরো ব্যাপারটা নিয়ে মশলাদার ঝালমুড়ি মেখে ফেলেছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE