Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে লাভপুর

ধৃত নেতাকর্মী, প্রতিবাদে পথে বিজেপি

রাজনীতির উত্তাপ এখনও কমেনি। বরং ওই তরুণীর ‘অপহরণের’ ঘটনায় তাঁরই বাবাকে গ্রেফতার করায় ক্ষোভ বেড়েছে বিজেপি-তে।

অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

বিজেপি নেতার মেয়ের অপহরণ খবর ছড়িয়ে পড়তেই গণবিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল লাভপুর। তাঁর উদ্ধারের খবরে গত তিন দিনের দমবন্ধ পরিবেশ কাটিয়ে লাভপুর ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। বাজার-দোকানও খুলছে।

তবে, রাজনীতির উত্তাপ এখনও কমেনি। বরং ওই তরুণীর ‘অপহরণের’ ঘটনায় তাঁরই বাবাকে গ্রেফতার করায় ক্ষোভ বেড়েছে বিজেপি-তে। তাদের দাবি, অপহরণ-কাণ্ডে গল্প ফেঁদে অপহরণকারীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে জেলা পুলিশ। এই ঘটনা এবং লাভপুরে গণ্ডগোল বাধানোর অভিযোগ দলের আরও কয়েক জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রতিবাদে পথে নেমেছেন বিজেপি কর্মীরা। এই নিয়ে নতুন করে তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাভপুরের বাবুপাড়ায় বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য সুপ্রভাত বটব্যালের স্কুলশিক্ষিকা মেয়েকে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ করে তিন দুষ্কৃতী। অভিযোগের আঙুল ওঠে শাসকদলের দিকে। খবর ছড়িয়ে পড়তে রাত থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় লাভপুরে। শুক্রবার বিক্ষোভের জেরে বন্ধ হয়ে যায় বাস এবং অন্যান্য যান চলাচল। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ছাড় মেলে।

বোলপুরে বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

শনিবারও ছবিটা আলাদা ছিল না। কীর্ণাহার, মহেশপুর, ইন্দাস-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সিআইডি-কে তদন্তভার দেওয়া হয়। আনা হয় পুলিশ কুকুর। কিন্তু অপহৃতাকে উদ্ধার করা না-যাওয়ায় ক্ষোভের মাত্রা বাড়তে থাকে। শনিবার বিকালে লাভপুরে আসার পথে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলামও। বিক্ষোভকারীরা তাঁর দু’টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। ফের অন্য পথ লাভপুরে ঢুকলেও বিক্ষোভ এড়াতে পারেননি বিধায়ক। থানার সামনে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে বলে অভিযোগ। তিনি ছুটে গিয়ে থানায় আশ্রয় নেন। তখন উত্তেজিত জনতা থানা লক্ষ্য করেও ইটবৃষ্টি করে। বিক্ষোভকারীদের পাল্টা দাবি, থানার সামনে পুলিশ ও র‌্যাফ তাঁদের উপরে লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায়।

রবিবার সকালেও কয়েক জায়গায় ধিকি ধিকি আগুন জ্বলতে দেখা যায়। তার মধ্যেই ওই তরুণীকে উদ্ধারের খবর পৌঁছয় এলাকায়। তার পর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। রাস্তায় ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা টায়ার পোড়ার ছাই পরিষ্কার করা শুরু হয়।

একটি-দুটি করে যান চলাচল করতে থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মাইকে দোকান খোলার ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পরেই দোকানপাটও খুলতে শুরু করে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন এলাকার বাসিন্দারা। মনিরুল ইসলামের কথায়, ‘‘একটি মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বীরভূম পুলিশকে ধন্যবাদ।’’

জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানিয়ে লাভপুরে প্রচার। ছবি: কল্যাণ আচার্য

লা’ঘাটা আদিবাসী পাড়ার এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমরা দিন আনি দিন খাই। এই ক’দিন বাজারহাট বন্ধ থাকায় খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। শুধু আলুসিদ্ধ ভাত খেয়ে ছিলাম। দোকানবাজার আবার খোলায় স্বস্তি পাচ্ছি।’’ স্থানীয় কুরুন্নাহার পঞ্চায়েত এলাকার এক স্কুল শিক্ষকের কথায় , ‘‘অপহৃতা মেয়েটির জন্য আমরাও খুব চিন্তায় ছিলাম। আন্দোলন হওয়াটাও জরুরি মনে করি। কিন্তু দু’টো দিন খুব ভোগান্তি পোহাতে হল। মোটরবাইকে স্কুল যাই। বিক্ষোভকারীরা বাইক আটকে দেওয়ায় স্কুলে যেতে পারিনি।’’

এ দিন সুপ্রভাতবাবু বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তখনও থমথমে পরিবেশ। তাঁর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মেজো ভাই দাবি করলেন, ‘‘এমনটা হতেই পারে না। পুলিশ অভিযোগের মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে এই সব কথা বলছে। আমার দাদাকেও মিথ্যা অভিযোগ গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার স্ত্রী কলেজে শিক্ষকতা করেন। তাঁকে এবং আমার আরও এক ভাইকে আটকে রেখেছে পুলিশ। এই পরিস্থিতি কী করব, কিছু ভেবে পাচ্ছি না।’’

অন্য দিকে, লাভপুরে অশান্তি পাকানো এবং বিধায়কের উপরে হামলায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ৩৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১২ জনকে। এ দিন সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বোলপুর) তন্ময় সরকার অবশ্য বিধায়কের উপরে হামলার কথা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি বলেন, ‘‘শনিবার অশান্তি ছড়ানো ও পুলিশের উপর আক্রমণের ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অশান্তি ছড়ানো, মারধর, অস্ত্র আইন-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে।

ধৃতদের রবিবার বোলপুর এসিজেএম আদালতে তুলে ১৫ দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়েছিল পুলিশ। এসিজেএম শ্রীদীপ বল্লভ ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন।

বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের যদিও দাবি, ‘‘আমাদের কেউ থানা কিংবা মনিরুল ইসলামকে আক্রমণের ঘটনায় জড়িত নয়। লাভপুরে যা হয়েছে, তা গণবিক্ষোভ। তা সত্ত্বেও পুলিশ শাসকদলের মদতে আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।’’ তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘পুলিশ নিজের কাজ করছে। আমাদের মদত জোগানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

বিজেপি নেতাদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে এ দিন প্রতিবাদে বোলপুর রেল ময়দান থেকে রবিবার একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে। মিছিল বোলপুর রেল ময়দান থেকে বেরিয়ে শহর ঘুরে ফের রেল ময়দানে এসে শেষ হয়। শ’দেড়েক বিজেপি

কর্মী প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘অপহরণকারীদের গ্রেফতার না করে মিথ্যা মামলায় আমাদের কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি লাভপুর থানা এলাকার বাসিন্দা জেলা সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডলকেও পুলিশ ধরেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’’ সিউড়ির চৈতালি মোড়েও এ দিন প্রতীকী পথ অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Labhpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE