Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পাণ্ডবেশ্বরেও বিস্ফোরণ, সুর আরও চড়াল বামেরা

বর্ধমানে আরও একটি ছোটখাটো বিস্ফোরণের ঘটনা। এবং সেই সূত্রে আবার তৃণমূলের নাম। আর লাগাতার ঘটনাপ্রবাহের জেরে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়া করল বিরোধীরা। পাণ্ডবেশ্বরের ঘটনায় অবশ্য স্থানীয় তৃণমূল নেতাই অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ভীমসেন ঘোষ নামে ওই তৃণমূল নেতা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, পাণ্ডবেশ্বরের শ্যামলা পঞ্চায়েতে আলিনগর গ্রামে রবিবার গভীর রাতে তাঁর পাঁচিল ঘেরা বাড়ির উঠোনে রাখা মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী।

ভীমসেনবাবুর মোটরবাইকের সামনে পুলিশ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

ভীমসেনবাবুর মোটরবাইকের সামনে পুলিশ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

বর্ধমানে আরও একটি ছোটখাটো বিস্ফোরণের ঘটনা। এবং সেই সূত্রে আবার তৃণমূলের নাম। আর লাগাতার ঘটনাপ্রবাহের জেরে শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়া করল বিরোধীরা।

পাণ্ডবেশ্বরের ঘটনায় অবশ্য স্থানীয় তৃণমূল নেতাই অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ভীমসেন ঘোষ নামে ওই তৃণমূল নেতা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, পাণ্ডবেশ্বরের শ্যামলা পঞ্চায়েতে আলিনগর গ্রামে রবিবার গভীর রাতে তাঁর পাঁচিল ঘেরা বাড়ির উঠোনে রাখা মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী। ডিটোনেটরের সঙ্গে তার সংযোগ করে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ। মোটরবাইকটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য পাল্টা দাবি করছে, খাগড়াগড়-সহ একের পর এক ঘটনায় যখন সন্ত্রাসবাদী ও মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে শাসক দলের যোগসাজশের অভিযোগ স্পষ্ট হচ্ছে, সেই সময় নজর ঘোরানোর জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। তৃণমূল দেখাতে চাইছে, তারাও আক্রান্ত!

দোষারোপের এই আবহেই জমজমাট রয়েছে রাজনীতি! বর্ধমান-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এবং সন্ত্রাসবাদ-মৌলবাদের প্রতিবাদে সোমবার কলকাতায় মিছিল করেছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের নানা সংগঠন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগই তোলা হয়েছে সেখানে। খাগড়াগড়, বীরভূম, বৈষ্ণবনগর বা পাণ্ডবেশ্বর একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় তৃণমূলের নামই জড়িয়ে পড়ছে বলে মিছিল শুরুর আগে অভিযোগ করেছেন সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী। এই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, “চারপাশে যা ঘটছে, তাতে কবিতার কিছু লাইন একটু পরিবর্তন করে আমাদের বলতে হচ্ছে, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখিও তা-ই/ পাইলেও পাইতে পারো দু-একটি দিদির ভাই!”

আবার একই দিনে এনআইএ তদন্তে বিরোধিতার প্রশ্নে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানের পরে প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের আপত্তি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে এ দিন অশোকবাবু বলেছেন, “একটা দুর্ঘটনা বা বিস্ফোরণ হল বলে ব্যাপারটা প্রকাশিত হল! রাজ্য সরকার তো এদের (সন্ত্রাসবাদী) গতিবিধি সম্পর্কে কিছু করেছে বলে মনে হয় না!”

প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীদের বিরুদ্ধে ফের চক্রান্তের পাল্টা অভিযোগই এনেছে শাসক দল। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস মিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ এনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, “দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, সবেতেই যেন তৃণমূল দোষী! শান্তি-শৃঙ্খলার কথা কারা বলছে? যাদের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ঘটাতে দেখেছেন রাজ্যের মানুষ!”

বিরোধীদের দিকেই পাণ্ডবেশ্বরের ঘটনায় আঙুল তুলেছে স্থানীয় তৃণমূল। দলের আলিনগর বুথ কমিটির সভাপতি ভীমসেনবাবু জানান, রবিবার গভীর রাতে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। ভেবেছিলেন, উৎসবের মরসুমে বাইরে পটকা ফাটানো হয়েছে। কিন্তু ভোর ৫টা নাগাদ নীচে নেমে দেখেন, উঠোনে রাখা মোটরবাইকের সামনের দিকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাইক থেকে বেরিয়ে রয়েছে লম্বা তার। তাঁর দাবি, “রাতে পাঁচিল টপকে কেউ বাড়িতে ঢুকে মোটরবাইকের উপরে ডিটোনেটর রাখে। তার পরে বিস্ফোরকের সঙ্গে তার সংযোগ করে পালিয়ে যায়।” স্থানীয় কিছু যুবককে নিয়ে ভীমসেনবাবু সন্দেহ করলেও তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নরেন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস এক হয়ে আমাদের কর্মীর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নকশালদেরও যোগ রয়েছে কি না, পুলিশ খতিয়ে দেখুক।”

সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দু’টি ব্যাটারি, জিলেটিন স্টিক, তার এবং বেশ কিছুটা দড়ি উদ্ধার করে। এডিসিপি বলেন, “সংগৃহীত নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, খনি অঞ্চলে খাদানে কয়লা কাটার জন্য ডিটোনেটর ব্যবহার করে যে পদ্ধতিতে ফাটানো হয়, এখানেও তা-ই করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পাণ্ডবেশ্বরের সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, “সারা খনি অঞ্চলে তৃণমূলের অফিস ও তৃণমূল নেতাদের বাড়ি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুত ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। পুলিশ দেখতে পাচ্ছে না। খাগড়াগড়-কাণ্ড থেকে চোখ ঘোরাতেই এই কাণ্ড কি না, সে প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

খাগড়াগড়ে এ দিনই গিয়েছিলেন ইউডিএফ নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এবং পিডিএসের সমীর পূততুণ্ড। সিদ্দিকুল্লা বলেন, “শিমুলিয়ার মাদ্রাসাকে সামনে রেখে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চলেছে বলে খবর আসছে। তাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। চোর-ডাকাতের যেমন কোনও জাত হয় না, সন্ত্রাসবাদীদেরও হয় না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE