Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপি অফিসে শানুর গান, দিনভর ঋতু বদল

প্রথম বার ঋতুপর্ণ! দ্বিতীয় বার ঋতুপর্ণা!! তৃতীয় বার ঋতু কোথায়!!! ভারতের শাসক দলের দফতরে তিন-তিন বার ‘ঋতু বদল’ হল মঙ্গলবার দুপুরে। কথা ছিল দুই বঙ্গ-তারকা বিজেপি দফতরে আসবেন নরেন্দ্র মোদীর দলে যোগ দিতে। কুমার শানু ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁদের আপ্যায়নের জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে দিল্লির অশোক রোডে তৈরি ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সেই মোতাবেক সাংবাদিকদের কাছে মোবাইল-বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। তাতেই তিন বার তিন রকম ভাষ্য দেখা গেল।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কুমার শানুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর কুমার শানুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অমিত শাহ। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

প্রথম বার ঋতুপর্ণ! দ্বিতীয় বার ঋতুপর্ণা!! তৃতীয় বার ঋতু কোথায়!!!

ভারতের শাসক দলের দফতরে তিন-তিন বার ‘ঋতু বদল’ হল মঙ্গলবার দুপুরে।

কথা ছিল দুই বঙ্গ-তারকা বিজেপি দফতরে আসবেন নরেন্দ্র মোদীর দলে যোগ দিতে। কুমার শানু ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁদের আপ্যায়নের জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে দিল্লির অশোক রোডে তৈরি ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সেই মোতাবেক সাংবাদিকদের কাছে মোবাইল-বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। তাতেই তিন বার তিন রকম ভাষ্য দেখা গেল।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য কুমার শানুই এলেন। দলে যোগ দিলেন। গানও গাইলেন। ঋতুপর্ণা এলেন না। সংবাদমাধ্যমের তরফে ফোন করা হলে বললেন, তাঁর যাওয়ার কথাই ছিল না। নায়িকার কথায়, “দলে যোগ দেওয়া বা এ দিন যাওয়ার ব্যাপারে আমার সঙ্গে ‘অফিশিয়াল’ ভাবে কোনও কথাবার্তা হয়নি। তবে আমার জন্য যদি কাউকে অপেক্ষা করতে হয়ে থাকে, তার জন্য আমি দুঃখিত।”

মঙ্গলবার সারা দুপুর বিজেপি সদর দফতর কিন্তু এই নিয়ে পরতে পরতে নাটকীয়তার সাক্ষী রইল। কী রকম?

নাটকের প্রথম পর্ব, বিজেপির তরফে সাংবাদিকদের কাছে একটি এসএমএস। তাতে লেখা, এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ দলীয় সভাপতি অমিত শাহের উপস্থিতিতে কুমার শানু এবং ঋতুপর্ণ ঘোষ বিজেপিতে যোগ দেবেন। বিজেপির প্রধান কার্যালয় ১১ নম্বর অশোক রোডে অনুষ্ঠানটি হবে।

এসএমএসটি ছড়িয়ে পড়তেই গুঞ্জন শুরু হয়। বিজেপির মিডিয়া সেল-এ পরপর ফোন আসতে থাকে প্রয়াত চিত্রপরিচালকের নাম কী ভাবে উঠে এল? মিডিয়া সেল নড়েচড়ে বসে। একটু পরে সেল-এর তরফে জানানো হয়, ‘বিজেপি সাধারণ সম্পাদক সরোজ পাণ্ডের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নামটা লিখতে ভুল হয়েছে। সঠিক নামটি হবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।’ মিডিয়া সেল-এর সূত্রটি জানান, “সরোজজি জানিয়েছেন, ওঁর সঙ্গে ঋতুপর্ণার কথা হয়ে রয়েছে। ঋতুপর্ণা কিছু ক্ষণের মধ্যেই আসছেন।” একটু পরেই সাংবাদিকদের কাছে সংশোধিত এসএমএস-ও এসে পৌঁছয়, তাতে কুমার শানু ও ঋতুপর্ণার নাম লেখা। সুযোগ পেয়ে এই নামবিভ্রাট নিয়ে বিজেপি-কে কটাক্ষ করে তৃণমূল। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “ঋতুপর্ণ যে জীবিত নেই, সেটুকু জ্ঞানও বিজেপির নেই। এই বিজেপি বাংলাকে চেনে না। বাঙালির সংস্কৃতিও জানে না।”

বাঙালির নায়িকাকে নিয়ে নাটক অবশ্য তখনও অনেক বাকি। শানু এসে গিয়েছেন। কিন্তু ঋতুপর্ণার দেখা নেই। কোথায় তিনি? বিজেপির সচিব শ্রীকান্ত শর্মা বলতে থাকেন, “নায়িকার উড়ান দেরি করছে। তাই...।” আয়োজকরাও বলাবলি শুরু করেন, “দেরি হলেও অসুবিধা নেই, ফুলের তোড়া তৈরি। নায়িকা এলেই সভাপতির ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

কিন্তু ঘড়ির কাঁটা দু’টোর দিকে এগোতে তিন নম্বর এসএমএস-টি পেলেন সাংবাদিকরা। সেখানে এ বার শুধুই কুমার শানুর নাম। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে, ঋতুপর্ণা আসছেন না। শেষমেশ অমিত শাহর সামনে কুমার শানুই সদস্য হলেন বিজেপির। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন এক বার বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শানু। বিজেপি হেরে যাওয়ার পর আর সদস্যপদ নবীকরণ করাননি। এ দিন বললেন, “তখন এসেছিলাম বাজপেয়ীর টানে। এখন আমি পাগলের মতো মোদীর ‘ফ্যান’।”

ঘটনা হল, ক’দিন আগেই শানুকে আজীবন কাজের জন্য উত্তমকুমার পুরস্কার দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শিল্পীর অসম্মান ভুলিয়ে দিতে চান তিনি। পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন শানুও। তৃণমূল শিবিরে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তবে কি বাবুল সুপ্রিয়র পাল্টা হিসেবে কুমার শানুকে তুলে আনতে চাইছেন দিদি? শানু দলে যোগ দেওয়ার পরে বিজেপি নেতাদের অনেকের মুখেই আজ তৃণমূলের মুখের গ্রাস কাড়ার তৃপ্তি।

তবে বাবুলের পাল্টা শানু এমন জল্পনা বিজেপিতেও! দলের কোনও কোনও নেতা বলছেন, বাবলু সুপ্রিয়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্যই আর এক গায়ককে দলে টানা হল, এমনটা হতেই পারে। শানু নিজে অবশ্য বলছেন, “আমি কোনও দিনই মন্ত্রী হব না। শুধু প্রচারে সময় দেব।” বাবুলও শানুর যোগদানকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

কিন্তু ঋতুপর্ণার কী হল? স্রেফ ভুল করেই কি তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল? নইলে তিনি এলেন না কেন প্রশ্ন বিজেপির অন্দরেই। সরোজ পাণ্ডের প্রতিক্রিয়া এ দিন পাওয়া না-গেলেও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ঋতুপর্ণার আসার কথা ছিল। জেনেশুনেই তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। তা হলে নায়িকা এলেন না কেন? এ দিনই কলকাতায় বিজেপির ডাকে বিশিষ্টদের মিছিল ছিল। সেখানেই কি আটকে গেলেন? না, সেই মিছিলেও তাঁকে দেখা যায়নি। ফোন করা হলে তিনি বললেন, “মিছিলে হাঁটার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি একটি শো-এর জন্য গুড়গাঁওতে রয়েছি।” নায়িকার দাবি, শো-টি আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল।

তাঁর কি দিল্লিতে বিজেপি কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল? ঋতুপর্ণার বক্তব্য, এমন কোনও প্রতিশ্রুতি তিনি দেননি। তবে কোনও ভাবে তাঁর জন্য যদি কেউ অপেক্ষা করে থেকে থাকেন, তার জন্য তিনি দুঃখিত। তাঁর কথায়, “অনেক দিন ধরেই আমার কাছে প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আপাতত আমি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছি না। আমি নিজের মতো করে আমার সামাজিক দায়িত্ব পালন করি।”

গত ২ নভেম্বর কলকাতার সন্তোষপুর এলাকায় ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’ ঋতুপর্ণা যোগ দেওয়ার পরেই তাঁকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। সেই অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন জর্জ বেকার, পি সি সরকারের মতো বিজেপির একাধিক পরিচিত মুখ। ঋতুপর্ণা অবশ্য এ দিন দাবি করলেন, “আমি ওখানে কোনও রাজনৈতিক প্রচারে যাইনি। ছবির কাজে দু’টো এনজিও-র আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম।” পাল্টা যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানে জাতীয় স্তরেও অনেক সেলিব্রিটি যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সবাই বিজেপিতে নাম লেখাননি।

তিনি কি বিজেপিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক? ঋতুপর্ণার উত্তর, “মত পাল্টালে নিশ্চয়ই জানাব। সক্রিয় ভাবে কাজ করার দায়িত্ব পেলে তবেই রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবব।” রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ অবশ্য বলেই রেখেছেন, “আমরা ঋতুপর্ণাকে দলে পেতে আগ্রহী। উনি দলে এলে যোগ্য সম্মান পাবেন।” এ কথা শুনে নায়িকার প্রতিক্রিয়া, “খুব ভাল লাগছে শুনে। সিদ্ধান্ত নিলে ওঁকে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE