Advertisement
E-Paper

তাড়াহুড়োর ভুল থেকে বিস্ফোরণ, বলছে এনআইএ

অল্প সময়ের মধ্যে বেশি কাজের বরাত পেয়ে তাড়াহুড়ো। যার জেরে রাসায়নিক ও অন্যান্য উপকরণ মেশাতে গিয়ে ভুল। আর তা থেকেই খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটে বলে দাবি করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। গোয়েন্দাদের দাবি, বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৬

অল্প সময়ের মধ্যে বেশি কাজের বরাত পেয়ে তাড়াহুড়ো। যার জেরে রাসায়নিক ও অন্যান্য উপকরণ মেশাতে গিয়ে ভুল। আর তা থেকেই খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটে বলে দাবি করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।

গোয়েন্দাদের দাবি, বিস্ফোরণের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। হাকিমের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ভারতে জেএমবি-র (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) মাথা ও বাংলাদেশের নাগরিক সাজিদ ওরফে মাসুদ রানা এবং মায়ানমারের বাসিন্দা বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞ খালিদ মহম্মদের বক্তব্যও মিলে গিয়েছে। গত সপ্তাহে সাজিদ, খালিদ ও হাকিমকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করেছে এনআইএ। এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, “ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট পেলে আমরা আরও নিশ্চিত ভাবে জানতে পারব, কোন কোন বিস্ফোরক উপাদান ভুল ভাবে মেশানোয় বিস্ফোরণ ঘটেছিল।”

অথচ ২২ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে কর্মিসভায় তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, “খাগড়াগড়ে হয়তো কেন্দ্রই ‘র’-কে দিয়ে বোমা রাখিয়েছে।” মমতার ওই মন্তব্য ভুল বার্তা দিতে পারে, এমনকী জঙ্গিদের সুবিধা করে দিতে পারে বলেও যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছিল। হাকিমের স্বীকারোক্তি মেলার পরে এনআইএ-র ওই অফিসার বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে বোমা বানানোর সময়ে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণ হল, আমরা এত দিনে তার একটা বড় সূত্র পেলাম বলে মনে হচ্ছে।” ওই বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও করিম শেখ নামে দু’জন নিহত হয়, জখম হয় হাকিম।

এনআইএ সূত্রের খবর, ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় খাগড়াগড়ের ডেরায় কওসর এসে জানায়, এক দিনের মধ্যেই ১০টি গ্রেনেড প্রয়োজন। ‘বিষয়টা খুব জরুরি’ বলে দাবি করে সে। খাগড়াগড়ে তৈরি গ্রেনেড, সকেট বোমা ও অন্যান্য আইইডি এই কওসরই মোটর সাইকেলে করে নিয়ে যেত। সন্দেহভাজন এই বাংলাদেশির হদিস পেতে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে এনআইএ। এর মধ্যে হাকিম গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছে, দু’-তিন জন মিলে হাত লাগালেও এক দিনে চার-পাঁচটির বেশি দেশি গ্রেনেড তৈরি করা যায় না। আইইডি-বিশেষজ্ঞ খালিদ এবং সাজিদেরও একই মত। ফলে কওসর জরুরি বরাত দেওয়ায় কাজের চাপ খুবই বেড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে হাকিম।

এনআইএ সূত্রের খবর, ২ তারিখ সন্ধ্যায় স্ত্রী রাজিয়া ও শিশুসন্তানকে নিয়ে নদিয়ায় শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে কথা ছিল শাকিলের। খাগড়াগড় ছাড়ার আগে দশটা গ্রেনেড তৈরির কাজ যাতে শেষ হয়, সে জন্য ২ তারিখ সকাল থেকেই তাড়াহুড়ো করছিল সে। ঘটনার কিছুক্ষণ আগে হাকিম বেরিয়েছিল বাদশাহি রোডে রেজাউল শেখের সঙ্গে দেখা করতে। কারণ হাকিমকে কওসর বলেছিল এর পর কবে খাগড়াগড়ে আসতে হবে, সেটা রেজাউলই জানিয়ে দেবে। এই রেজাউল এখনও ফেরার। বাদশাহি রোডে তার বাড়ি থেকে গত ১৬ অক্টোবর ৩৫টি গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা উদ্ধার হয়েছে।

এনআইএ-র বক্তব্য, ডেরায় ফিরে হাকিম পাশের ঘরে জামাকাপড় বদলানোর পর দেখতে গিয়েছিল, কাজ কত দূর এগোল। আর ঠিক তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, শাকিলের সহকারী করিম শেখের কম অভিজ্ঞতাও সম্ভবত বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। বীরভূম জেলার কীর্ণাহারের বাসিন্দা করিম মাত্র মাস তিনেক আগে আইইডি বানানো শিখেছিল। নইলে, এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, ওই জঙ্গিগোষ্ঠী বা মডিউলটিই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বসে গত তিন বছরে ২০০০-এর বেশি আইইডি নির্ঝঞ্ঝাটে তৈরি করে গিয়েছিল। প্রথমে বেলডাঙার বরুয়া মোড়ের কাছে, তার পর খাগড়াগড়ে। কোনও দিন বিস্ফোরণ ঘটেনি।

কিন্তু কোথায় নাশকতা ঘটাতে কওসর জরুরি ভিত্তিতে ১০টি গ্রেনেড তৈরি করতে বলেছিল? এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, “বাংলাদেশে পাঠানোর জন্যই কওসর ওই বরাত দিয়েছিল। সাজিদ এ ব্যাপারে কিছু তথ্য দিয়েছে। কিন্তু আরও নিশ্চিত ভাবে সেটা বলতে পারবে কওসরই।” কওসরকে ধরার জন্য তাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা।

NIA khagragarh blast surbek biswas Bomb blast wrong mixed chemicals state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy