সিঙ্গুরের মানুষ এখন যে কোনও মূল্যে কারখানা চাইছেন।—ফাইল চিত্র।
শাসক তৃণমূলের বিধায়কদের ‘দিদিকে বলো’ কমর্সূচিতে পেয়ে বহু মানুষ আর্জি জানাচ্ছেন, কাজের ব্যবস্থা করে দিন। রাজ্যে জমি আন্দোলনের অন্যতম মাইলফলক সিঙ্গুরে গিয়ে বিরোধী দল সিপিএমের যুব নেতা-কর্মীদের অভিজ্ঞতাও একই সুরে বাঁধা। চাষের কাজে কোনও আশা না দেখে সিঙ্গুরের মানুষ এখন চাইছেন, যে কোনও মূল্যে কারখানা হোক। যুব সিপিএমের নিয়ে যাওয়া চাকরির প্রতীকী আবেদনপত্রেও স্বেচ্ছায় সই করে দিয়েছেন ৮৫০ স্থানীয় মানুষ।
বেকারদের জন্য কাজের দাবিতে আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর থেকে কলকাতা অভিযানের ডাক দিয়েছে বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি। তার আগে সিঙ্গুরের মানুষের মন বুঝতে এবং নিজেদের কথা বোঝাতে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সেখানকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন ডিওয়াইএফআই নেতা-কর্মীরা। বেড়াবেড়ি, মালপাড়া ও খাসের ভেড়িতে একটি, বাবুর ভেড়ি, হাটতলা ও সিংহের ভেড়িতে একটি এবং বাজেমিলিয়ার ভিতরে অন্য একটি দল— এই ভাবেই ভাগ হয়ে তিন দিন-তিন রাত সিঙ্গুরের মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। টাটার প্রকল্পের জন্য জমি গিয়েছিল এবং যায়নি, এই দু’ধরনের পরিবারই জীবিকার স্বার্থে কারখানার পক্ষে মত দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রাজ্য সরকার সিঙ্গুরের জমির মালিকদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছে কয়েক বছর আগেই। কিন্তু রুক্ষ, পাথুরে হয়ে যাওয়া সেই জমিতে চাষ আর আগের জায়গায় ফেরেনি। বিধানসভার বিগত অধিবেশনে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই কৃষিমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নের নিজে উত্তর দিয়ে বলেছেন, সিঙ্গুরের মানুষ কৃষিকাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন। এ বার সেখানে গিয়ে যুব সিপিএম কর্মীরা শুনেছেন, উলুখাগড়ায় (স্থানীয়দের ভাষায় বেনাবন) ছেয়ে যাওয়া জমি নিয়ে কোনও আশা তাঁদের নেই। মালপাড়ার বিকাশ রুইদাস যেমন। টাটার প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ পেয়েছিলেন। এখন তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাজ নেই। আমাদের ১৫ বিঘা জমি পড়েছিল প্রকল্প এলাকায়। কিন্তু ওখানে এখন মানুষ সমান বেনাবন! কী চাষ হবে? একটা কারখানা হলে অনেকগুলো মানুষ বেঁচে যায়।’’ আবার অর্চনা রুইদাসদের পরিবারের জমি প্রকল্পের মধ্যে ছিল না। তাঁরও দাবি, ‘‘স্থায়ী রোজগার বলে কিছু নেই। কাজের ব্যবস্থার জন্যই কারখানা চাই।’’ খাসের ভেড়িতে চপবিক্রেতা এক প্রৌঢ় নিজেই তাঁর ছেলের জন্য চাকরির আবেদনপত্র পূরণ করে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁরা শিল্প চান।
টাটার প্রকল্পের জমির একটু দূরে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে হিমাদ্রি কেমিক্যাল্স কারখানার দূষণ নিয়ে বহু অভিযোগ আছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ যুব সিপিএমের কর্মীদের বলেছেন, ওই কারখানা বন্ধের দাবি না তুলতে। তা হলে আরও কিছু মানুষ কর্মহীন হবেন! ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘সিঙ্গুরের অভিজ্ঞতায় বুঝলাম, অবস্থা ভয়াবহ!’’ সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘ধর্ম আর বিভাজনের উস্কানি দিয়ে হতাশাগ্রস্ত যুবকদের বিপথে টানার চেষ্টা চলছে। আমরা চাই, লড়াইটা রুটি-রুজির জন্যই হোক।’’
পাম অ্যাভিনিউয়ে অধুনা গৃহবন্দি এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যে কথা এক যুগ আগে বলতেন, অবিকল তা-ই এখন বলছে সিঙ্গুর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy