পরের পর কমিটি গড়েও বাসভাড়া-প্রশ্নের সুরাহা না-হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। তারাও বাসভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তা সত্ত্বেও ভাড়া যে বাড়বেই, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না পরিবহণ দফতরের তাবড় কর্তারা। কারণ, ভাড়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
বাসভাড়া বাড়বে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। এমনকী বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের বিষয়েও কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। শুধু জানিয়েছেন, বাসভাড়ার ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে গড়া কমিটিই নেবে। আর নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত নেন, বাসভাড়া বাড়া না-বাড়ার বিষয়টি নির্ভর করছে তার উপরেই।
বাসের ভাড়া নিয়ে সর্বদলীয় কমিটির প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল সিপিএম বা কংগ্রেস কেউই তাতে যোগ দেয়নি। এই অবস্থায় বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনা করতে পরিবহণ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দেয় সরকার। পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে আছেন পরিবহণ শিল্পের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ। ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্যের কয়েক জন মন্ত্রী ও বিধায়ককে নিয়ে গড়া বাসভাড়া সংক্রান্ত অন্য একটি কমিটির কাছে। শুক্রবার পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবহণ শিল্পে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গড়া ওই কমিটি কার্যত বাস-মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির দাবি সঙ্গত বলেই মেনে নিয়েছে। প্রস্তাবে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা।
বেসরকারি বাসের মালিক সংগঠনগুলি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে খুশি। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দাবির সঙ্গে ওই বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের কোনও পার্থক্য নেই। এখনই বাসভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন ঠিক কতটা, এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী তা না-বুঝলে সেটা রাজ্যের পরিবহণ শিল্পের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক হবে।”
২০১২ সালের নভেম্বরে সরকার শেষ বার বাসভাড়া বাড়িয়েছিল। তার পর থেকে জ্বালানির দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। তাল মিলিয়ে বেড়েছে যন্ত্রাংশের দাম এবং আনুষঙ্গিক খরচও। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে, জ্বালানির দাম ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম যে-হারে বেড়েছে, তাতে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি যুক্তিসঙ্গত। সরকারি নিগম থেকে শুরু করে বেসরকারি বাসের মালিক সংগঠনগুলি বারবার ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। অর্থনীতির সহজ নিয়ম মেনে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটিও ভাড়া বৃদ্ধির বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে। কিন্তু সরকার ভাড়া বাড়াতে রাজি নয় কেন? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ভোট-রাজনীতির কারণে সহজে জনপ্রিয়তা কুড়োতেই ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে এখনও অনড় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তিনি চাইছেন না বলেই বাসভাড়া বাড়ছে না।
কিন্তু যে-ভাবে সরকারি নিগম থেকে বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবি জোরদার হচ্ছে, তাতে সরকার নাজেহাল। এই অবস্থায় একের পর এক কমিটি তৈরি করে চলেছে সরকার। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, বাসভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ক্রমশ পিছিয়ে দেওয়ার জন্যই পরের পর কমিটি গড়া হচ্ছে। কখনও পরিবহণ দফতরের বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি তো কখনও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের মাথায় মন্ত্রিগোষ্ঠী।
আবার কখনও বা মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে কমিটি। কমিটির ভিড়ে নবতম সংযোজন পরিবহণ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি।
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে গঠিত কমিটিও প্রাথমিক ভাবে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিকে উড়িয়ে দিচ্ছে না। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞ কমিটি একই সুপারিশ করায় সরকারের অন্দরেও বাসভাড়া বৃদ্ধির দাবি আরও জোরদার হল। যদিও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, কমিটি, মন্ত্রিগোষ্ঠী যা-ই থাকুক না কেন, বাসভাড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রীই। এখন মুখ্যমন্ত্রী কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy