Advertisement
০৩ মে ২০২৪
SSC Recruitment Case

শূন্যপদের চেয়েও বেশি নিয়োগ! এসএসসি মামলার শুনানি শেষ বিশেষ বেঞ্চে, মন্তব্যে কি রায়েরই ইঙ্গিত?

এসএসসি মামলা হাই কোর্টে ফেরত পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে উচ্চ আদালতের বিশেষ বেঞ্চে নিয়মিত মামলাটির শুনানি চলেছে। বুধবার তা শেষ হল। রায় স্থগিত রেখেছে আদালত।

কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৯
Share: Save:

কলকাতা হাই কোর্টে শেষ হয়েছে এসএসসি নিয়োগ মামলার শুনানি। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির শুনানি চলেছে। প্রতি দিন বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়েছে এই মামলার। টানা শুনানি শেষ হল বুধবার। তবে রায় ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছে। নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে আদালত যে মন্তব্য করেছে, তাতে রায়েরই ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এসএসসি-তে বহু নিয়োগ বেআইনি বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলাকারীর তরফে আদালতে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, শূন্যপদের চেয়েও নিয়োগ হয়েছে বেশি। বুধবার এই সংক্রান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে ভাল কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন। অতিরিক্ত নিয়োগ সরাসরি বাতিল হওয়া উচিত।’’ এই মন্তব্য থেকে মনে করা হচ্ছে, অতিরিক্ত নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দিতে পারে আদালত।

এসএসসি-র গ্ৰুপ সি, গ্ৰুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ মামলা হাই কোর্টে ফেরত পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি বেঞ্চ তৈরি করতে হবে। সেখানে এসএসসি-র সব মামলার একত্রে শুনানি হবে। বিশেষ বেঞ্চকে ছ’মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো গত ডিসেম্বর মাস থেকে ওই মামলাগুলির শুনানি শুরু হয় বিশেষ বেঞ্চে। প্রতি দিন নিয়মিত শুনানি হয়েছে। বুধবার শুনানি শেষে রায় ঘোষণা মুলতুবি রেখেছে উচ্চ আদালত।

বুধবার মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম সওয়ালে বলেন, ‘‘এটি সুপরিকল্পিত অপরাধ। শূন্যপদের চেয়েও বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়েছে। এই বেআইনি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে যুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা উচিত। ওই সব দুর্নীতির টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করা উচিত।’’ বিকাশের বক্তব্য, ‘‘এই দুর্নীতির ঘটনায় আদালতের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা উচিত। না হলে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমবে না। অপরাধীরা এই ধরনের অপরাধ করতেই থাকবে।’’

মামলাকারীদের আইনজীবীরা আদালতে অতিরিক্ত নিয়োগের পরিসংখ্যানও প্রকাশ করেছেন। দেখা গিয়েছে, ২০১৬ সালে নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগে কমিশনের তরফে ১১ হাজার ৪২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। পর্ষদ মোট ১২ হাজার ৯৬৪টি নিয়োগপত্র দেয়। অর্থাৎ, ১৫৩৯ জনের নিয়োগ বাড়তি। একই ভাবে ওই বছর একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ ছিল ৫,৫৫৭ জনের। নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ৫,৭৫৬ জনকে। বাড়তি নিয়োগ হয়েছে ১৯৯ জনের। গ্রুপ ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে ৩,৮৮১ জনের নিয়োগের সুপারিশ করেছিল এসএসসি। পর্ষদ ৪৫৫০ জনকে নিয়োগপত্র দেয়। ৬৬৯ জনকে অতিরিক্ত নিয়োগ করা হয়। ওই বছর ২,০৬৭ জন গ্রুপ সি কর্মীর নিয়োগ সুপারিশ করেছিল কমিশন। নিয়োগপত্র পান ২,৪৮৩ জন। অর্থাৎ, বাড়তি নিয়োগ হয় ৪১৬ জনের।

উল্লেখ্য, শুনানির শেষ দিনেও এসএসসি এবং সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী প্রমিত রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই দুর্নীতির ঘটনায় ওই দুই সংস্থার অবস্থান ভরসা করা যায় না। আদালত নিজের স্বতন্ত্র সিদ্ধান্তের উপর বিশ্বাস রাখুক।’’ তা শুনে বিচারপতি বসাক বলেন, ‘‘তবে আদালত কার কথা বিশ্বাস করবে? এই আদালত তো উত্তরপত্র দেখার সুযোগও দিয়েছিল। কত জন এসে বলেছিলেন এই ওএমআর শিট আমার নয়?’’ এর পরেই রায় ঘোষণা স্থগিত রাখে বিশেষ বেঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE