Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta High Court

Calcutta High Court: শিশু মনের হদিস করবে কমিটি

এই নির্দেশের সুতোয় জড়িয়ে রয়েছে হাওড়ার সালকিয়ার এক শিশুকন্যার কাহিনি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৩৬
Share: Save:

শিশু-মনের হদিস করবে রাজ্য শিশু কল্যাণ কমিটি। সোমবার এমনই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।

তার দীর্ণ শৈশবে, কোথায় কিংবা কার আশ্রয়ে মনের স্বস্তি মিলছে শিশুর, তার নিবিঢ় পর্যালোচনা করার দায় প্রাথমিক ভাবে শিশু কল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দিয়ে সোমবার ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে— এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিশুটির সঙ্গে কথা বলেই তার মনের খোঁজ নিতে হবে কমিটির সদস্যদের। শিশু কল্যাণ কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘শিশুর মন বোঝার চেষ্টা করাই আমাদের লক্ষ্য।’’

এই নির্দেশের সুতোয় জড়িয়ে রয়েছে হাওড়ার সালকিয়ার এক শিশুকন্যার কাহিনি। তার মাস সাতেক বয়সেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল শিশুটির মায়ের। অভিযোগ ছিল, শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের জেরেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন সেই মহিলা। ছোট্ট মেয়েটির বাবা তার কিছু দিন আগেই স্ত্রী-কন্যাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কিছু দিন আগে মারা যান ওই শিশু কন্যার দিদিমাও। অতঃপর তার বেড়ে ওঠা পড়শি এক দম্পতির আশ্রয়ে। তাঁদেরকেই এত দিন বাবা-মা বলে চিনেছে সে। সম্প্রতি তার জন্মদাতা বাবা শিশুটির অভিভাবকত্ব দাবি করলে মামলা গড়ায় আদালতে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে ওই শিশুর জন্ম। তার মাস সাতেক বয়সেই ২০১৮’র মার্চ মাসে আত্মঘাতী হয়েছিলেন মা। সম্প্রতি মাস ছয়েক আগে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে চার বছর বয়সী ওই শিশুর দিদিমাও।

জানা গিয়েছে, দিদিমার মৃত্যুর পরে সম্প্রতি তার বাবা মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন জানান। মামলার শুনানি শুরু হয়। সপ্তাহ খানেক আগে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, শিশু-মন কোথায় স্বস্তি পাবে গুরুত্বপূর্ণ সেটাই। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই জোর করে তাঁদের কাছে পাঠিয়ে শিশুর সহজাত বেড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করা ঠিক নয়। বিচারপতি জানান, সপ্তাহে এক দিন সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বাবার কাছে থাকবে ওই শিশুটি। সেই মতো ঠিক হয়েছিল, গত শনিবার শিশুটি বাবার কাছে যাবে।

কিন্তু, এর মাঝেই ঘটেছে আরও একটি অঘটন। প্রতিবেশি গৃহকর্তা, ওই শিশুর পালিত বাবা দীর্ঘ কয়েক বছর লিভার সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। গত শুক্রবার মারা যান তিনি। গত শনিবার তাই জন্মদাতা বাবার কাছে পাঠানো যায়নি ওই শিশুটিকে। ইতিমধ্যে মামলায় বেঞ্চ পরিবর্তন হয়ে আসে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে।

সোমবার শুনানির পরে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, শিশু কল্যাণ কমিটি ওই শিশুর সঙ্গে কথা বলে তার মনের হদিস করে তার ইচ্ছে-অনিচ্ছার কথা জানানোর পরেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিটিকে আগামী সোমবার আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই শুনানি হবে। ওই দিন শিশুটির সঙ্গেও আদালত কথা বলবে বলে জানান শিশুটির পালিতা মায়ের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী। এ দিনের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ওই পালিতা মায়ের দাবি, ‘‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। আমার এক ছেলে রয়েছে। পালিত কন্যা আমার কাছে নিজের মেয়ের থেকে কম নয়। আমি নিজে ব্যবসা দেখাশোনা করি। সাত মাস বয়স থেকে ওকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি। ও আমার কাছেই থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Child Welfare Committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE