ক্ষমতায় এসেই যৌথ উদ্যোগে ডাক্তারি পঠনপাঠন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়াও মিলেছিল কিছু কিছু। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ গড়ার ক্ষেত্রে পিপিপি বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির মডেল সম্প্রতি জোর ধাক্কা খেয়েছে।
তৃণমূলের আমলে রাজ্যে পিপিপি মডেলে চারটি মেডিক্যাল কলেজ গড়তে যে-দু’টি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, তাদের মধ্যে একটি সংস্থা চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দু’টি মেডিক্যাল কলেজের ভবিষ্যৎ।
২০০৮ সালে অর্থাৎ বামফ্রন্টের জমানায় পিপিপি মডেলে রাজ্যে প্রথম মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছিল যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতালের জমিতে। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে কোচবিহার, নদিয়ার ধুবুলিয়া, দার্জিলিঙের কার্শিয়াং এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে পিপিপি মডেলে আরও চারটি মেডিক্যাল কলেজ গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দরপত্র ছাড়ার পরে দু’টি সংস্থা ওই চারটি মেডিক্যাল কলেজ তৈরির ভার পায়। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার ফলে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয় চারটি মেডিক্যাল কলেজ ঘিরেই।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, পিপিপি মডেলে রাজ্যে চারটি মেডিক্যাল কলেজ গড়তে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ক্যামেলিয়া গ্রুপ এবং টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের। ঠিক হয়েছিল, ক্যামেলিয়া গ্রুপ ধুবুলিয়া ও কোচবিহারে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজ শেষ করবে দু’বছরে। আর টেকনো ইন্ডিয়া দু’বছরে কার্শিয়াং মেডিক্যাল কলেজ এবং পাঁচ বছরের মধ্যে ভাঙড় মেডিক্যাল কলেজ চালু করবে। কিন্তু চুক্তিই সার। কোনও ক্ষেত্রেই কাজ হয়নি।
কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পিপিপি মডেল নয়, বিভিন্ন সংস্থা এখন নিজেরাই স্বাধীন ভাবে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়তে চাইছে। কারণ, তাতেই বেশি লাভ দেখছে তারা। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে কোনও ভাগাভাগির ভিত্তিতে কলেজ গড়ার ইচ্ছে নেই বেশির ভাগ বেসরকারি সংস্থার।
তারা যে আর পিপিপি মডেলে কোচবিহার ও ধুবুলিয়ায় মেডিক্যাল কলেজ গড়বে না, ক্যামেলিয়া গ্রুপ সেটা জানিয়ে দিয়েছে বলেই স্বাস্থ্য ভবনের খবর। সেখানকার এক কর্তা জানান, ওই সংস্থাটি ইতিমধ্যে কোচবিহার, বর্ধমান ও বীরভূমে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়বে বলে জমি কিনেছে। এর পাশাপাশি বজবজ, হাওড়া, দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল গড়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে আরও কয়েকটি সংস্থা।
কিন্তু কোচবিহার ও ধুবুলিয়ার যে-দু’টি প্রকল্প থেকে ক্যমেলিয়া গ্রুপ সরে এসেছে, সেগুলির কী হবে? কবে হবে ওই দু’টি মেডিক্যাল কলেজ?
‘‘কোনও সমস্যা হবে না। কারও জন্যই কিছু আটকে থাকে না। অনেক সংস্থাই পিপিপি মডেলে কলেজ গড়তে আগ্রহী। কিছু দিনের মধ্যেই আবার দরপত্র ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে,’’ বলছেন স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
দু’বছর আগে সরকারের সঙ্গে ক্যামেলিয়ার যে-চুক্তি হয়েছিল, সেটা ভেঙে তারা বেরিয়ে এল কেন?
‘‘কোনও নির্দিষ্ট কারণ সে-ভাবে বলতে পারব না। শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, পিপিপি মডেলে সরকারের সঙ্গে কিছু ভাগাভাগির ব্যাপার আছে। সরকারের কিছু শর্ত
আমাদের মানতে আসুবিধে হচ্ছে,’’ বললেন ক্যামেলিয়া সংস্থার প্রধান নীলরতন দত্ত।
ক্যামেলিয়া গ্রুপ চুক্তিভঙ্গ করলেও মতো টেকনো ইন্ডিয়া অবশ্য এখনও সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসেনি। ওই সংস্থার তরফে গৌতম রায়চৌধুরী বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা অন্তত প্রকল্প ছা়ড়ছি না।’’
তা হলে প্রকল্পটিকে অসমাপ্ত অবস্থায় কেন ফেলে রেখেছেন তাঁরা?
এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব না-দিয়ে গৌতমবাবু শুধু বলেন, ‘‘কার্শিয়াঙের কাজ ২০১৭ সালের মধ্যে এবং ভাঙড় মেডিক্যাল কলেজের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’
দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকর্তা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তারা স্বাস্থ্য ভবনে যে-রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তাতে কিন্তু স্বস্তিতে নেই স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy