গ্রাম থেকে শহর, কৃষি থেকে শিল্প পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই তার ছায়া পড়েছে গাঢ় হয়ে। নোট বাতিলের ধাক্কা এ বার লাগল বনসৃজন প্রকল্পেও!
বনকর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে রাজ্যে ফি-বছর বনসৃজনের কাজ শুরু হয় জুলাই-অগস্টে। তার জন্য নভেম্বর থেকে চারা তৈরি করতে হয়। কিন্তু এ বার পাঁচশো আর হাজার টাকার পুরনো নোট বাতিলের জেরে ব্যাঙ্ক থেকে নগদ টাকা মিলছে না। অন্য প্রায় সব ক্ষেত্রের মতো তার প্রভাব পড়ছে চারা তৈরিতেও। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল প্রদীপ শুক্ল বলেন, ‘‘সমস্যা তো একটা হচ্ছেই। নবান্নকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ সরকারি বনসৃজন প্রকল্পে চারা তৈরির জন্য নগদটুকুও যে মিলছে না, নবান্নের তরফে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে ইতিমধ্যে তা জানানো হয়েছে।
প্রতি বছর রাজ্যে আট থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে গাছ লাগানো হয় বলে বন দফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে। ওই দফতরের এক শীর্ষ কর্তার আশঙ্কা, ঠিক সময়ে গাছের চারা তৈরি করতে না-পারলে গোটা প্রকল্পই ধাক্কা খেতে পারে। ‘‘আমাদের রাজ্যে এমনিতেই বনাঞ্চলের পরিমাণ কম। তাই প্রতি বছর নিয়ম করে বনসৃজনের কাজ চালাতে হয়। প্রতি বছরই এর জন্য লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করি আমরা। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না-পারলে পরিবেশেরই ক্ষতি হবে,’’ ওই বনকর্তার গলায় উদ্বেগ স্পষ্ট।
নগদ টাকার অভাবে চারা তৈরির কাজে বিঘ্ন ঘটছে কী ভাবে?
বনকর্তাদের ব্যাখ্যা, চারা তৈরির কাজ হয় প্রতিটি ফরেস্ট ডিভিশনেই। অরণ্যের লাগোয়া এলাকার গরিব শ্রমিকদেরই এ কাজে নিযুক্ত করা হয়। সপ্তাহান্তে ‘মাস্টার রোল’ অনুযায়ী নগদ টাকায় মজুরি দিতে হয়। গড়ে এক-একটি নার্সারিতে মাসে মজুরি দিতে লাগে দু’লক্ষ টাকা। নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্কে এমনিতেই নগদ টাকা তোলার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাতে সর্বাধিক ৫০ হাজার টাকা তোলা যাচ্ছে। কিন্তু সেই টাকাও সব জায়গায় মিলছে না।
রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার এক ডিএফও-র কথায়, ‘‘আমাদের এখানে তো ব্যাঙ্কে নগদের জোগান কম। ৫০ হাজার টাকা চাইলে ২০ হাজার মিলছে! সেই টাকায় ক’জনকে মজুরি দেব?’’
এক পদস্থ বনকর্তা জানান, বনবস্তি এলাকার গরিব বাসিন্দারা ওই সাপ্তাহিক মজুরির উপরেই নির্ভর করে থাকেন। মজুরি না-পেলে তাঁরা কেউ কাজ করতেই আসবেন না। উপরন্তু মজুরি বাকি পড়লে গোলমাল বাধতে পারে। ওই বনকর্তা জানান, ইতিমধ্যেই কিছু এলাকায় মজুরি নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেক মজুরই কাজ করতে চাইছেন না। এই ধরনের কাজের সঙ্গে তো কালো টাকার কোনও সম্পর্ক নেই। তা হলে বিশেষ কারণ দেখিয়ে নিয়ম শিথিল করা হবে না কেন, প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেক বনকর্তা।
নগদের অভাবে সরকারি কাজ চালানোটাও যে ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের বনসচিব চন্দন সিংহ। তিনি বলছেন, ‘‘নগদের অভাব সত্যিই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কী ভাবে এটার সমাধান করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy