রাজ্য পুলিশ আসিফ খানকে গ্রেফতার করায় কি সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত ধাক্কা খাবে? কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা অবশ্য স্পষ্টই বলছেন, তেমন কোনও আশঙ্কা নেই।
তদন্তকারীরা জানান, আসিফকে জেরা করে সারদাকাণ্ডে যুক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে বহু তথ্য মিলেছে। সেই সব তথ্য খতিয়ে দেখাও হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সত্যতার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। তাই আসিফকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করলেও সারদা তদন্তে তার কোনও প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা আসিফের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরাও আদালতের মাধ্যমে আসিফকে হেফাজতে নিতে পারব। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে আমাদের তদন্তে আসিফের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণ মিললে তা যাচাই করে দেখা হবে। ”
সারদা তদন্তে রাঘব বোয়ালদের খোঁজার কাজে সিবিআইয়ের অন্যতম সাহায্যকারী ছিলেন এই আসিফ। এক সময়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়ের ছায়াসঙ্গী আসিফ নিজেও ছিলেন তৃণমূলের উত্তরপ্রদেশের পর্যবেক্ষক। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, জাভেদ খান থেকে শুরু করে তৃণমূলের তাবড় নেতার সঙ্গে নিত্য ওঠাবসা ছিল তাঁর। এ হেন আসিফ সিবিআইকে নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল তৃণমূলের একটি বড় অংশের। কার হাঁড়ির খবর তদন্তকারীদের কাছে ফাঁস করছেন আসিফ, তা নিয়ে তৃণমূল মহলে জল্পনা ছিল তুঙ্গে।
তিনি যে তৃণমূলের অনেকের খবরই সিবিআইয়ের কাছে জানিয়ে দিচ্ছেন, তা আসিফ নিজেও প্রকাশ্যে বলেছিলেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি খোলাখুলিই অভিযোগ এনেছিলেন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার ‘অপরাধে’-ই পুলিশ তাঁকে ‘মিথ্যা মামলায়’ জড়াচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন আসিফ। দলত্যাগী এই তৃণমূল নেতার অভিযোগ ছিল, সিবিআইয়ের কাছে তাঁর মুখ খোলা ঠেকাতে থানায় ডেকে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বিধাননগরের পুলিশ কর্তারা। পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে পুলিশের একাংশেরই বক্তব্য, আসিফকে ধরতে ভাবে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে পুলিশ, তা অন্য কোনও প্রতারণার মামলা তো দূরে থাকুক, এর চেয়ে গুরুতর মামলার ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। আর তাতেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে যে প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেই আসিফকে বোধ হয় কারাবন্দি দেখতে চান প্রভাবশালীদের একাংশ। তাতে সিবিআইকে তথ্য জোগানোয় ভাটা পড়বে।
তবে প্রভাবশালীদের এই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আসিফের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য সাক্ষ্য-আইন অনুযায়ী নথিভুক্ত করা হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ভিডিওগ্রাফিও করছেন তদন্তকারীরা। তা সঠিক সময়েই আদালতে পেশ করা হবে। সুতরাং আসিফের গ্রেফতারের ফলে সারদা তদন্ত ধাক্কা খাবে বলে যাঁরা আশা করছেন, তাঁরা ভুল এমনটাই দাবি সিবিআইয়ের। তাঁদের কথায়, রাজ্য পুলিশ যে সব মামলার কথা বলছে, তাতে বেশি দিন আসিফকে আটকে রাখা সম্ভব নয়। এর মধ্যেই হাইকোর্টে অন্য একটি প্রতারণার মামলায় আসিফের আগাম জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে সরকার পক্ষ কার্যত কোনও নথিই দেখাতে পারেনি।