Advertisement
E-Paper

কয়লা পাচারে তুরুপের তাস ১০ টাকার নোট

তদন্তকারীরা জানান, তল্লাশিতে পাওয়া নথির মধ্যে ছিল একটি বেসরকারি পণ্য পরিবহণ সংস্থার ‘রুট-চালান রসিদ’।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০৯
সেই চালান রসিদ। নিজস্ব চিত্র

সেই চালান রসিদ। নিজস্ব চিত্র

এক জন একটি একশো টাকার নোটের আধখানা অন্য ব্যক্তিকে দেখাল। দ্বিতীয় জন নিজের পকেট থেকে নোটের অন্য অর্ধাংশ বার করে তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে আগন্তুকের হাতে তুলে দিল একটি প্যাকেট বা সুটকেস। বলিউডের বিভিন্ন ছবিতে এ ভাবে হিরের মতো দামি জিনিস হাতবদল হতে দেখা যায়। কয়লাও যে একই ভাবে পাচার হয়, অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার রানিগঞ্জ, আসানসোল, অণ্ডাল, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ডে বিভিন্ন অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছে আয়কর দফতর ও সিবিআই।

তদন্তকারীরা জানান, তল্লাশিতে পাওয়া নথির মধ্যে ছিল একটি বেসরকারি পণ্য পরিবহণ সংস্থার ‘রুট-চালান রসিদ’। সেই রসিদের মাঝখানে আঠা দিয়ে বসানো ছিল একটি ঝকঝকে ১০ টাকার নোট। বেশ কয়েক জন কয়লা ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, ওই রুট-চালানের মধ্যে রাখা ১০ টাকার নোটটিই কয়লা পাচারের তুরুপের তাস। ওই নোটের নম্বরটি সাঙ্কেতিক চিহ্ন হিসেবে কয়লা পাচারে ব্যবহার করা হয়। কয়লা বোঝাই লরির চালকের কাছে ওই রুট-চালান রাখা থাকত। রাস্তায় পুলিশ গাড়ি আটকালে লরিচালক সেটি দেখাতেন। ওই চালানের দাম এক লক্ষ ১১ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লরি-পিছু ওই টাকা আদায় করত লালার সিন্ডিকেট। অগ্রিম সেই টাকা লালার সিন্ডিকেট অফিসে জমা দিলে ওই চালান পেতেন ব্যবসায়ীরা। রাস্তায় পুলিশ বা সিআইএসএফ সেই চালান দেখলেই কয়লার লরিকে ছাড়পত্র দিত। রানিগঞ্জ-আসানসোল এলাকা থেকে কয়লা তুলে ওই চালানের জোরেই লরি ছুটত ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ওয়েট ভাটায়।

সিবিআই জেনেছে, রোজ গড়ে দু'হাজার লরিতে কয়লা বোঝাই হত। ইসিএল-কর্তা, রাজ্য পুলিশ ও শাসক দলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসাজশে কয়লা পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল লালা। সেই সিন্ডিকেট এমনই পোক্ত যে, ২০১৩ থেকে লালা ছাড়া আর কেউ কয়লা পাচারে দখলদারি চালাতে পারেনি। লালার সিন্ডিকেটের টাকা আনুপাতিক হারে পুলিশ, সিআইএসএফ, শাসক দলের প্রভাবশালী, ইসিএল-কর্তাদের কাছে পৌঁছে যেত। সিন্ডিকেট কয়লা পাচার বাবদ বাজার থেকে গড়ে রোজ কুড়ি কোটি টাকা তুলত।

আরও পড়ুন: বন্‌ধে হাজিরা: নেই সরকারি নির্দেশিকা

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, লালার বিভিন্ন অফিসে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া নথিতে ‘অশোকজি’ নামে এক পুলিশ অফিসার এবং ‘মিশ্রজি’ নামে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে। লালার সিন্ডিকেট থেকে নানা ভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা গিয়েছিল অশোকজি ও মিশ্রজির কাছে। ওই দু’জনের মাধ্যমেই কয়লা পাচারের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল লালা। অশোকজি ও মিশ্রজি এমনই প্রভাবশালী যে, লালার সিন্ডিকেটের এলাকায় পুলিশের বদলির বিষয়টি তাঁরাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। লালার পাশাপাশি মিশ্রজিও ফেরার।

এক সিবিআই-কর্তা জানান, অশোকজি ও মিশ্রজিকে শনাক্ত করা গিয়েছে। লালার বাড়ি-অফিসে পাওয়া নথি যৌথ ভাবে পরীক্ষা করেছে আয়কর দফতর ও সিবিআই। যে-সব ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের টাকা পাচার করা হত, সেগুলি খতিয়ে দেখে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। লালা-ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচার চক্রে যুক্ত ইসিএল-কর্তা, পুলিশ অফিসার এবং শাসক দলের প্রভাবশালীদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুলিশকর্তা ও প্রভাবশালীদের তলব করা হতে পারে। সিবিআইয়ের কলকাতা সদর দফতরে জরুরি ভিত্তিতে হাজির হওয়ার জন্য ফেরার লালাকর উদ্দেশে নোটিস দেওয়া হয়েছে। লালাকে পেলে তাকে এক প্রস্ত জেরার পরে অশোকজি, মিশ্রজি-সহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তলব করে শুরু হবে জিজ্ঞাসাবাদ। প্রয়োজনে পুলিশকর্তা ও প্রভাবশালীদের জেরা করার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

Scam Coal Smuggling CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy