Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুদীপ্ত-কুণাল-দেবযানীকে একত্রে জেরা চায় সিবিআই

বস্তা বস্তা টাকা তাঁদের হাত দিয়ে নানা জায়গায় পৌঁছত বলে অভিযোগ। কিন্তু সে সব টাকার হদিস নেই। সিবিআই তাই চাইছিল, সুদীপ্ত-দেবযানীর দুই পলাতক গাড়িচালককে জেরা করতে। অবশেষে রবিবার রাতে তাদের খোঁজ মেলে। দফায় দফায় তাদের জেরাও করে সিবিআই। এ বার সুদীপ্ত, দেবযানী এবং কুণাল ঘোষকে একত্রে জেরা করতে চান তদন্তকারীরা।

আলিপুর আদালতে কুণাল ঘোষ। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

আলিপুর আদালতে কুণাল ঘোষ। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:০৪
Share: Save:

বস্তা বস্তা টাকা তাঁদের হাত দিয়ে নানা জায়গায় পৌঁছত বলে অভিযোগ। কিন্তু সে সব টাকার হদিস নেই। সিবিআই তাই চাইছিল, সুদীপ্ত-দেবযানীর দুই পলাতক গাড়িচালককে জেরা করতে। অবশেষে রবিবার রাতে তাদের খোঁজ মেলে। দফায় দফায় তাদের জেরাও করে সিবিআই। এ বার সুদীপ্ত, দেবযানী এবং কুণাল ঘোষকে একত্রে জেরা করতে চান তদন্তকারীরা।

প্রাথমিক ভাবে দুই গাড়িচালক ও অন্য কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই জেনেছে, মাঝেমধ্যে সারদার বিভিন্ন জেলা অফিস থেকে আসা নগদ টাকা বস্তা করে দেবযানীর বাড়িতে জমা করা হতো। এ ভাবে কয়েক কোটি টাকা তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা কোথায় গেল? সুদীপ্তর কাছে সদুত্তর মেলেনি। দেবযানীও ওই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। সিবিআই সূত্রের খবর চালকেরা জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কয়েক জন ব্যক্তিকেও প্রতি মাসে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা পৌঁছে দিতেন ওঁরা। কিন্তু কোন খাত থেকে ওই টাকা দেওয়া হতো, তা নিয়ে সুদীপ্ত এবং দেবযানীর বয়ানে অমিল রয়েছে। এই ধরনের অসঙ্গতির কিনারা করতেই সিবিআই এ বার সুদীপ্ত-দেবযানী-কুণালকে একসঙ্গে জেরায় বসাতে চাইছে।

মিডিয়া ব্যবসায় লোকসানের কারণ খুঁজতে সুদীপ্ত ও কুণালকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে। মুখোমুখি বসিয়ে জেরার সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সুদীপ্ত ও কুণাল সহমত হন বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তাঁরা স্বীকার করেছেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্দেশেই সারদার সংবাদমাধ্যম খবর প্রচার করত। সেই দায়িত্বটি সামলাতেন কুণাল। সুদীপ্ত কার্যত স্বীকার করেন যে, ২০১২-র গোড়া থেকে ব্যবসার রাশ তাঁর হাত ছাড়িয়ে মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হাতে চলে যায়। তাঁদের নাম সিবিআই-কে তিনি জানিয়েও দিয়েছেন বলে সূত্রটি দাবি করেছেন। পরে ওই ব্যক্তিদের আর্থিক চাহিদা মেটাতে গিয়েই তাঁর ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে বলে সিবিআইয়ের জেরায় জানান সারদা কর্তা। তদন্তকারীদের দাবি, স্রেফ সংবাদ প্রচারে হস্তক্ষেপ নয়, প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ভাবেও সারদার থেকে টাকা নিয়েছেন। সেই বিষয়ে কুণালই মূল যোগসূত্র ছিলেন বলে সুদীপ্ত দাবি করেছেন।

সারদা কর্তার আরও দাবি, ওই দু’টি সংবাদপত্রের পরিচালনার বিষয়ে কুণালের পাশাপাশি তৃণমূলের আরও এক সাংসদ যুক্ত ছিলেন। সারদা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও ওই দু’টি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন ও বিক্রি থেকে পাওয়া ৮৪ লক্ষ টাকা জমা ছিল। অথচ ওই টাকার হদিস পাননি। এ বার ওই সাংসদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সিবিআই।

এমনিতে মিডিয়া ব্যবসায় কার কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে সুদীপ্ত এবং কুণালের বয়ানে অনেক অমিল রয়েছে। কুণাল বলে এসেছেন, মিডিয়ার দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখভাল করা ছাড়া তিনি আর কিছু করতেন না। সিবিআই-এর এফআইআর কিন্তু বলছে, কুণাল বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। সুদীপ্ত আবার সিবিআই-এর কাছে দাবি করছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপেই তাঁর মিডিয়া-ব্যবসায় আসা। দু’টি সংবাদপত্রের কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে বেতন এবং সংবাদ সম্প্রচারের নীতি সব কুণালই দেখভাল করতেন। কুণালের অনুরোধেই তিনি ওই দু’টি সংবাদপত্রে ১২ থেকে ১৮ কোটি টাকা লগ্নি করেন। সেই সঙ্গে তাদের অফিসে ৮২টি কম্পিউটার, ২টি ল্যাপটপও দেন।

এ দিন আলিপুর আদালতে সিবিআই সুদীপ্ত-দেবযানী-কুণালকে সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হারাধন মুখোপাধ্যায় সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। ওই মামলার অন্য তিন অভিযুক্ত মনোজ নাগেল, অরবিন্দ সিংহ চৌহান এবং সোমনাথ বিচারক ৭ জুলাই পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে সিবিআই আর্জি জানায়, মনোজ, অরবিন্দ ও সোমনাথকে আর জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন নেই।

সিবিআই হেফাজতে থাকতে তাঁর কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, এ দিন সুদীপ্তের তা জানতে চেয়েছিলেন বিচারক। সুদীপ্ত জানান, তাঁর অসুবিধা হচ্ছে না। তবে একই সঙ্গে তিনি বিচারককে জানান, রাতে জেরা শেষেও তিনি সিবিআইয়ের অফিসেই থাকতে চান। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার আইনজীবী মারফত জানান, অভিযুক্তকে রাতে রাখার মতো পরিকাঠামো সিবিআই-এর নেই।

এ দিন নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও সুদীপ্ত সেনের ছেলে শুভজিৎ ইডি-র দফতরে হাজির হননি। তাঁর আইনজীবী দীপান্বিতা রায় ইডি-র আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে জানান, তাঁর মক্কেল খুবই অসুস্থ। রবিবার রাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE